স্টাফ  রিপোর্টার : বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের নির্যাতন, তাদের ঘর-বাড়ী পুঁড়িয়ে দেয়া, ক্রসফায়ারের নামে বিচার বহিঃর্ভূত হত্যাকান্ড, গুম ও নিপীড়নের প্রতিবাদে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট স্কয়ারে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক নাগরিক সংগঠন সেইভ বাংলাদেশের উদ্যোগে মঙ্গলবার বেলা ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বাংলাদেশে নিরীহ সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ও তাদের ঘর-বাড়ী পুড়িয়ে দেয়াকে মানবতাবিরোধী বিভৎসতা উল্লেখ করে বলেছেন, রাষ্ট্রীয় মদদে ক্ষমতাসীন সরকারের সন্ত্রাসী বাহিনী নিরীহ হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর যে নিপীড়ন চালাচ্ছে সেটার জন্য একদিন তাদের বিচারের মুখোমুখী হতে হবে। বক্তারা বলেন বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগ প্রকাশ্য হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের বাড়ী-ঘর পুড়াচ্ছে, ভেঙ্গে দিয়ে সহায় সম্পদ লুটপাঠ করছে কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের আটক দূরে থাক, বরং প্রতিটি স্থানে সহযোগিতা করার পাশাপাশি এর দায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর উপর চাপিয়ে দিয়ে চরম হয়রানী করছে। বক্তারা অবিলম্বে সংখ্যালঘু নিযার্তনের জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবী জানান।
বক্তারা ক্রসফায়ারের নামে বিচার বহিঃর্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধের দাবী জানিয়ে বলেন, ঘর থেকে জলজ্যান্ত মানুষ ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে ক্রসফায়ার বলে প্রচার করা হচ্ছে। যারা এর সাথে জড়িত এবং যারা এ জুলুমকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন তাদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখী হতে হবে।
সেইভ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লার পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান। প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামা ইউরোপের আমীর আল্লামা মুফতি শাহ ছদর উদ্দিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসের সদস্য লর্ড কুরবান হোসাইন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এম এ মালেক, বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আজমল মাশুরুর, খেলাফত মজলিস ইউকের আমীর প্রফেসর আব্দুল কাদির সালেহ।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নান, মাওলানা মাসুক আহমদ, মাওলানা আবুল হাসনাত চৌধুরী, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মোঃ ফয়েজ উল্লাহ, আব্দুল কাদের জিলানী,আনোয়ার আলী, সোহেল আহমদ, মাওলানা সাইফুদ্দিন, সাবেক শিবির নেতা মোঃ আব্দুল মুকিত রাজিব, ফেরদৌস হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ধর্মপ্রাণ। বাংলাদেশের কোন সাধারণ জনগণ, ধর্মীয় রাজনৈতিক দল ভিন্ন ধর্মের মানুষকে নির্যাতন দূরে থাক, নূন্যতম অসম্মানজনক কোন কথা বলে না। পাঁচ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগ দেশে যে চরম সন্ত্রাস, নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলো সেটা ঢাকতে অতীতের মতো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ধোঁয়া তুলে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার ঘৃণ্য অপচেষ্ঠা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, যারা হিন্দু-বৌদ্ধ ভাইদের বাড়ীতে হামলা চালায় এরা আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসী। অসংখ্যবার হাতে নাতে ধরা পড়ার পরও আইনের কাছে তারা নিরাপরাধ। তিনি অবিলম্বে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা বন্ধ এবং ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাদের প্রতি যদি এর পরও অবিচার হয়, তবে একদিন এর বিচার হবে।