এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : সরকারের নিজস্ব অর্থের ৫০ শতাংশ রাখা যাবে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে। সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। আগে সরকারি অর্থের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থের ২০ শতাংশ এবং মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অর্থের ২৫ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার বিধান ছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকিং খাতে বিদ্যমান তারল্য সংকটের সমাধান খুঁজতে শুক্রবার রাতে ব্যাংক মালিক ও এমডিরা বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে। বৈঠকে বেসরকারি ব্যাংকে সরকারি আমানত রাখার সীমা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্তই প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়। এদিকে সরকারের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। তাদের মতে, ব্যাংকিং খাতের লুটেরাদের কোনো বিচার হয়নি। সীমাহীন দুর্নীতি আর ঋণ অনিয়মের কারণে বাড়ছে খেলাপি। কিন্তু জড়িতদের শাস্তি হয়নি। তারল্য সংকটের মূল কারণ বেপরোয়া ঋণ। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংককে দেয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ব্যাংকের কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফারমার্স ব্যাংকের কাছে জলবায়ু তহবিলের ৫০৯ কোটি টাকা আটকে আছে। ওই টাকা তারা দিতে পারছে না। এভাবে জনগণের অর্থ দেয়া ঠিক হয়নি। আগের বিধান অনুযায়ী ২৫ শতাংশের সামান্য বেশি দেয়া যেতে পারে। তবে তা কিছুতেই ৫০ শতাংশ হতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘অর্থ দেয়ার আগে শর্ত দিতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি ভালো ব্যাংক হতে হবে এবং সরকারের যে মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অর্থ রাখবে দায়-দায়িত্ব তার নিতে হবে।’

পুরনো বিধান অনুযায়ী সরকারের এডিপির ২০ শতাংশ এবং মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অর্থের ২৫ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা যেত। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যাংক উদ্যোক্তা ও এমডিদের বৈঠকে এডিপির অর্থের ২০ শতাংশের পরিবর্তে ৩০ শতাংশ এবং মন্ত্রণালয়গুলোর অর্থ রাখার সীমা ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়া হয়। বৈঠকে এ প্রস্তাব উপস্থাপন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। কিন্তু ব্যাংক মালিক ও এমডিদের প্রচণ্ড চাপের মুখে অর্থমন্ত্রী পেরে ওঠেননি। তিনি এক রকম বাধ্য হয়েছেন সরকারি এডিপি ও মন্ত্রণালয় উভয় অর্থের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন হয়েছে ঠিক, কিন্তু দ্রুত তা কার্যকর হবে না। প্রথমত, এ অর্থ রাখা বাধ্যতামূলক নয়। আগে ২৫ শতাংশের স্থলে বর্তমান অর্থ রাখার সীমা ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলো অর্থ বুঝেই বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে রাখবে। দ্বিতীয় হচ্ছে- অনেক মন্ত্রণালয় নিজস্ব অর্থ দীর্ঘমেয়াদে এফডিআর করে রেখেছে। ফলে একটি নির্দিষ্ট সময় না এলে এফডিআর ভাঙা যাবে না। সে ধরনের অর্থ চাইলেই কাল থেকে বেসরকারি ব্যাংকে রাখা যাবে না। তবে কিছু মন্ত্রণালয় ২৫ শতাংশের বেশি অর্থ বেসরকারি ব্যাংকে রেখেছে। ওই মন্ত্রণালয়গুলো সরকারের এ সিদ্ধান্তে উপকৃত হবে।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কারও দৃশ্যমান শাস্তি হয়নি। টাকা রাখলে যাচাই-বাছাই করে রাখতে হবে। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণসহ সার্বিক মান যাচাই করতে হবে। এর বাইরে যে প্রতিষ্ঠান টাকা রাখবে দায়-দায়িত্ব সে প্রতিষ্ঠানকেই নিতে হবে।’

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সংকটের উৎপত্তি খেলাপি ঋণ। যাচাই-বাছাই ছাড়া বেপরোয়া ঋণ এবং বিচারহীনতা। এসব জায়গায় হাত দেয়া হচ্ছে না। সে কারণে উদ্যোগটির উদ্দেশ্য সংশয় থেকে যাচ্ছে।’

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের নানা অনিয়ম নিয়ে মানুষের মনে উৎকণ্ঠা রয়েছে। এর মধ্যে হঠাৎ করে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে দেয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক হবে না। এতে ব্যাংকের সংকট আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ সূত্র : যুগান্তর

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version