এশিয়ান বাংলা, যশোর : যশোরের শার্শা উপজেলার সামটা গ্রামের ফারুক হোসেন (৫০) ও আজিজুল হক (৪৫) নামের দুই ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মরদেহ দু’টি গতকাল সকালে যশোরের শার্শার সামটা গ্রামের মেহগনিতলা ও কেশবপুর উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়। শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য পুলিশকে দায়ী করেছেন। নিহত ফারুক ও আজিজুল সামটা গ্রামের মৃত জোহর আলীর ছেলে।

রোববার দুপুরে যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে মরদেহ দুটি শনাক্ত করেন তাদের অপর ভাই সাইদুল ইসলাম। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকালে শার্শা উপজেলার সামটা ধানতারা এলাকার একটি মেহগনিবাগান থেকে আজিজুল হক নামে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে তিনি নিহত হতে পারেন। শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শার্শার বাগআঁচড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আবদুর রহিম হাওলাদার সাংবাদিকদের জানান, আজিজুল একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। সম্ভবত মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে তিনি মারা যেতে পারেন।

নিহত আজিজুলের বিরুদ্ধে শার্শা থানা ও বেনাপোল পোর্ট থানায় মাদক সংক্রান্ত ৭-৮টি মামলা রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

তবে নিহতের ভাই সাইদুল দাবি করেন, তার ভাই আজিজুল মাটি বিক্রির ব্যবসা করতেন। অনেক আগে বোমা বিস্ফোরণে তার দুটি হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

অপরদিকে, একইদিন সকালে যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি-চিংড়া সড়কের ধর্মপুর এলাকা থেকে ফারুক হোসেন নামে অপর এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহতের গলায় একটা দাগ রয়েছে। এটি গুলির দাগ কি না সেটা ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না।

ঘটনাস্থলে থাকা কেশবপুর থানার এসআই ওহিদুজ্জামান জানান, ধর্মপুর থেকে উদ্ধার লাশটির পরিচয় স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ কেউই নিশ্চিত করতে না পারলেও পরে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিহতদের ভাই সাইদুল লাশটি শনাক্ত করেন।

নিহতদের আরেক ভাই শহিদুল ইসলাম জানান, শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে আজিজুল ও তার বড় ভাই ফারুক একসঙ্গে বাড়ি থেকে বাজারের উদ্দেশ্যে বের হন। রাত দশটা পর্যন্ত বাড়িতে না ফেরায় তারা খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। পরে স্থানীয় লোকজন জানায়, পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকধারীরা দুই ভাইকে সামটা বাজারের কাছ থেকে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে গেছে। এই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই ভাইয়ের খোঁজে অন্য দুই ভাই সাইদুল ও শহিদুল শার্শা থানায় যান। কিন্তু শার্শা থানা পুলিশ এই ধরনের কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানান।

পরে বাগআঁচড়া পুলিশ ক্যাম্প ও বেনাপোল পোর্ট থানায়ও খোঁজ খবর নেয়া হয়। কিন্তু দুই ভাইয়ের কোনো খবর না পেয়ে নির্ঘুম রাত কাটে পরিবারের সদস্যদের। রোববার সকালে গ্রামের পাশের একটি মাঠে প্রথমে আজিজুলের এবং পরে কেশবপর উপজেলার চিংড়ি বাজার সংলগ্ন ধর্মপুর গ্রামের মাঠ থেকে ফারুকের লাশ উদ্ধার দেখায় পুলিশ। নিহতের স্বজনদের দাবি পুলিশ পরিকল্পিত ভাবে দুই ভাইকে গুলি করে হত্যার পর লাশ দুটি প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরবর্তী দুই এলাকায় ফেলে রেখে পরে উদ্ধার নাটক সাজিয়েছে। তারা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।

তবে পরিবারের এই দাবি ভিত্তিহীন বলে দাবি করে পুলিশ জানিয়েছে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মাদক সংক্রান্ত বিরোধে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version