এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার সাজার রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশের পরই সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এ উদ্যোগ গ্রহণ করে। হাইকোর্টের পেপারবুক শাখা আপিলের পেপারবুক তৈরির কাজ করছে। এপ্রিল মাসের মধ্যেই এই কাজ সম্পন্ন হবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, পেপারবুক প্রস্তুত হওয়ার পর তা নির্ভূলভাবে করা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি প্রতিবেদন দেয় ফৌজদারি আপিল শাখা। ওই প্রতিবেদন দাখিলের পরই আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়। এরপর মামলার কোন পক্ষ এখতিয়ার সম্পন্ন বেঞ্চে গিয়ে আপিল শুনানির আবেদন জানালে তখন শুনানির জন্য দিন ধার্য করে দেয় আদালত।

এ প্রসঙ্গে দুদক কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, পেপারবুক প্রস্তুতের পরই আমরা হাইকোর্টে আপিল শুনানির দিন ধার্যের জন্য আবেদন জানাব। মামলা সংশ্লিষ্ট একাধিক আইনজীবী মনে করছেন, পেপারবুক প্রস্তুত সম্পন্ন হওয়ার পর মে মাসে শুনানির জন্য হাইকোর্টে উঠতে পারে খালেদা জিয়ার আপিল। আপিলে বিচারিক আদালতের সাজা বাতিল চেয়েছেন তিনি। গত ৮ ফেব্রুয়ারি অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামিকে দেওয়া হয় দশ বছরের কারাদন্ড। সকল আসামিকে অর্থদন্ড দেওয়া হয় ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকার। সাজার এই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল গত ২২ ফ্রেবুয়ারি শুনানির জন্য গ্রহণ করে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে স্থগিত করে অর্থ দন্ড। পাশাপাশি নিম্ন আদালতের নথি তলব করে। ওই নথি আসার পর গত ১২ মার্চ বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন মঞ্জুর করেন। পাশাপাশি উল্লেখিত সময়ের মধ্যে মামলার পেপারবুক প্রস্তুতের জন্য হাইকোর্টের ফৌজদারি আপিল শাখাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ হাইকোর্টের আদেশের এই সত্যায়িত অনুলিপি পৌঁছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনে।

পেপারবুকে যা থাকছে :আপিলের পেপারবুকে অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার এজাহার, জব্দ তালিকা, চার্জশিট, আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও জেরা, আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক বক্তব্য, বিচারিক আদালতের রায় ও সকল আদেশ এবং আপিলের মেমো সংযুক্ত থাকবে। আর তৈরিকৃত এই পেপারবুকটি হবে প্রায় ছয় হাজার পৃষ্ঠার। তবে পৃষ্ঠা সংখ্যা বেশি হওয়ায় এটি কয়েকটি খন্ডে বিভক্ত থাকবে।

তিনটি আপিল বিচারাধীন:খালেদা জিয়া ও সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামালের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে হাইকোর্ট। দন্ডিত অপর আসামি শরফুদ্দিন আহমদ বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। তবে সেটি এখনো হাইকোর্টে উত্থাপন করা হয়নি। এদিকে এই মামলার অপর তিন আসামি তারেক রহমান, সাবেক সচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান বিচারের শুরু থেকেই পলাতক। গ্রেপ্তার বা আত্মসমর্পণের পর কারাগার থেকে তারা রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ পাবেন।

এদিকে খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি কেন করা হবে না এই মর্মে জারিকৃত রুল এসব আপিলের সঙ্গে একত্রে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। দুদক খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে রিভিশন আপিল করলে হাইকোর্ট এই রুল জারি করে।

প্রসঙ্গত, সাজার রায় ঘোষণার পর থেকে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া। হাইকোর্ট জামিন মঞ্জুর করলেও তা স্থগিত করে দেয় আপিল বিভাগ। আগামি ৮ মে আপিল বিভাগে জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আপিলের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version