এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সুশাসনের অভাবের কারণে ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা জেঁকে বসেছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। উন্নয়নটা সমতাভিত্তিক হচ্ছে না। সমতাভিত্তিক উন্নয়ন না হলে তা টেকসইও হয় না।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে দ্য ঢাকা ফোরাম আয়োজিত ‘উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও সুশাসন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। সালেহউদ্দিন এই সংগঠনের সভাপতি। এ সময় বক্তব্য দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান ও মইনুল হোসেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ, প্রকৌশলী এনামুল হক।

ব্যাংকিং খাত দীর্ঘদিন ধরেই নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন বলেন, এখন এই খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সুশাসনের অভাব। অভ্যন্তরীণভাবে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন বলতে কিছু নেই।

ব্যাংকিং খাতের জন্য যেসব নীতিমালা, আইনকানুন, আন্তর্জাতিক রীতি আছে সেগুলো সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে না। তবে সামগ্রিক অর্থনীতির সূচকগুলোর অর্জন ভালো। দেশে উন্নয়নের বিভিন্ন সূচক বাড়লেও তার সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। দিন দিন ধনী দরিদ্রের ফারাক বাড়ছে। এই অসম উন্নয়ন গ্রহণযোগ্য নয়। প্রবৃদ্ধি ছ’য়ের বৃত্ত থেকে বের হওয়া গেছে। এটি ইতিবাচক। সার্বিক উন্নতি সন্তোষজনক।

দেশের রাজনৈতিক চর্চা জনগণের স্বার্থে হচ্ছে না বলে মন্তব্য করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, উন্নয়নকে গণতন্ত্র থেকে আলাদা করে দেখা ঠিক নয়। উন্নয়ন ও গণতন্ত্র অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। গণতন্ত্র ছাড়াও বিশ্বের কিছু দেশে উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সে উন্নয়ন টেকসই ও সমতা ভিত্তিক নয়। সেখানে শুধু বস্তু নির্ভর প্রবৃদ্ধি ও ভোগবাদের প্রসার হয়েছে। মূল্যবোধ, ব্যক্তি স্বাধীনতা এগুলোর প্রাধান্য দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ ওই পথে চলুক, আমরা সেটা চাই না।
তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক সহনশীলতা ও সুস্থ রাজনৈতিক চর্চার অভাব প্রকট। সবচেয়ে মারাত্মক হলো আইনের শাসনটা নেই। কেউ অন্যায় করলে শাস্তি হয় না। আইন আছে কিন্তু বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। সুশাসন ছাড়া কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সভাপতি হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। এক দলের নেত্রী সারা দেশ ঘুরে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। আর বিরোধী দলের নেতারা তা করতে পারছেন না। তিনি দেশবাসীকে ’৫২, ’৬৯ ও ’৭১ সালের মতো আন্দোলন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বাঙালিরা এক সময় খুবই প্রতিবাদী ছিলাম। সে সময় শুধু আন্দোলন নয়, সশস্ত্র আন্দোলন হয়েছিল। এখন সেই সাহস গেল কোথায়?
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করার বিধান ছিল। এখন আইন করে সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। তারা এখন ইভিএম প্রকল্প হাতে নিয়ে আছে। প্রকল্প পাস হওয়ার আগেই একটি প্রতিষ্ঠানকে ইভিএম কিনতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যারা ইতিমধ্যে এলসিও খুলে ফেলেছে। কাজের অর্ডার পাবার আগেই কিভাবে এলসি খোলা হলো তা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, ইসির উচিত সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা। সবাই যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করা। না হলে তাদের চলে যাওয়া উচিত।

দেশের সর্বত্র এখন বিশৃঙ্খলা চলছে। ব্যাংকে চরম নৈরাজ্য চলছে। সবকিছু রাজনৈতিকভাবে দেখা হচ্ছে। চাকরির জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনে গিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে সে কোন দল করে, কোন দলকে ভোট দেয় ইত্যাদি। উন্নয়নের মহাসড়কে ওঠার দাবি করা হচ্ছে। অথচ সাধারণ মানুষের জীবনমানে কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।
আরেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, নির্বাচন কেন্দ্রিক গণতন্ত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্তরায়। নির্বাচন কেন্দ্রিক গণতন্ত্রকে সব সমস্যার প্রদান কারণ বলে মনে করেন তিনি।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version