এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেই ভিডিও কনফারেন্সে মামলার কার্যক্রম চালাতে চায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শিগগিরই এ সংক্রান্ত আবেদন করবেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।

বৃহস্পতিবার মামলার যুক্তি-তর্কের জন্য দিন ধার্য ছিল। একই সঙ্গে কারাগারে থাকা মামলার প্রধান আসামি খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করার নির্দেশও ছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণে কারা কর্তৃপক্ষ এদিন তাকে আদালতে হাজির করেনি। এ অবস্থায় বিচার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে দুদকের আইনজীবী আদালতকে একথা জানান।

রাজধানীর বকশিবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালতে মামলাটির বিচার কাজ চলছে। আদালতকে কাজল আরও বলেন, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ নন, কারাগারে তিনি ওষুধও খাচ্ছেন না। পরে আদালত মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ২২ এপ্রিল দিন ধার্য করেন। এ মামলায় ওই দিন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিনও মঞ্জুর করেছেন আদালত।

এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতেই দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) মামলার যুক্তি-তর্কের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। আদালতে দু’জন আসামি উপস্থিত রয়েছেন। খালেদা জিয়াকে আদালতে উপস্থিত করা হয়নি। উনি (খালেদা জিয়া) আর্থারাইটিস (বাত) রোগে ভুগছেন। উনার চিকিৎসায় বোর্ড গঠন করা হয়েছে। উনাকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তবে তিনি ওই চিকিৎসা নেবেন না। উনাকে ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিতে হবে। আর সেই ব্যক্তিগত চিকিৎসকে দেখানোর প্রক্রিয়াও চলছে। যেহেতু তিনি (খালেদা জিয়া) অনুপস্থিত, সেহেতু আগামীতে একটা দিন ধার্য করা হোক। আমরা সেই দিনে উনার উপস্থিতিতে মামলা পরিচালনা করব।

দুদক আইনজীবী বলেন, এছাড়াও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মামলা পরিচালনা করা যেতে পারে। সে ব্যাপারেও প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মামলা পরিচালনার জন্য আমরা আপনার (বিচারক) কাছে আবেদন করব। সেকশন ৩-এ এর সুযোগ রয়েছে। কিছুদিন আগে আমরা জেনেছি, ভারতে লালুপ্রসাদ যাদব কারাগারে অসুস্থ ছিলেন। এজন্য আদালতে তিনি আসতে পারেননি। তার তিনটি মামলার রায় হয়েছে। এর মধ্যে দুটির রায় আদালতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্তি-তর্ক সম্পন্ন করে দেয়া হয়েছে।

এর বিরোধিতা করে খালেদা জিয়ার আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান বলেন, দুদকের পিপি (মোশাররফ হোসেন কাজল) বলতে পারেন না যে আদালত (নিম্ন আদালত) এ পথে চলবেন, না ওই পথে চলবেন। এটা সুপ্রিমকোর্টের আদেশে চলবেন। আদালত কোথায় হবে, কোথায় চলবে তা আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে নির্ধারণ করবে। এরপর তিনি আদালতের কাছে প্রার্থনা করেন খালেদা জিয়ার কাস্টডি ওয়ারেন্টে কি লেখা আছে তা দেখেন। পরে তিনি আদালতের কাছে পরবর্তী শুনানির জন্য ১ মাসের সময় প্রার্থনা করেন।

প্রত্যুত্তরে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) গুরুতর অসুস্থ নন। এরপর আবদুর রেজ্জাক খান বলেন, না না এগুলো আপনি (দুদক পিপি) কি বললেন! মোশাররফ হোসেন কাজল ফের বলেন, অবশ্যই বলব। কারণ আমার কাছে তথ্য আছে। উনি আর্থারাইটিস রোগে ভুগছেন। আর উনি আগে থেকেই আর্থারাইটিসে ভুগছেন। এটা নতুন কিছু নয়, উনি আগে থেকেই এ রোগে আক্রান্ত। এ বিষয়ে মেডিকেল বোর্ড হয়েছে। বোর্ড তাকে সুস্থ ঘোষণা করেছে। কিন্তু আর্থারাইটিসের কথা বলেছে। এ আর্থারাইটিসের জন্য বোর্ড তাকে ওষুধ দিয়েছে। কিন্তু তিনি ওষুধ খাচ্ছেন না। তিনি ব্যক্তিগত চিকিৎসক চেয়েছেন, সে বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন আছে। পরবর্তী শুনানির জন্য ২-৪ দিন পরই দিন ধার্য করার আবেদন করেন দুদক আইনজীবী। এর আগে আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন বর্ধিত করার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন মঞ্জুর করে ২২ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।

চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় দুদকের পক্ষ থেকে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারির আবেদন করা হয়। দুদকের করা ওই আবেদনের ওপর ২৬ ফেব্রুয়ারি শুনানি হয়। ওই দিনও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারির বিরোধিতা করেছিলেন। শুনানি শেষে চলতি বছরের ১৩ মার্চ আদালত খালেদা জিয়াকে হাজিরের এ আদেশ দেন। এরপর ২৮ মার্চ খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরের দিন ধার্য থাকলে কারা কর্তৃপক্ষ অসুস্থতার জন্য তাকে হাজির করেনি বলে আদালতকে জানায়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবারও অসুস্থতার কারণে আদালতে হাজির করা হয়নি খালেদা জিয়াকে।

চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা অর্থাৎ ৭ বছর কারাদণ্ড দাবি করে দুদক প্রসিকিউশন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়। এরপর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরু হয়।

খালেদা জিয়া ছাড়া মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- তার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন সহকারী একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। হারিছ চৌধুরী পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। অন্য দুই আসামি জামিনে আছেন।

চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছর ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ৫ আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেকের ২ কোটি ১০ লাখ টাকা করে জারিমানা করেন। রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। প্রথম শ্রেণীর কারাবন্দি হিসেবে বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন। সূত্র : যুগান্তর

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version