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসের সদস্য লর্ড কুরবান হোসাইন বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। বাংলাদেশে সখালঘূদের উপর যেভাবে অত্যাচার নির্যাতন চালানো হচ্ছে সেটা কোন অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না। এ ধরনের ঘটনার পর রাষ্ট্রীয়ভাবে তদন্তের পরিবর্তে সরকারী দল বিরোধী দলকে দোষারূপ করে দায় এরাতে চাইছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন যদি বলা হয়, তবে এটা কোন অবস্থাতেই চলতে পারে না। তিনি ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখালঘু এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর উপর যেভাবে দমন-নিপীড়ন চলছে সেটার ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া পয়োজন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বলেন, বালাদেশে আইনের শাসনের নামে ক্রসফায়ারে যেভাবে নিরীহ নাগরিকদের হত্যা করা হচ্ছে সেটা ভয়াবহ। প্রতিদিন রাজনৈতিক কর্মীদের ধরে নিয়ে ক্রসফায়ারে দেয়া হচ্ছে। টবি ক্যাডম্যান এ ব্যাপারে বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন থাকবে কি না সন্দেহ রয়েছে। তিনি সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বন্ধে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবী জানিয়ে বলেন, এদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সকলের দায়িত্ব।
প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামা ইউরোপের আমীর আল্লামা মুফতি শাহ ছদর উদ্দিন বলেন, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গেলেই সংখ্যালঘু নির্যাতন, জঙ্গীবাদ এবং তালেবানী রাষ্ট্রে শ্লোগান শোনা যায়। অথচ হিন্দুদের জায়গা জমি দখল, ঘরবাড়ী ভাংচুর, জ্বালানো-পুড়ানোতে সব সময় আওয়ামীলীগের লোকেরাই ধরা খেয়েছে। সম্প্রতি যা ঘটেছে এর সাথেও জড়িত অনেকেই হাতে নাতে ধরা খেয়েছে যারা সরকারী দলের লোক। কিন্তু ক্ষমতার দ্বম্বে আওয়ামীলীগ এর দায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের উপর চালিয়ে দিচ্ছে। তিনি অবিলম্বে ক্রসফায়ারের নামে মানুষ খুন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, না হয় একদিন কঠিন বিচারের মুখোমুখী হতে হবে।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এম এ মালেক বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য নিরীহ হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের উপর নির্যাতন চালিয়ে এর দ্বায় বিএনপি-জামায়াতের উপর চালিয়ে দিচ্ছে। তিনি অবিলম্বে এ নিপীড়ন বন্ধের দাবী জানিয়ে বলেন, যদি ক্রসফায়ারের নামে রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের হত্যাকান্ড বন্ধ না করা হয়, সংখ্যালঘুদের ক্ষতিপূরণ প্রদান না করা হয়, তবে আজ যারা ক্ষমতায় রয়েছেন একদিন তাদের পরিণতি শুভকর হবে না।
খেলাফত মজলিস ইউকের আমীর প্রফেসর আব্দুল কাদির সালেহ বলেন, আওয়ামীলীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং সংখ্যালঘু ট্রামকার্ড ব্যবহার করে দেশের মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। নিরীহ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ঘর-বাড়ী পুড়িয়ে দিয়ে রাজনৈতিক নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে। অবিলম্বে হামলা এবং ক্রসফায়ারের নামে গণহত্যা বন্ধ না হলে সরকারকে কঠিন মূল্য দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ব্যরিস্টার নজরুল ইসলাম সংখ্যালঘুদের উপর আওয়ামীলীগের হামলাকে শতাব্দীর ভয়ানক ঘৃণিত অত্যাচারের নমুনা উল্লেখ করে বলেন, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য আওয়মালীগ নিরীহ হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা করছে। তিনি অবিলম্বে হিন্দু সম্প্রদায়ের হামলার ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবী জানিয়ে বলেন, এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের ঘৃণ্য রাজনৈতিক খেলা বেরিয়ে আসবে। ব্যারিস্টার নজরুল ক্রসফায়ারের নামে রাজনৈতিক হত্যাকান্ড বন্ধের দাবী জানিয়ে বলেন, যারা এমন মানবতাবিরোধী কাজ করছেন তাদের মনে রাখা উচিত একদিন তাদের এজন্য বিচারের মুখোমুখী হতে হবে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version