এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বাড়িওয়ালা, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতার পর এবার তিন বোনের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। বার্গার-এ-কেল্লাফতের স্বত্বাধিকারী এই তিন বোনের অভিযোগ খতিয়ে না দেখেই লালবাগের পুলিশ বাড়িওয়ালার পক্ষে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির মালিকেরা অভিযোগ করেছেন।
২০১৭ সালের মার্চে লালবাগ কেল্লার উল্টো দিকে ফাহমিদা মিশু, সাফায়েত আরা ও সাদিয়া আফরিন—এই তিন বোন মিলে একটি সাততলা ভবনের নিচতলায় ৬০০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে বার্গার-এ-কেল্লাফতে চালু করেছিলেন। আগাম ২০ লাখ টাকা এবং মাসে ৪০ হাজার টাকা ভাড়ায় তাঁরা রিয়াজ আহমেদের কাছ থেকে জায়গাটি ভাড়া নেন। দ্রুত ব্যবসা জমে ওঠে। পরে ১০ লাখ টাকা আগাম ও ২০ হাজার টাকা ভাড়ায় নিচতলার গ্যারেজ ও আরও পরে ২০ লাখ টাকা আগাম ও ৫০ হাজার টাকা ভাড়ায় দোতলা ভাড়া নেন। লালবাগে বিরিয়ানির পাশাপাশি বার্গার-এ-কেল্লাফতের ‘ছোট নবাব’, ‘বড় নবাব’, ‘বাদশাহ’ দ্রুত পরিচিতি পায়। মাস ছয়েক পর থেকেই বাড়ির মালিক রিয়াজ আহমেদ রহস্যজনক আচরণ শুরু করেন। প্রথমে যে তিন বছরের চুক্তিপত্র হয়েছিল তিনি আর তা মানতে চাননি। একরকম জোর করে গত বছরের ১৬ নভেম্বর তিনি দ্বিতীয় আরেকটি চুক্তিপত্রে ফাহমিদা মিশুর স্বাক্ষর নেন। ওই চুক্তিপত্রের কোনো অনুলিপি রিয়াজ আর ফাহমিদা মিশুকে দেননি। তবে চুক্তিপত্রের শর্ত অনুযায়ী তিন মাসের নোটিশে তিনি বার্গার-এ-কেল্লাফতেকে উঠে যাওয়ার চিঠি দিয়েছেন।
ফাহমিদা এই পরিস্থিতিতে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলা করেন। তিনি বিশ্বাস ভঙ্গ, প্রতারণা, অনধিকার প্রবেশের অভিযোগে মামলা করেন এবং শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ১৪৫ ধারা জারির আবেদন করেন। তিনি লালবাগ অঞ্চলের উপকমিশনার ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনেও অভিযোগ করেন। তিনি পুলিশকে জানান, তাঁর কাছ থেকে বাড়িওয়ালা যে ভাড়া নিয়েছেন সেই ভিডিও ফুটেজ আছে, অডিও রেকর্ডও আছে। কিন্তু পুলিশকে বারবার অনুরোধের পরও তারা এই প্রমাণগুলো নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
ফাহমিদার সঙ্গে সোমবার দুপুরের দিকে যখন কথা হচ্ছিল, তখন তাঁর রেস্তোরাঁয় ক্রেতা ছিলেন মাত্র দুজন। শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র না চলায় ক্রেতারা বার্গার কিনে চলে যাচ্ছেন, তাঁরা রেস্তোরাঁয় বসছেন না। তিনি আরও বলছিলেন বার্গার-এ-কেল্লাফতের বিদ্যুতের মিটার বাড়িওয়ালার ফটকের ভেতর। তিনি সেখানে ফাহমিদাদের ঢুকতে দিচ্ছেন না। তাঁরা রিচার্জ করতে পারছেন না, বিদ্যুৎও পাচ্ছেন না। জেনারেটর দিয়ে কোনোরকমে রেস্তোরাঁ চালাচ্ছেন।
রিয়াজ আহমেদের ৩৬ লালবাগের বাসায় গিয়ে তাঁর দেখা পাওয়া যায়নি। ফটকটি ছিল বন্ধ। বাইরের দিকে কোনো কলবেল বা দারোয়ানও ছিলেন না। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে দেখা করবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘কেউ বিদ্যুৎ বিল দিতে চাইলে না নেওয়ার কোনো কারণ আছে?’
পুলিশের প্রতিবেদন পড়ে দেখা গেছে, বাড়িওয়ালার অভিযোগের ফর্দ ধরে লালবাগের পুলিশ ১৪৫ ধারায় দায়ের হওয়া অভিযোগের প্রতিবেদন দিয়েছে। সত্যতা যাচাইয়ের কোনো চেষ্টাই করেনি। প্রতিবেদনে লালবাগ থানার উপপরিদর্শক জহিরুল আলম লিখেছেন, ফাহমিদা নিজেই ২ নম্বর চুক্তি লুকিয়ে রেখেছেন। তাঁর ১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ছিল। তাঁর কারণে রিয়াজ আহমেদের বাড়ির বিদ্যুৎ-সংযোগ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কেটে দেওয়া হয়। বাদী (ফাহমিদা মিশু) ভাড়া দেন না। উচ্ছেদের নোটিশের পর বিবাদী (রিয়াজ আহমেদ) যেন তাঁকে উচ্ছেদ করতে না পারেন, সে জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা আদালতের মাধ্যমে শোধ করেছেন।
খোঁজ নিতে সোমবার আজিমপুরে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে গেলে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মহিউল আলম বলেন, রিয়াজ আহমেদ সবশেষ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুৎ বিল দিয়েছেন। এখনো তাঁর কাছে প্রায় সাড়ে ৬৬ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। তবে বার্গার-এ-কেল্লাফতে থেকে এর মালিক এসেছিলেন, তিনি প্রথমে ২০ হাজার ও পরে ৫০ হাজার টাকা শোধ করে গেছেন।
লালবাগ থানার উপপরিদর্শক আদালতে ১৪৫ ধারা জারির ব্যাপারে প্রতিবদেনটি জমা দেন। তিনি ভাড়া আদায়ের ভিডিও ফুটেজ নিয়েছিলেন কি না, বা ডিপিডিসি অফিসে গিয়ে বিদ্যুৎ বিল সংগ্রহ করেছেন কি না, জানতে চাইলে কোনো জবাব দেননি।
থানার ওসি সুবাস কুমার পাল বলেন, প্রতিবেদনে আপত্তি থাকলে বাদী আদালতে নারাজি দিতে পারেন।