এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দেশের বড় দুই দল- আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বিদ্যমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আসন্ন গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দু’দলকে নতুন এ চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেন দু’পক্ষকেই জিততে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও এটি এখন জাতীয় নির্বাচনের অন্যতম ‘ব্যারোমিটার’ হিসেবে রূপলাভ করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ, দুই সিটিতেই নৌকা ও ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে লড়বেন দল দুটির প্রার্থীরা। তাই এ নির্বাচন হয়ে উঠেছে দু’পক্ষের জন্য যেমন অগ্নিপরীক্ষা, তেমনি মর্যাদার লড়াইও। একদিকে সরকারকে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সহযোগিতা করার পাশাপাশি জয়ী হয়ে বিএনপির জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ খণ্ডন করতে হবে। অন্যদিকে দুই সিটিতে জয়ী হয়ে বিএনপিকেও প্রমাণ করতে হবে তাদের দাবি সঠিক, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জনগণ নেই।

দুই সিটিতে যে দল জয়ী হবে, সেই দলই আগামী সংসদ নির্বাচনে বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সবাই। তাই এ নির্বাচনে জয়ী হতে মরিয়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তফসিল ঘোষণার পরপরই রণকৌশল চূড়ান্তে নেমে পড়েছেন দুই দলের নীতিনির্ধারকরা। প্রার্থী চূড়ান্ত করা, নির্বাচনী গণসংযোগের কৌশলসহ সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে বিভিন্ন স্তরের নেতাদের মতামত নিচ্ছেন তারা। ক্ষমতাসীনরা কোন্দল নিরসনের দিকেই বেশি জোর দিচ্ছে। কোন্দলের কারণে অতীতে বিভিন্ন নির্বাচনে দলটির নিশ্চিত জয় হাতছাড়া হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি ও পৌরসভা নির্বাচনেও কোন্দলের বলি হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তাই এবার কোন্দল নিরসনে কঠোর হবে দলটি। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপিও প্রস্তুতিতে পিছিয়ে নেই। নির্বাচনে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার পরই প্রার্থী বাছাই ও নির্বাচনী পরিচালনার নানা কৌশল চূড়ান্ত করা হচ্ছে। দুই সিটিতে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রতিটি ভোটারের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে দলটির নীতিনির্ধারকরা। এ জন্য কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের নিয়ে গঠন করা হবে প্রতিটি ওয়ার্ডে সমন্বয় কমিটি।

ক্ষমতাসীনরা মনে করছেন, আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দুই দলের জন্য ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’ হলেও সরকারের জন্য পরীক্ষাটা একটু ভিন্ন। সরকারকে একদিকে প্রভাবমুক্ত নির্বাচন করার প্রমাণ করতে হবে, অপরদিকে নৌকার জয় ঘরে তুলতে হবে। কেননা, এ নির্বাচন যদি সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে বিতর্কিত হয়ে পড়ে এবং ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ দৃশ্যত প্রমাণিত হয় সে ক্ষেত্রে সরকারকে দেশে ও বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়তে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতাও প্রশ্নের মুখে পড়বে। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের অধীনে এ নির্বাচন কমিশন দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি মনে করছে, নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে হলেও দুই সিটিতে জয় পেলে দলের জন্য তা হবে ইতিবাচক। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর পর জনগণের সমর্থন ও দলটির প্রতি আস্থা বেড়েছে তা প্রমাণিত হবে। সবার কাছে এটাই প্রতীয়মান হবে যে, সরকারের ওপর জনসমর্থন কমে গেছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এ দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কেন্দ্র থেকেই এ নির্বাচন সমন্বয় করব। কেন্দ্রীয়ভাবেই নির্বাচন পর্যবেক্ষণও করা হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী দুই সিটি কর্পোরেশনে তার দল প্রচার চালাবে। দলের যেসব কেন্দ্রীয় নেতার যেতে আইনে বাধা নেই তারা এসব নির্বাচনী এলাকায় যাবেন। এ ছাড়া যাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হবে ঐক্যবদ্ধভাবে তার হয়ে সবাই কাজ করবে। সার্বিকভাবে নির্বাচনে জয়ের জন্য দলীয় ও সাংগঠনিক সব প্রচেষ্টা চালানো হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘চেয়ারপারসনের কারামুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের পরিপূরক হিসেবে তারা সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর জয় মানে আন্দোলনেরও জয়। এ জয়ের মধ্য দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিকে আরও বেগবান করবে।’ তিনি বলেন, ‘যে কোনো নির্বাচনকেই বিএনপি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়। কারণ তারা নির্বাচনে বিশ্বাসী।’

