স্টাফ রিপোর্টার 

লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনে নজির বিহীন হামলা ভাংচুর করেছে যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীরা । হামলাকারীরা ভেতরে প্রবেশ করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি বাইরে এনে ভাংচুর করেছে। বুধবার বিকাল আড়াইটা থেকে সাড়ে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় স্মারকলিপি দেয়ার নাম করে বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রায় ১৫/২০ জন হাই কমিশনের ভেতরে জোরপূর্বক প্রবেশ করে। তারপর তারা হাই কমিশনের কনফারেন্স রুমের দেয়ালে লাগানো শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি কর্মকর্তাদের সামনে থেকে জোর পূর্বক নামিয়ে এনে বাইরে জুতা পেটা করতে থাকে। এ ঘটনায় পুলিশ প্রাথমিক ভাবে ৭/৮ জনকে গ্রেফতার করলেও পরে তাদের ছেড়ে দেয়। তবে যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নাসির আহমেদ শাহিনকে গ্রেফতারের পর ছাড়েনি পুলিশ । তাকে ছাড়ানোর জন্য বিএনপি’র নেতারা আইনজীবীদের সাথে যোগাযোগ করছে।
বিএনপি সূত্র এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া বিভিন্ন ছবি থেকে জানা যায়, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রায়ের বিরুদ্ধে তাদের দাবি বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করে যুক্তরাজ্য বিএনপি সেখানে স্মারকলিপি দিতে যায়। স্মারকলিপি প্রদানের আগে বিএনপি নেতা কর্মীরা হাই কমিশনের সামনে বিক্ষোভ করে। পরে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক ও সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদের নেতৃত্বে একদল প্রতিনিধি হাই কমিশনের ভেতরে প্রবেশ করে। এসময় কয়েকজন বিএনপি কর্মী জোর করে হাই কমিশনের ভেতরে প্রবেশ করে দেয়ালে টাঙ্গানো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি খুলে নিয়ে আসে। এসময় তারা কয়েকটি চেয়ার ভাংচুরের চেষ্টা করে বলে এক সূত্রে জানা যায়। এসময় তারা হাই কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তাকে সুযোগ পেলে মারার হুমকি দেয়। তারা হাই কমিশনের কয়েকটি জানালাও ভেঙ্গে ফেলে। উত্তেজিত বিএনপি‘র নেতা কর্মীরা শেখ মুজিবের ছবি ও শেখ হাসিনার ছবি বাইরে নিয়ে এসে তাতে জুতা দিয়ে পেটানোর ছবি তুলে তা সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে। এই ঘটনার ভিডিও ফেইসবুকে প্রচার করে কয়েকজন বিএনপির কর্মী।
বিক্ষোভের সময় বিএনপি ’র ও ছাত্রদলের কর্মীরা ‘‘আমার নেত্রী আমার মা বন্দী হতে দেবনা ’’ বলে শ্লোগান দিতে দেখা গেছে। এছাড়া তারা শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে নানা ধরনের আক্রমনাত্নক শ্লোগান দেয়। উত্তেজিত কর্মীদের শান্ত করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে বিএনপি কর্মীরা ঠিক হাইকমিশনের প্রধান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শ্লোগান দিচ্ছে। 

অন্যদিকে একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক এঘটনার জন্য বিএনপির নেতৃবৃন্দকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি বলেন, শত শত লোক হাইকমিশন ঘেরাও করে রেখে , আমাদের নেত্রীর পক্ষে মানুষ অবস্থান নিয়েছে। তিনি হাই কমিশন ভাংচুর করায় নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান।