এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিরিয়ে আনতে ও দোষীদের বিচারে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে শুক্রবার (বাংলাদেশ সময় ১লা ফেব্রুয়ারি) মামলা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ফিলিপাইনের ম্যানিলাভিত্তিক রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনকে (আরসিবিসি) আসামি করা হয়েছে।
এদিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় নিউ ইয়র্কের আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েলকে নিয়োগ দিয়েছে আরসিবিসি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিএফআইইউর উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথও মোবাইল ফোনে খুদেবার্তা পাঠিয়ে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ মামলায় সম্ভাব্য আসামির তালিকায় আছেন আরসিবিসি ও তাদের কয়েকজন কর্মকর্তা, অর্থ স্থানান্তরকারী কোম্পানি ফিলরেম ও তার কর্মকর্তা, ক্যাসিনো মালিক ও সুবিধাভোগী বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এ মামলায় পূর্ণ সহায়তা দেবে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক (ফেড)। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ফেডের একটি চুক্তিও স্বাক্ষর হবে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ওই অ্যাকাউন্টগুলোর ওপর আরসিবিসি এবং এর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল।

কী ধরনের অপরাধ হচ্ছে জেনেও অ্যাকাউন্ট খোলা, বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থানান্তর এবং পরে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়ার বিষয়গুলো ঘটতে দিয়েছেন।
নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন সাদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বনাম রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন’ মামলাটি নথিভুক্ত হয়েছে ১৯-০০৯৮৩ নম্বরে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে এ মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ল ফার্ম কোজেন ও’কনর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি ছাড়াও চার সদস্যের এই প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ, একই ইউনিটের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রব এবং অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন রয়েছেন।
মামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আরসিবিসির কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের ল ফার্ম কুইন ইমানুয়েলকে ইতিমধ্যে এ মামলা লড়ার দায়িত্ব দিয়েছে তারা। শুক্রবার ম্যানিলা স্টক এক্সচেঞ্জকে বিষয়টি জানানোও হয়েছে।
এ মামলার দায়িত্ব পাওয়া কুইন ইমানুয়েলের আইনজীবী তাই-হেং চেং বলেছেন, এ মামলা যে বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি ছাড়া আর কিছু নয়, সেটা আমরা আদালতে দেখিয়ে দেব। তারা নিজেদের দায় আরসিবিসির ঘাড়ে চাপাতে চায়।
হেং চেং’র দাবি, মামলার ছদ্মবেশে মূলত জনসংযোগ প্রচারণা চালাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি বলেন, আমরা যা শুনেছি তাতে বলা যায় এ মামলা একেবারে ভিত্তিহীন। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি টাকা উদ্ধারের বিষয়কে এতটাই গুরুত্ব দিতো তবে তারা তিন বছর আগেই এ দাবি তুলতো। মামলা করার সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে আগে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বসে থাকতো না। শুধু যে অভিযোগগুলোই মিথ্যা তা নয়। যেহেতু এ মামলার বিবাদীদের কেউ যুক্তরাষ্ট্রের নয়, সেক্ষেত্রে এখানে তাদের মামলা করার অধিকারই নেই।

হেং চেং’র দাবি, বাংলাদেশ ব্যাংক আরসিবিসি ব্যাংকের ঘাড়ে নিজেদের দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, সত্য অনুসন্ধানজনিত পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রুটি, দায়িত্বজনিত ব্যর্থতা ও নিরাপত্তা প্রটোকলে ঘাটতি থাকার কারণে এ ক্ষতি হয়েছে।

২০১৬ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (নিউ ইয়র্ক ফেড) থাকা বাংলাদেশের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং লেনদেনের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফটে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে এই অর্থ ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কার দুটি ব্যাংকে সরানো হয়েছিল। এই অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার আটকানো গেলেও ফিলিপাইনে চলে যায় ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। এর মধ্যে এখনো ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার ফেরত আসেনি। এই অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করা হয়েছে। এজন্য দেশটিতে দুটি ল’ ফার্মকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের ফি নিয়ে একটি চুক্তিও করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, চুরি যাওয়া ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধার করে দিতে পারলে ল’ ফার্ম দুটিকে সেই অর্থের ১০ ভাগ দেয়া হবে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version