অনুমোদন পেলো ভ্যাস (ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস) গাইডলাইন। বুধবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গাইডলাইনে সই করে এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। এখন অনুমোদন-পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করবে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। শিগগিরই অনুমোদিত নীতিমালা বিটিআরসিতে চলে যাবে বলে জানা গেছে।
বুধবার মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ভ্যাস গাইডলাইনের অনুমোদন হয়ে গেছে। এর ফলে এই খাতে শৃঙ্খলা আসবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে দেশের স্বার্থ সবার আগে। বিদেশি যেকোনও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ভ্যাস নিয়ে কাজ করতে পারবে, কিন্তু এদেশের কোনও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই করতে হবে বা প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে করতে হবে। আমি বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই, তবে তা নিয়ম ও নীতিমালার মাধ্যমে হতে হবে।’
মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, ‘এতদিন তো গাইডলাইনই ছিল না। যার যা খুশি করেছে। ইচ্ছেমতো এসব করে বেড়ানোর চেয়ে টোটাল একটা গাইডলাইনের মধ্যে আসাটা জরুরি ছিল। এতে বড় যে কাজটা হবে, তা হলো একটা নিবন্ধনের ব্যবস্থা হবে। কারণ, ভ্যাস ব্যবসা করার জন্য আসলে সেরকম কিছুই লাগতো না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফিন্যান্সসহ যত জায়গা থেকে অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল, সব জায়গা থেকে ওকে হওয়ার পরে আমার কাজটা বাকি ছিল। আজ (বুধবার) অনুমোদন দিয়ে দিয়েছি।’ এর ফলে একটা গ্যাপ পূরণ হলো বলে তিনি মনে করেন।
এর আগে মোস্তাফা জব্বার যখন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি ছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর বিরোধিতার কারণে ভ্যাস গাইডলাইন হয়নি। নীতিমালার অভাবে মোবাইলফোন অপারেটরগুলো দেশীয় ভ্যাস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে রাজস্ব ভাগাভাগি করছে ইচ্ছেমতো। দেশি প্রতিষ্ঠানকে কম দাম দিয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশি দিয়েছে। ভ্যাস গাইডলাইন হলে সব নিয়মের মধ্যে আসবে। কোনও বৈষম্য থাকবে না।’ গাইডলাইন, লাইসেন্স বা নিবন্ধনের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় মোবাইলফোনে বিভিন্ন ধরনের মূল্য সংযোজিত সেবা বা ভ্যাস (রিংটোন, ওয়েলকাম টিউন, ওয়াল পেপার ইত্যাদি) সেবা নিয়ে তৈরি ভ্যাস গাইডলাইন আলোর মুখ দেখছে। দেশের সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো যে ধরনের কনটেন্ট (ভ্যাস) তৈরি করে থাকে তা আগে আইটিইএস সেবা নামে প্রচলিত ছিল। পরবর্তী সময়ে তা-ই ভ্যাস নামে অভিহিত হয়।
প্রসঙ্গত, মাত্র দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বাংলাদেশ থেকে দুই বছরে প্রায় ১৩ কোটি টাকা মুনাফা করে ভারতীয় ভ্যাস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হাঙ্গামা। এই টাকা কোম্পানিটির মূলধনের প্রায় ৩২০ গুণ। এ বিষয়টিকে ‘অস্বাভাবিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করে’ কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে জানতে চেয়ে বিটিআরসিতে চিঠি দেয়। হাঙ্গামা’র বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগ, দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ২০১৫ সালে ৬ কোটি ৭৪ লাখ ৮১ হাজার ২৫০ এবং ২০১৪ সালে ৬ কোটি ৭ লাখ ৩৩ হাজার ১২৫ টাকা লভ্যাংশ বাবদ ভারতে পাঠায় তারা। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ভ্যাস গাইডলাইন ও লাইসেন্সিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। মূলত এ ঘটনার পর থেকেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি-সহ সব পক্ষই ভ্যাস গাইডলাইন নিয়ে আবারও সরব হয়েছে।
প্রথমবারের মতো ‘ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস লাইসেন্সিং গাইডলাইনস-২০১২’ তৈরি করে বিটিআরসি। পরে যা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বাতিল করে দেয়। ২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে জানায়, আপাতত ভ্যাসের কোনও প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে ৫টি কারণ দেখায় মন্ত্রণালয়। মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর জোর বিরোধিতার কারণেই ভ্যাস গাইডলাইন বাতিল হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছিল।
এরপর ২০১৬ সালে ‘গাইডলাইনস ফর দ্য টেলিকম ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসেস’ তৈরি করা হয় এবং সব পক্ষের অভিমত নেওয়ার জন্য ১০ দিনের সময় দিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠায়। পরে সবার মতামত গ্রহণের জন্য বিটিআরসি গাইডলাইনটি কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে এবং অভিমত নেয়।
ভ্যাস নির্মাতাদের সংগঠন কনটেন্ট প্রোভাইডার্স অ্যান্ড এগ্রিগ্রেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ভ্যাস গাইডলাইন এলে ল্যাপটপ সর্বস্ব যেসব বিদেশি কোম্পানি (কনটেন্ট নির্মাতা) আছে তাদের এ জাতীয় কার্যক্রম বন্ধ হবে। তিনি আরও বলেন, দেশে বর্তমানে ভ্যাসের মার্কেট সাইজ টেলিকম অপারেটরগুলোর রাজস্ব আয়ের প্রায় ৪ শতাংশ।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version