এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : নেতাকর্মীদের নামে নতুন করে মামলা ও গ্রেফতার এড়ানো নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা নানা হিসাব কষছেন। সরকারের কঠোর মনোভাবে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে তৈরি হয়েছে গ্রেফতার আতঙ্ক।

বিশেষ করে বৈঠক চলাকালে সেখান থেকে একসঙ্গে নেতাকর্মীদের আটকের বিষয়টিতে চিন্তিত দলটির নীতিনির্ধারকরা। তারা মনে করছেন, সরকার একটি লক্ষ্য নিয়ে ফের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও তাদের নামে নামে মামলা দেয়া শুরু করেছে।

নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে ঈদের পর বিএনপি রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে- এমন একটা বার্তা সরকার পেয়েছে। তাই নির্বাচনের প্রস্তুতি ও নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে বিএনপি রাজপথে নামার আগেই নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি করতে চাচ্ছে তারা। এটা বিএনপিকে চাপে রাখার এক প্রকার কৌশল।

ঈদের পরে সরকার আরও কঠোর হতে পারে- দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে এমন আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

সূত্র জানায়, সরকারের এমন কৌশল মোকাবেলায় করণীয় নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। সম্প্রতি সিনিয়র নেতাদের কয়েক দফা বৈঠকে নেতাকর্মীদের নামে নতুন করে মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়টি আলোচনায় আসে। গ্রেফতার এড়াতে সক্রিয় নেতাদের সতর্কভাবে চলাফেরার নির্দেশ দেয়া হয়।

সূত্র জানায়, নতুন করে মামলা ও গ্রেফতারে নেতাকর্মীদের বাইরে তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। সম্প্রতি বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান কয়েকজন নেতাকে নিয়ে তার বাসায় আড্ডা দিচ্ছিলেন।

এক ফাঁকে ওই নেতা উপস্থিত সবাইকে বলেন, ‘চলো এবার ঈদের পর আমাদের গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যাই।’ সেই আড্ডায় উপস্থিত ওই নেতার স্ত্রী এ সময় বলে ওঠেন, ‘দেখো ঈদের পর গ্রামের বাড়ির বদলে অন্য বাড়ি (কারাগার) যেতে হয় কিনা।’ শুধু ওই নেতা নয়, বিএনপির অনেক নেতা ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এখন এমন আলোচনা হচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে এসব শুরু করেছে।

রাজপথে কোনো কর্মসূচি না থাকলেও দেশব্যাপী প্রতিদিনই বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, নতুন নতুন মামলা করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে এখন নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। দলীয় কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে কোথাও বৈঠক করা হলে সেখানেই হানা দিয়ে তাদের আটক করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

তিনি বলেন, সরকারের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে তারা আবারও একতরফা একটি নির্বাচন করার পাঁয়তারা শুরু করেছে। নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে যাতে আমরা রাজপথে নামতে না পারি সেজন্য আগাম আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু এসব মামলা-গ্রেফতার করে শেষ রক্ষা পাবে না।

সূত্র জানায়, অতীতে আন্দোলন বা কোনো ইস্যুতে রাজপথে সক্রিয় থাকাকালেই নেতাকর্মীদের নামে মামলা ও গ্রেফতার করা হতো। কিন্তু সম্প্রতি বিএনপি কোনো আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় নেই।

তারপরও নেতাকর্মীদের নামে নতুন মামলা ও তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে কোথাও বৈঠক চলাকালেই হাজির হচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

নাশকতার প্রস্তুতি চলছিল এমন অভিযোগে তাদের আটক করা হচ্ছে। কারও নামে নতুন মামলা দেয়া হচ্ছে, আবার কাউকে পুরনো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। সম্প্রতি এ রকম বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। দলের করণীয় নিয়ে একসঙ্গে বসতে নেতারাও ভয় পাচ্ছেন।

সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খুলনা ও গাজীপুরে নেতাকর্মীরা এখন বেশ সক্রিয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্রেফতার আতঙ্ক। দুই সিটিতে এখন পর্যন্ত শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে দলটি দাবি করেছে।

জানা গেছে, ২৯ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে এক নেতার অফিসে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে কর্মসূচির প্রস্তুতি, গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় পক্ষে গণসংযোগের কৌশল ঠিক করতে তারা এ বৈঠকে বসেন। কিন্তু বৈঠক শুরুর কিছুক্ষণ পরই পুলিশ তাদের ঘিরে ফেলে এবং উপস্থিত সবাইকে আটক করে। আটকদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, সিনিয়র সহসভাপতি শামসুল হুদা, সহসভাপতি ইউনুছ মৃধা, যুগ্ম সম্পাদক কেএম জোবায়ের, আলমগীর হোসেন, আ ন ম সাইফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রাসেল প্রমুখ। পরে তাদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।

এছাড়া রাজধানীর বাইরে কয়েকটি জেলা থেকে বৈঠক চলাকালে একাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এমন ‘কথিত’ অভিযোগের দোহাই দিয়ে তাদের আটক করা হচ্ছে। বিষয়টিকে আটকের নতুন কৌশল বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।

সম্প্রতি গাজীপুরের টঙ্গীতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের বাসা থেকে বের হওয়ার পর আটক করা হয় কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানকে। তবে কয়েক ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

ওই সময় কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা হাসান সরকারের বাড়ির ভেতরে ছিলেন। তাদের আটক করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরো বাড়ি ঘেরাও করে রাখে।

তবে শেষ পর্যন্ত তাদের আটক করা হয়নি। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপি নেতাদের নামে মামলা করেন। গাড়ি ভাংচুর ও নাশকতা এবং জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে এ মামলা করা হয়।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যুগান্তরকে বলেন, সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপির সক্রিয় নেতাদের টার্গেট করে নতুন নতুন মামলা দিচ্ছে। নেতাকর্মীদের মাঝে ভীতি সৃষ্টির লক্ষ্যে এসব করছে।

জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা আবারও দেশে একটি একদলীয় নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে। তিনি বলেন, মামলা-হামলা করে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করা যাবে না। জনগণ এবার তাদের ভোটাধিকার রক্ষায় কোনো ছাড় দেবে না।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version