বিএনপির এই নীতিনির্ধারক আরও বলেন, সুষ্ঠু ভোট হলে ভোটাররা তাদের প্রার্থীকেই ভোট দেবে। তবে কোনো কারণে বিএনপির প্রার্থীদের পরাজয় হলে ভবিষ্যতে তাদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে বলেও মনে করেছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, সর্বশেষ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে ২০১৩ সালের ৬ জুলাই এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ওই বছরের ১৫ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে ভোট না হলেও দুই সিটিতেই বিএনপিসমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আগামী ১৫ মে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। দুই সিটি কর্পোরেশনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ আগামী ১২ এপ্রিল। জমা হওয়া মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে ১৫-১৬ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ আগামী ২৩ এপ্রিল।

জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিতে চায় আওয়ামী লীগ : জাতীয় নির্বাচনের অব্যবহিত আগে দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জিতে ইতিবাচক বার্তা দিতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, দলের জন্য ত্যাগ, অবদান, জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতাসহ সবকিছু বিবেচনা করেই প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে। সবাইকে এক হয়ে তার জন্য কাজ করতে হবে। কেউ বিরোধিতা বা অসহযোগিতা করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শাসক দলের নেতারা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আগে এ দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তাই দুই সিটিতেই মেয়র পদে যেকোনো মূল্যে জয়ই চান তারা। তবে তা হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে।

ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ হারাতে পারবে না। তাই দুই সিটিতে জয়ের জন্য দলের ঐক্যের বিকল্প নেই। আর সেজন্যই দলের ‘ইস্পাত-কঠিন’ ঐক্য এবং সাংগঠনিকভাবে সর্বশক্তি নিয়োগের কথাই ভাবছেন নীতিনির্ধারকরা। নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রার্থী মনোনয়নের জন্য দুই সিটির স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। দুই মহানগরেই দলের সব শাখা এবং সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো মিলে করবে বর্ধিত সভা। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তিনটি করে নামের তালিকা পাঠালে সেখান থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। প্রার্থী চূড়ান্তকরণের পর শুরু হবে প্রচার। কেন্দ্র থেকে এক বা একাধিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি বা টিম করা হবে। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যারা লাভজনক পদে নেই তাদের সমন্বয়ে দুটি টিম দুই সিটিতে পাঠানো হবে প্রচার এবং সমন্বয় করার জন্য। তারা দুই সিটিতে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবেন। প্রয়োজনীয় তথ্য কেন্দ্রে পাঠাবেন। কেন্দ্র থেকে দেয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, প্রার্থীদের জয়লাভ করার জন্য নির্বাচনবিধি মেনে দলের পক্ষে যতটা সাহায্য করা যায়, তা করা হবে। মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক শেষে যাদের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হবে দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার পক্ষে কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। হানিফ বলেন, কেন্দ্র থেকে সমন্বয়ের পাশাপাশি প্রার্থীর জন্য প্রচারও করা হবে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দলের কোথাও কোনো অভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকলে সেগুলো মিটিয়ে ফেলা হবে। নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব বা নেতাকর্মীর মধ্যে দূরত্ব থাকলে মিটিয়ে ফেলা হবে। এ ধরনের সমস্যা চিহ্নিত করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার জন্য কেন্দ্রীয় নেতারা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। কেননা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচন এবং কয়েকটি পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের কারণেই পরাজয় হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। দলের ৩১ মার্চের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আর কার্যনির্বাহী সংসদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে- কেউ যদি দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তাহলে তিনি ভবিষ্যতে কোনো ধরনের নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না। এদিকে এর আগের দিন দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমের সামনে বলেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর যেগুলোয় আওয়ামী লীগ হেরেছে, সেগুলোয় নিজেদের দ্বন্দ্বের কারণেই হেরেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফরম সংগ্রহের নির্দেশ দেয়ার পরই নড়েচড়ে বসেছে দুই নগরীর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। গাজীপুরে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান এবং সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নেমেছেন মনোনয়ন যুদ্ধে। তাদের দু’জনকে কেন্দ্র করে অনেকটা দু’ভাগে ভাগ হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। গতবারের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে চান প্রবীণ নেতারা। অন্যদিকে জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে তরুণদের বেশিরভাগ অংশ অবস্থান নিয়েছেন। এছাড়াও এ সিটিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের টিকিট চান জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান রাশেল, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গাজীপুর বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ওয়াজিউদ্দিন মিয়া। আজমত উল্লা খান বলেন, গাজীপুর রাজধানীর খুব নিকটবর্তী মহানগরী। দেশের অন্যতম প্রধান শিল্পনগরী। রয়েছে অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রতিষ্ঠান। এখানকার মানুষকে বিশ্বমানের সেবা দেয়ার জন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করেন। কিন্তু অব্যবস্থাপনা এবং যোগ্য নেতৃত্বের অভাবেই মানুষ সে সেবা বা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। গতবার তিনি নির্বাচনে হারলেও এ মহানগরীর মানুষের পাশে ছিলেন উল্লেখ করে আজমত উল্লা জানান, এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। দল তার অবদান, ত্যাগ, গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা যাচাই করে মূল্যায়ন করবে বলে আশাবাদী আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা।