এ্ছাড়া সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ বলেন, বিএনপির বিক্ষোভের ভয়ে হাই কমিশনার পালিয়ে গেছে। ব্রিটিশ পুলিশ হাইকমিশনে প্রবেশ করে হাই কমিশনকে খুঁজে পায়নি। তিনিও এঘটনার জন্য নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে হাই কমিশনে হামলার অভিযোগে পুলিশ বেশ কয়েক জনকে আটক করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে স্বেচ্ছাসবেক দলের সভাপতি নাসির আহমদ শাহিন ,সাবেক ছাত্রনেতা মোঃ সুয়াইবুর রাহমান, সাবেক ছাত্রনেতা ও মানবাধিকার সংগঠক এডভোকেট শেখ তরিকুল ইসলাম , ইস্ট লন্ডন বিএনপি নেতা মোঃ হাসনাইন, যুবদল নেতা মোঃ সাকোয়াত হোসেন, মোঃ আব্দুল মোমিন, সমাজকল্যান সম্পাদক মোহাম্মদ তারেক ইকবাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসাধারণ সম্পাদক মোঃ জোবায়ের ইসলাম শিশির, আবদুর রহিম, লাকি আহমেদ , ছাত্র নেতা মাছউদুল হাসান , ছাত্রদল নেতা মাহমুদ উল্লাহ হান্নান ,যুবদল নেতা আব্দুল আলীম , ছাত্রনেতা মাহমুদুল হাসান রুবেল, ছাত্রদল নেতা মোঃ আব্দুস সামাদ, মোঃ নাঈম, ছাত্রনেতা শামীম আল মামুন, ছাত্রনেতা মোঃ আব্দুল হাফিজ, ছাত্রনেতা আদিলুর রহমান মিতু, বিএনপি নেতা এসএম নাহিদ পারভেজ ,স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা আলমগীর শেখ, আইনজীবী ফোরাম নেতা শেখ আব্দুল্লাহীল রাব্বি, যুবদল নেতা নিজাম উদ্দিন দোদন,মোহাম্মদ আবু তালেব, সাবেক শিবির নেতা আলী শাহজাদা, তারেক আজিজ রোমান, ছাত্রদল নেতা মোঃ বেলাল হোসাইন পাশা। পরে সবাইকে ছেড়ে দিলেও স্বেচ্ছাসবেক দলের সভাপতি নাসির আহমদ শাহিনকে এ খবর লেখা পর্যন্ত ছাড়া হয়নি বলে জানা যায়।
এদিকে বুধবারের ঘটনায় বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডনের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওই হামলার জন্য নিন্দা জানানো হয়েছে। ই মেইলে প্রাপ্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে হাই কমিশনের পার্সোনাল অফিসার (প্রেস) একেএম কামাল লোহানীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ৭ ফেব্রূয়ারী লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের সামনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ইউকে এবং এর অঙ্গ সংগঠন সমূহ কর্তৃক আয়োজিত বিক্ষোভ শেষে স্মারক লিপি হস্তান্তরের নামে একদল বিক্ষোভকারী দূতাবাসের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে দূতাবাসের কর্মচারীদের আক্রমন করে এবং দূতাবাসের সম্পত্তি ভাঙচুর করে। গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার নামে এহেন সহিংস ও উশৃঙ্খল আচরণ বিক্ষোভকারীদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পর্কে প্রশ্নের উদ্রেক করে। বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশে প্রতিনিধিত্ব করে। সুতরাং দূতাবাসের সম্পত্তি ধ্বংস করা রাষ্ট্রের সম্পত্তি ধ্বংস করা এবং দূতাবাসে আক্রমণ করা বাংলাদেশকে আক্রমণ করার শামিল। বিক্ষোভকারীদের এহেন সহিংস এবং উশৃঙ্খল আচরনে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। আরও দুঃখজনক , বিক্ষোভকারীদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভূয়া ছবি দিয়ে জনগনকে বিভ্রান্ত করার জন্য অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ হাই কমিশন এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছে।
এদিকে বুধবারের ঘটনার প্রতিবাদে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনের সামনে বিক্ষোভের ঘোষনা দিয়েছে। ওই বিক্ষোভে দলের অংগ ও সহযোগী সংগঠনের সকল নেতা কর্মীদের উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের এক সূত্রে এ খবর জানা যায়। এছাড়া ব্রিটেনের বিভিন্ন সংগঠন ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version