এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার চুক্তি কার্যকরে মিয়ানমারকে বাধ্য করার জন্য আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিল মানবিক কারণে। কিন্তু মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে হবে। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের রিজিওনাল হাবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) প্রেসিডেন্ট ড. বান্দার এম এইচ হাজ্জর, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে একটি মানবিক সংকট মোকাবিলা করছে। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়ে তাদের প্রবেশ করতে দিয়েছে। নিজস্ব সম্পদ, বাস্তুসংস্থান ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে জানা সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অনুপ্রবেশ করতে দিয়েছে। এখন আমরা তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চাই।

মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে সুনির্দিষ্ট কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করার জন্য আইডিবিকে আমি সুদৃঢ়ভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগ করার জন্য ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের সভাপতির প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব প্রশমন এবং অভিযোজনের জন্য ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কর্মকৌশল ও কর্মপরিকল্পনার আওতায় বেশকিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

নিজস্ব অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন খাতে বিনিয়োগের চাহিদা, বর্তমান অবস্থা ও ঘাটতি পর্যালোচনা করতে বাংলাদেশ একটি কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (২০১৬-২০২১) তৈরি করেছে। যা বাস্তবায়নে মোট ১১.৭ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।

আইডিবি’র কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে এ পর্যন্ত ৪.৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। অর্থাৎ আরো সাত বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি পূরণে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।

ঢাকায় এই রিজিওনাল হাব চালু করায় আইডিবিকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি সদর দপ্তর থেকে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণের অংশ। এর ফলে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ ও আইডিবির অন্যান্য আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম আরো দক্ষ, উন্নত ও গতিশীল হবে।

অন্যতম উন্নয়ন-সহযোগী আইডিবি’র কাছ থেকে গত চার দশকে বাংলাদেশের ২২ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার বিষয়টি স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকায় নতুন অফিস স্থাপন বাংলাদেশের সঙ্গে আইডিবি’র সম্পর্ক সুসংহত এবং অংশীদারিত্ব সুদৃঢ় করার একটি ধাপ বলেই আমি মনে করি।

শেষে ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক রিজার্ভ হাবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।

৪ হাজার কোটি টাকার ফান্ড গঠন: এদিকে চার হাজার কোটি টাকার (৫০ কোটি ডলার) উদ্ভাবনী ফান্ড গঠন করেছে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)। এই ফান্ডের অর্থ দিয়ে আইডিবি’র সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মেধাবীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবক খাতে খরচ করা হবে। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁও আইডিবি’র কার্যালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইডিবি’র প্রেসিডেন্ট বান্দার এমএইচ হাজ্জার বিষয়টি সাংবাদিকদের অবহিত করেছেন। এ সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আইডিবি প্রেসিডেন্টের সিনিয়র উপদেষ্টা ড. হায়াত সিন্ধি উপস্থিত ছিলেন।

আইডিবি’র প্রেসিডেন্ট বান্দার এমএইচ হাজ্জার বলেন, আইডিবি’র ৫৭টি সদস্য রাষ্ট্র ৫০ কোটি ডলারের তহবিল থেকে অর্থ নিয়ে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবক তৈরিতে ব্যয় করতে পারবে। এই তহবিলটির নাম হবে ট্রান্সফরমারস ফান্ড। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছে তারা এই তহবিল থেকে ফান্ড নিয়ে নিজেদের মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগাতে পারবে। এই আঞ্চলিক অফিস থেকে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, চীনসহ মোট ১৯টি দেশের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কম সুদে ঋণ নেয়ার সময় অনেক কমে গেছে। তিনি বলেন, আউডিবি’র সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্য থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি সহায়তা পেয়ে থাকে। ফলে আমরা আইডিবি’র সহায়তা পেয়ে সন্তুষ্ট।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version