এদিকে খুলনায় এখনও প্রার্থিতা নিয়ে তেমন তোড়জোড় নেই বললেই চলে। দীর্ঘদিন ধরে এ সিটির মেয়র পদে নাম আলোচনায় ছিল আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জুয়েল এ বিষয়ে কোনো তৎপরতা বা তিনি প্রার্থী হচ্ছেন কিনা, বিষয়টি পরিষ্কার করেননি। এছাড়া এখানে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদীর নাম প্রার্থী হিসেবে শোনা গেলেও তিনি এখন পর্যন্ত আগ্রহ দেখাননি বা তৎপরতাও চালাননি। তবে এ মহানগরীর নেতাকর্মীরা বলছেন, সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকই হতে পারেন এখানকার সবচেয়ে ভালো প্রার্থী। কিন্তু তিনি আর প্রার্থী হতে রাজি নন। জুয়েল বা খালেকের যে কেউ প্রার্থী হলে দল ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করত বলে মনে করা হচ্ছে। এ তিনজন ছাড়া খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাজী আমিনুল হক, যুবলীগ খুলনা মহানগরের আহ্বায়ক আনিসুর রহমান, খুলনার দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রার্থী হতে ইচ্ছুক।

ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়াও লক্ষ্য বিএনপির : বিএনপি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে মর্যাদা রক্ষার চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। এজন্য বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট দুই সিটিতে দলীয় প্রার্থীদের জয়ের মুখ দেখাতে এই নির্বাচনকে রীতিমতো বাঁচা-মরার লড়াই হিসেবে দেখছে। চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবেই তারা নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ইতিমধ্যে ভোটের মাঠে নামার সর্বাত্মক প্রস্তুতি শুরু করেছে দলটি। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও এর ফল দেশে-বিদেশে দুই দলের জনপ্রিয়তার মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হবে। এই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা জয়লাভ করলে সরকার নানামুখী চাপে পড়বে, যা আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রভাব পড়বে।

অপরদিকে নির্বাচনে তাদের প্রার্থীরা পরাজিত হলে চেয়ারপারসনের কারামুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে বড় ধাক্কা লাগার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এই নির্বাচনে জয়লাভ ছাড়া আপাতত বিকল্প কোনো চিন্তা নেই তাদের। তারা মনে করেন, চলমান আন্দোলনে ভয়ভীতি, দমনপীড়নের কারণে রাজপথে নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষ নামতে ভয় পায়। কিন্ত সিটি নির্বাচনে তারা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারলে সরকারের বিরুদ্ধেই রায় দেবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু বলেন, জাতীয় সংসদসহ অনেক নির্বাচনে ভোট দিতে না পারায় মানুষের মনে ক্ষোভ জমে আছে। সরকার যেভাবে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে তাতে করে তারা ব্যালটের মাধ্যমে এর জবাব দিতে মুখিয়ে আছে। সিটি নির্বাচনের ফলাফলে তার প্রতিফলন দেখা যাবে। তিনি বলেন, যে কোন নির্বাচনকেই বিএনপি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়। জনগণ তাদের সঙ্গে আছে এটা অতীতে বারবার প্রমাণিত হয়েছে। সরকার জনগণের রায় ছিনিয়ে নেয় কিনা এটাই এখন আশঙ্কা।

