এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এটি এযাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড প্রবৃদ্ধি, যা বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৪ শতাংশকেও ছাড়িয়ে গেছে। গত অর্থবছর চূড়ান্ত হিসেবে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। এদিকে চলতি অর্থবছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে ১ হাজার ৭৫২ মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে। গত অর্থবছরে ছিল ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার। এক্ষেত্রে আয় বাড়ছে ১৪২ ডলার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রাথমিক এ তথ্য প্রকাশ করেছে। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনাকে বিষয়টি অবহিত করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রবৃদ্ধি অর্জনের এ সাফল্যে তিনি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিক ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘দেশে বিনিয়োগ বেড়েছে। বেড়েছে রেমিটেন্স এবং রাজস্ব আয়। পরিকল্পিত অর্থনীতির কারণে দেশের আর্থিক খাতে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী একনেকে বলেছেন, এ অর্জন সবার। এদেশের কৃষক, শ্রমিক, জনতা সবার হাত ধরেই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।’ তবে প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘কৃষি খাত ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়ে তেমন কোনো প্রশ্ন নেই। তবে শিল্প খাতের মধ্যে ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে যে প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে বাস্তবতার সঙ্গে এর হিসাব মেলানো কঠিন। কেননা বেসরকারি বিনিয়োগ ওইভাবে বাড়েনি। রফতানি, বিদ্যুৎ উৎপাদন কিংবা আমদানিও বাড়েনি। তাছাড়া মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির যে অবস্থা এগুলোসহ ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে যেসব সূচক রয়েছে সেগুলোর অবস্থা প্রবৃদ্ধির সঙ্গে মেলানো যায় না। তবে কনস্ট্রাকশন ও হাউজিংয়ের হিসাব নিয়ে তেমন প্রশ্ন নেই। কেননা সরকারি বিনিয়োগে মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন বেড়েছে। ফলে কনস্ট্রাকশনের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। রেমিটেন্সের অবস্থা ভালো হওয়ায় হাউজিং খাতেও প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।’

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে জিডিপির আকার টাকার অঙ্কে ২২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছর জিডিপির আকার ছিল ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। আর স্থিরমূল্যে জিডিপির আকার হবে ১০ লাখ ২০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। গত অর্থবছর স্থিরমূল্যে জিডিপি ছিল ৯ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৭ কোটি ৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে এক বছরে জিডিপির আকার বেড়েছে ৭২ হাজার ৫৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

মূলত শিল্প খাতের হাত ধরে এবার জিডিপির আকার বাড়ছে বলে দাবি করেছে বিবিএস। বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। গত অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। শিল্পে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে এর মধ্যে উৎপাদন উপখাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। গত অর্থবছর উৎপাদন উপখাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ। জিডিপিতে শিল্পের অবদান ৩২ দশমিক ৪২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৩ দশমিক ৭১ শতাংশে উন্নীত হচ্ছে। এছাড়া এবার কৃষি খাতে ৩ দশমিক ০৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। গত অর্থবছর এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এর মধ্যে ফসল ও উদ্যান খাতে প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২ দশমিক ০১ শতাংশে। প্রবৃদ্ধি বাড়লেও জিডিপিতে কমছে কৃষির অবদান। সেবা খাতে এবার ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে জানিয়েছে বিবিএস। গত অর্থবছর এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ। গত চার অর্থবছরের মধ্যে এবারই প্রথম সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে. মুজেরি বলেন, ‘এ অর্জন নিঃসন্দেহে অনেক ভালো। ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। কিন্তু চূড়ান্ত হিসেবে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কেননা নির্বাচনী বছরে রাজনৈতিক অস্থিরতা তো থাকবেই। সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।’

বিবিএস জানিয়েছে, সরকারি বিনিয়োগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে না বেসরকারি বিনিয়োগ। এবার ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ জিডিপির ২৩ দশমিক ২৫ শতাংশে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগের অর্থবছর এর হার ছিল জিডিপির ২৩ দশমিক ১০ শতাংশ। ব্যক্তি বিনিয়োগের হার এক বছরে মাত্র শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বিনিয়োগ বিনিয়োগই। সেটি সরকারি বা বেসরকারি বড় কথা নয়। তবে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়লে সেটি টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য সহায়ক হবে।’ তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও অবকাঠামোর ক্ষেত্রে যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তাতে বেসরকারি বিনিয়োগ আরও বাড়বে।’

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version