এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : তিন রাষ্ট্রনায়ক আজীবন ক্ষমতায় থাকবেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নিজেই আজীবন ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে তার দল আজীবন ক্ষমতায় থাকার রায় দিয়েছে। আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের নেতাদের মাধ্যমে আজীবন ক্ষমতায় থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ভ্লাদিমির পুতিন : রাশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষমতায় আছেন ভ্লাদিমির পুতিন। নতুন করে ৬ বছর মেয়াদে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন তিনি। চতুর্থ মেয়াদ শেষ করতে পারলে ২৪ বছর রাশিয়ার ক্ষমতায় থাকার গৌরব অর্জন করবেন পুতিন, যা হবে সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলের নেতা জোসেফ স্ট্যালিনের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড। তিনি আর কত দিন ক্ষমতায় থাকবেন, আদৌ ক্ষমতা ছাড়বেন কিনা, তা নিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে নানা জল্পনা-কল্পনা আছে। এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সংবিধানিক প্রতিবন্ধকতার কারণে পুতিন তৃতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। রাশিয়ার আইনে একটানা দ্বিতীয় মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ নেই। ২০২৪ সালে চতুর্থ মেয়াদে পুতিনের প্রেসিডেন্সি শেষ হলে তখন তার বয়স হবে ৭২ বছর। সে সময় তিনি অবসরে যেতে পারেন এবং তার যোগ্য উত্তরসূরি খুঁজবেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে ২০২৪ সালের পরও ক্ষমতায় টিকে থাকার একটি পথ রয়েছে। ২০০০ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন পুতিন। এরপর ২০০৪ সালে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হন। টানা দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট না থাকার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ২০০৮ সালে প্রসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। ওইবার নিজের সহচর দিমিত্রি মেদভেদেভকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী করে নিজে তার অধীনে প্রধানমন্ত্রী হন। পরে ২০১২ সালে আবার প্রেসিডেন্ট হন পুতিন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক নিকোলাই পেত্রব বলেন, ‘চতুর্থ দফা মেয়াদ শেষে একই পন্থায় ফের ক্ষমতায় ফিরতে পারেন পুতিন।’ সেসময় তার বয়স হবে ৭৮ বছর। এ বয়সে ক্ষমতায় ফেরার জন্য নির্বাচন করবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক দিমিত্রি ওরেসকিন বলেন, ‘আমি মনে করি ২০২৪ সালের পরও ক্ষমতায় থাকবেন পুতিন। জিনপিংয়ের মতোই জীবদ্দশায় ক্ষমতা ছাড়বেন না তিনি।’ যদিও মার্চে এনবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেছিলেন, ‘আমি কখনোই সংবিধান পরিবর্তন করব না। আজও এ ধরনের চিন্তা আমার মধ্যে নেই।’
শি জিনপিং : চীনের পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের নির্দিষ্ট সময়সীমা বিলুপ্ত করার পক্ষে ভোট দিয়েছে। এতে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আজীবন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। চীনের প্রায় ৩ হাজার প্রতিনিধির সম্মতিতে পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার মেয়াদকাল বিলুপ্ত করে সংবিধানে পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে আইন পাস করে। ভোটাভুটিতে এই উদ্যোগের পক্ষে ভোট দেয় ২ হাজার ৯শ ৫৮ জন। দু’জন বিপক্ষে ভোট দেয় ও তিনজন ভোটদানে বিরত থাকে। খবর বিবিসি ও এএফপির।
যদিও প্রস্তাবের ভোটাভুটি নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন রয়েছে। নব্বই এর দশকে চীনে প্রেসিডেন্টের জন্য দু’মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছিল। অর্থাৎ একজন দু’মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন না। কিন্তু এখন এ বিধান প্রত্যাহার করে নেয়ায় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আজীবন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। ২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর তার বর্তমান মেয়াদ ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার কথা। চীনে কংগ্রেসই সবচেয়ে শক্তিশালী যদিও মনে করা হয় যে এখানে শীর্ষনেতার ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটে। তবে এ নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে অনেক। যদিও রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে একে দরকারি একটি সংস্কার কাজ হিসেবে বলা হচ্ছে।

ইতিহাসবিদ ও রাজনীতির বিশ্লেষক ঝ্যাং লিফানের মতে, শি জিনপিংকে ক্ষমতায় রাখতে সংবিধান সংশোধনের এই উদ্যোগ আগেই অনুমান করা যাচ্ছিল। কিন্তু কত বছর তাকে ক্ষমতায় রাখার কথা চিন্তা করা হচ্ছে- তা নিয়ে পূর্বাভাস দেয়া কঠিন। ‘থিওরি অনুযায়ী তিনি জিম্বাবুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের চাইতেও বেশি সময় রাজত্ব করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ভবিষ্যতে কী হবে তা কেউ বলতে পারে না।’

জিম্বাবুয়েকে ৩৭ বছর শাসন করা মুগাবে গতবছর গণবিক্ষোভ ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের পর দলের চাপে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। চীনের অনেক নাগরিক অনির্দিষ্টকালের জন্য এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা চলে যাওয়ার বিষয়টি পছন্দ করেননি। সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব ওঠার পর দেশটির সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম উইবুতে একজন লেখেন, ‘যদি দুই মেয়াদ যথেষ্ট না হয়, তাহলে তারা তিন মেয়াদের কথা লিখতে পারে। কিন্তু সেখানে অবশ্যই একটা সীমা থাকতে হবে, একেবারে মুক্ত করে দেয়া ভাল হবে না।
শেখ হাসিনা : আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতদিন জীবিত ও কর্মক্ষম আছেন, ততদিন পর্যন্ত তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। গত ২৫ এপ্রিল রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে কাজী বশির মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোনও অপশক্তির ক্ষমতা নেই জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করার।
সরকার ওপর কোন চাপ নেই দাবি করে তিনি বলেন, সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আছে, আগামী নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসবে। এই বাংলাদেশের জনগণ বেগম জিয়া ও তার দুর্নীতিবাজ পুত্রের নেতৃত্বে হত্যা-সন্ত্রাসের রাজনীতি দেখতে চায় না। তাই ২০১৮ সাল নয়। ২০২৪ সালে নয়। ২০২৯ সালের পরে তাদেরকে ক্ষমতায় আসার জন্য ভাবনা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা যতদিন জীবিত আছেন, যতদিন কর্মক্ষম আছেন— ততদিন পর্যন্ত তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে। জননেত্রী শেখ হাসিনাই ততদিন বাংলার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকবেন।

এই বাংলাদেশের কোনও অপশক্তির ক্ষমতা নেই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করার।’ অশুভ শক্তি বিদেশি মদত নিয়ে আবারও অশুভ তৎপরতা করার চক্রান্ত করতে পারে। এজন্য দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে এদের ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করার আহ্বান জানান হানিফ।

ছাত্রলীগের নেতাদের উদ্দেশে হানিফ বলেন, যে আদর্শ নিয়ে, যে চেতনা নিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি; যে আদর্শ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নিজের জীবন দিয়েছেন— আজকে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতি পদে পদে আমাদের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। কারণ, আমাদের প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী শক্তিরা বসে আছে।

 

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version