এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় সরকারি দলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার কথা কূটনীতিকদের জানিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তাদের সঙ্গে বৈঠক করে দলটি। এ সময় কূটনীতিকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতারা বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখান। তাদেরকে জানান, আন্দোলনরত এসব ক্ষুদে শিক্ষার্থীর ওপর হেলমেট ও মুখোশ পড়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে তাদেরকে রক্তাক্ত করেছে। সংবাদকর্মীদের ওপরও হামলা চালিয়েছে তারা।

বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এ বৈঠক হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কুয়েত, স্পেন ও পাকিস্তানসহ ১৮ দেশের কূটনীতিক ছাড়াও জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, এ জে মোহাম্মদ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফাহমিদা মুন্নি, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার মীর হেলাল, তাবিথ আউয়াল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাবে না- বৈঠকে দলের এ অবস্থান আবারও পরিষ্কার করেন নেতারা। তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনকালে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, বর্তমান সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার আর সেনাবাহিনী মোতায়েন ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। বৈঠকে বিএনপি নেতারা দেশের চলমান রাজনৈতিক অবস্থা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের গাড়িবহরে হামলা, খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়েও কূনীতিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তিন পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়ম, ভোট কারচুপি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষপাত এবং নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা তুলে ধরেন তিনি। এ সময়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনও কূটনীতিকদের সামনে উপস্থাপন করা হয়। এ ছাড়া দলের পক্ষ থেকে এসব সিটি নির্বাচনের বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ সিডি আকারে তাদের দেয়া হয়।

মহাসচিবের বক্তব্যের পর কূটনীতিকরা আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে মির্জা ফখরুল তাদের জানান, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। তিনি আইনের শাসন থেকে বঞ্চিত। এ অবস্থায় নির্বাচনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকলে তারা কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া, বর্তমান সংসদকে বহাল রেখে আর সেনাবাহিনী মোতায়েন ছাড়া দলের তৃণমূল নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে বলে জানান।

সূত্র জানায়, কূটনীতিকরা খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থান (মামলা ও শারীরিক অবস্থা) সম্পর্কে জানতে চান। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী খালেদা জিয়ার মামলা ও তার জামিন নিয়ে বিস্তারিত উপস্থাপন করেন। তারা জানান, বিচার বিভাগের নিু আদালত সরকারের নির্বাহী ক্ষমতার অধীন হওয়ার কারণে তিনি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জামিনযোগ্য মামলাগুলোয়ও তার জামিন আটকে দেয়া হচ্ছে। একইভাবে উচ্চ আদালতেও সরকার নানাবিধ প্রভাব খাটিয়ে তার জামিন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছে।

বৈঠকে অনেক কূটনীতিক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার প্রসঙ্গটিকেও সামনে নিয়ে আসেন। তারা জানান, বিষয়টি নিয়ে তারা ওয়াকিবহাল হলেও বিএনপির মতামত জানতে চান। জবাবে বিএনপির নেতারা জানান, সরকারি দল ও তাদের নেতাকর্মী অনেক বেশি অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছে। যার কারণে তারা ভিন্নমত ও পথকে সহ্য করতে পারছে না। তারা সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে দিয়েছে। সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে বলে উপস্থিত কূটনীতিকদের জানান দলের এক নেতা। এ ছাড়া ফটোসাংবাদিক শহিদুল ইসলামের আটক ও তাকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের বিষয়টিকেও সামনে নিয়ে আসেন বিএনপির নেতারা।

বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা জানান, নিরাপদ সড়কসহ ৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে যৌক্তিক বলে বর্ণনা করেন বিএনপি নেতারা। একই সঙ্গে শনি ও রোববার রাজধানীর ঝিগাতলা ও ধানমণ্ডি এলাকায় সংঘটিত সংঘর্ষের ভিডিও চিত্র দেখান তাদের। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সঙ্গে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা সম্পৃক্ত এমন তথ্য-প্রমাণাদিও তুলে ধরেন তারা। এর মধ্যে গণমাধ্যমের কর্মী ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের নাম, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা বৈঠকে তুলে ধরা হয়। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও তাদের ওপর হামলার বিষয়ে অবগত বলে কূটনীতিকরা বিএনপি নেতাদের জানিয়েছেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version