এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : বিকেএসপিতে ম্যাচ শেষ হতে তখনও প্রায় ২৯ ওভার বাকি। হঠাৎ করেই প্রেস বক্সের পাশের রুমে থাকা আবাহনীর কর্মকর্তাদের শোরগোল শুরু হয়ে গেল। এক সমর্থক চিৎকার করে জানিয়ে দিলেন আবাহনী চ্যাম্পিয়ন। বিকেএসপি থেকে ৩৬ কিলোমিটার দূরে মিরপুরে তখন খেলাঘরের বিপক্ষে শেখ জামালের হার নিশ্চিত হয়ে গেছে। খবরটি শুনেই আবাহনীর কর্তাদের ওই উচ্ছ্বাস। বৃহস্পতিবার শেষ রাউন্ডে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই আবাহনীর শিরোপা জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের এবারের আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৭৪ রান করে অবশ্য আবাহনী তার আগেই জয়ের ভিত গড়ে রেখেছিল। শেষ পর্যন্ত রূপগঞ্জের বিপক্ষে ৯৪ রানের দাপুটে জয় দিয়েই ঢাকা লিগের ১৯তম শিরোপা উদযাপন করছে আবাহনী।

মাশরাফি-নাসিরদের সঙ্গে উৎসবে শরিক হলেন শ’পাঁচেক দর্শক ও কর্মকর্তারা। আবাহনীর শিরোপা উদযাপনের মঞ্চটা প্রায় তৈরিই ছিল। চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর মাঠে ব্যান্ড পার্টিও হাজির হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় চমক হল এবারই ঢাকা লিগে প্রথম মাঠ থেকেই ট্রফি দেয়া হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস মনে করতে পারলেন না যে, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মাঠে থেকে কোনো দলকে আগে ট্রফি দেয়া হয়েছে কিনা।

বিকেএসপির তিন ও চার নম্বর মাঠকে আলাদা করেছে একটি রাস্তা। কাল চার নম্বর মাঠে তৃতীয় বিভাগের একটি ম্যাচ চলছিল। মাশরাফি মুর্তজা তিন নম্বর মাঠে আশিকুজ্জামানের শেষ ওভারের প্রথম বলে লং-অন দিয়ে বল পাঠিয়ে দিলেন চার নম্বর মাঠে। শেষ ওভারে ছক্কা মেরেছেন আরও দুটি। সব মিলে চার ছক্কায় আট বলে মাশরাফি অপরাজিত থাকেন ২৮ রানে। এটি আবাহনীর শেষের ঝড়। তার আগে সেঞ্চুরি করেন নাজমুল হোসেন শান্ত (১১৩) ও নাসির হোসেন (১২৯)। শুরুটা অবশ্য করেছিলেন এনামুল হক বিজয়। ৫১ বলে ৫৭ করে আউট হন এনামুল। শুধু স্কোর কার্ড দেখলে নাসিরের ব্যাটিংয়ের মূল্যায়ন করা যাবে না। শুরুটা ছিল তার নড়বড়ে। মাত্র আট রানেই আউট হতে পারতেন তিনি। শর্ট মিড অনে তার সহজ ক্যাচটা ছাড়েন আশিকুজ্জামান। ২৭ রানে তার ফিরতি ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন রূপগঞ্জ অধিনায়ক নাঈম ইসলাম। তৃতীয় জীবন পান ৬৩ রানে। এবার লং অনে ফিল্ডার মোশাররফ হোসেন রুবেল। তিনবার জীবন পাওয়া নাসির ফিফটি করেন ৫৬ বলে। পরের ৭৯ রান করেছেন মাত্র ৩৫ বলে। ১৫টি চার ও চারটি ছক্কায়। তবে নাজমুল হোসেন কোনো সুযোগ না দিয়েই করেছেন এবার লিগের চতুর্থ সেঞ্চুরি। ১০৭ বলে ১১ চার ও দুই ছক্কায় ১১৩ করে ফেরেন। ১৬ ম্যাচে ৭৪৯ রান নিয়ে এবার লিগের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও তিনি। শেষ পর্যন্ত ছয় উইকেটে ৩৭৪ রানে থামে আবাহনী।

বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই আবদুল মাজিদকে হারায় রূপগঞ্জ। ৪১ রানের মাথায় তারা আরও একটি উইকেট হারায়। এরপর অবশ্য হাফ সেঞ্চুরি করেছেন রূপগঞ্জের তিন ব্যাটসম্যান। তাতে হারের ব্যবধানই শুধু কমেছে। মুশফিকুর রহিম (৬৭), মোহাম্মদ নাঈম (৭০) ও নাঈম ইসলামের (৭৬) ব্যাটে ৪২.৪ ওভারে ২৮০ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে রূপগঞ্জ। কোনো রান না তুলেই তারা শেষ তিন উইকেট হারায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

অবাহনী ও লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ

আবাহনী ৩৭৪/৬, ৫০ ওভারে (এনামুল হক ৫৭, নাজমুল হোসেন শান্ত ১১৩, নাসির হোসেন ১২৯, মোসাদ্দেক ১৯*, মাশরাফি মুর্তজা ২৮*। মোহাম্মদ শহিদ ২/৮১, পারভেজ রসুল ৩/৪২)। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ২৮০, ৪২.৪ ওভারে (মোহাম্মদ নাঈম ৭০, মুশফিকুর রহিম ৬৭, নাঈম ইসলাম ৭৬, পারভেজ রসুল ২৯। মেহেদী হাসান মিরাজ ২/২৯, মাশরাফি মুর্তজা ১/৩০, সানজামুল ইসলাম ২/৬২, সন্দ্বীপ রায় ২/৫৩, নাসির হোসেন ২/৬৭)। ফল : আবাহনী ৯৪ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ : নাসির হোসেন (আবাহনী)।

শেখ জামাল ও খেলাঘর

শেখ জামাল ১৬০, ৪৯ ওভারে (সৈকত আলী ১৩, নুরুল হাসান সোহান ৪৭, সোহাগ গাজী ২৭, আল-ইমরান ২৫, রবিউল ১৬)। রবিউল ইসলাম ২/১৯, তানভীর ইসলাম ১/৩১, অশোক মেনারিয়া

২/৩৮, মোহাম্মদ সাদ্দাম ২/১৮)। খেলাঘর সমাজকল্যাণ সমিতি ১৬১/৬, ৩৬.৫ ওভারে (অমিত মজুমদার ১৪, অশোক মেনারিয়া ১১, নাজিমউদ্দিন ৬১, রাফসান আল-মাহমুদ ৪৬। নাজমুল ইসলাম ৫/৩২, আল ইমরান ১/১৯)। ফল : খেলাঘর সমাজকল্যাণ সমিতি ৪ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ : নাজমুল ইসলাম (শেখ জামাল)।

প্রাইম দোলেশ্বর ও গাজী গ্রুপ

গাজী গ্রুপ ৯৫/১০, ২১.৪ ওভারে (মেহেদী হাসান ৩৯, মুমিনুল হক ১৬, নাদিফ চৌধুরী ১০। সালাউদ্দিন সাকিল ২/৩১, আরাফাত সানি ৩/২৬, নাসুম আহমেদ ৪/১০)। প্রাইম দোলেশ্বর ৯৯/৫, ২৪ ওভারে (ফজলে মাহমুদ ৩১, আবু সায়েম ৩৬, শরিফুল্লাহ ২২*। আবু হায়দার রনি ৩/২৭)। ফল : প্রাইম দোলেশ্বর ৫ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ : নাসুম আহমেদ (প্রাইম দোলেশ্বর)।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version