সূত্র জানায়, আসন্ন দুই সিটির প্রার্থী চূড়ান্তে শিগগিরই স্থায়ী কমিটির নেতারা বৈঠক করবেন। ইতিমধ্যে সিনিয়র নেতাদের মতামত নেয়া হচ্ছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য বৈঠক করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শে প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন।

এদিকে আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামার আগেই নির্বাচন পরিচালনার যাবতীয় কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। দুই সিটিতে স্থায়ী কমিটির দুই সিনিয়র নেতাদের প্রধান করে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হবে। দুই সিটির প্রতিটি ওয়ার্ডে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠন করা হবে সমন্বয়ক কমিটি। এই কমিটি পুরো ওয়ার্ডে ধীনের শীষের পক্ষে ভোট চাইবে। তারা প্রতিটি ভোটারের দ্বারে দ্বারে যাবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে দলীয় কোন্দল এবং নির্বাচনী প্রচারে কোনো বাধার সৃষ্টি হলে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক টিমকে জানানোর নির্দেশ দেয়া হবে।

সূত্র জানায়, দুই সিটিতে নির্বাচনের ‘লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করতে সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি নিয়ে শিগগিরই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। মামলা-হামলায় জর্জরিত বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রচারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে হয়রানি না করে এ ব্যাপারে সহযোগিতা চাওয়া হবে। দুই সিটি ক্ষমতাসীনরা যাতে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাতে না পারে সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হবে। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে সরকারের পক্ষ থেকে দুই সিটিতে যেন কোনো উন্নয়নমূলক কাজে বরাদ্দ দেয়া না হয়ে সে ব্যাপারে ইসিকে উদ্যোগ নিতে হবে।

গাজীপুরে বিএনপিতে বর্তমান মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান এবং সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান উদ্দিন সরকারের নাম রয়েছে আলোচনায়। মামলা জটিলতায় বর্তমান মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানের দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করতে না পারা এবং বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট- দুটি মিলে তাই বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন তা নিয়ে ছিল প্রশ্ন। তবে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণার পর দু’জনের সমর্থকরাই সরব হয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিল্পপতি মো. সোহরাব উদ্দিন জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন। তবে যেহেতু দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে, সেহেতু হাইকমান্ড যাকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেবে আমরা তার পক্ষেই কাজ করব।

এ ছাড়া খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মাঠে প্রচারে নেমেছেন। মেয়র প্রার্থী হিসেবে পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার এবং ফেসবুকের মাধ্যমে নগরবাসীর কাছে দোয়া চাইছেন অনেকে। তবে কেসিসির বর্তমান মেয়র নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি এখনও দলীয় প্রার্থী হিসেবে থাকা সত্ত্বেও জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা আগামী নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তার অনুসারীরা প্রচার শুরু করায় দলের মধ্যে ব্যাপক অন্তর্কোন্দলের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সঙ্গে নগরের কোষাধ্যক্ষ আরিফুর রহমান মিঠুর প্রকাশ্য দ্বন্দ্বের কারণে এর প্রভাব পড়তে পারে আগামী কেসিসি নির্বাচনে। এই সুযোগটাকে ব্যবহার করতে চায় আওয়ামী লীগ।

জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা বলেন, দলীয় মনোনয়নের জন্য তিনি চেষ্টা চালাচ্ছেন। আরও দু-তিন দিন পর ফলাফল জানা যাবে। নগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, কেসিসির মেয়র প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামান মনি পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দলীয় কোন্দলে কোনো সমস্যা হবে না। সূত্র : যুগান্তর

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version