এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় কোন্দল ভাবিয়ে তুলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপিকে। কোন্দল নিরসনে ব্যর্থ হলে জয় হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা দু’দলের নীতিনির্ধারকদের। দুই সিটিতেই জয় পেতে ও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে কোন্দল নিরসনকে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তারা। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে দল দুটির হাইকমান্ড। একক প্রার্থী চূড়ান্ত এবং তার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামাতে জোর চেষ্টা চলছে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেউ কাজ করলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগাম সতর্ক করা হচ্ছে। কোন্দল নিরসন করে দু’দলের নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নামতে চাচ্ছেন। তবে হাইকমান্ডের কঠোর মনোভাবের পরও শেষ পর্যন্ত কোন্দল নিরসন সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক যুগান্তরকে বলেন, রোববার দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক। সেখানে দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। মনোনয়ন তো অনেকেই আশা করেন। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, মনোনয়ন না পেলে অনেকে প্রার্থীকে সহযোগিতা করেন না। কিন্তু এবার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে। দলের সভাপতি এ বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে। কেউ দলের ঐক্য নষ্ট করলে বা কারও বিরোধিতা কিংবা অন্য কোনো কার্যক্রম নির্বাচনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেললে তা সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। দলের ঐক্য বিনষ্টকারী নেতা, মন্ত্রী-এমপি যেই প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন পরবর্তী সময়ে তিনি কোনো ধরনের নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না বলে কার্যনির্বাহী সংসদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি দেশের অন্যতম বড় একটি রাজনৈতিক দল। যে কোনো পর্যায়ের নির্বাচনে এ দলে একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। একাধিক প্রার্থী থাকা মানেই দলে কোন্দল রয়েছে এমনটা ভাবার কারণ নেই। স্থানীয় নেতাকর্মীসহ সবার মতামত নিয়ে যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে। তিনি বলেন, দল যাকে মনোনয়ন দেবে সবাই তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। তবে কোথাও কোনো সমস্যা থাকলে তা আলোচনা করে সমাধান করা হবে।

অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে আ’লীগ : আসন্ন দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হতে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে গাজীপুর এবং খুলনা দুই মহানগরেই জিতবেন তারা। কিন্তু মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে যদি দলের সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ না করেন তবে জয় ঘরে তোলা কঠিন হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকটি নির্বাচন এবং এই দুই সিটির গত নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে তারা কোন্দল নিরসনকেই চ্যালেঞ্জ মনে করছেন। রোববার দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে দুই সিটির মেয়র পদে মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে। এরপর দুই সিটির নেতাকর্মীদের মান-অভিমান, বিবাদ-বিরোধ, অসহযোগিতা-বিরোধিতা নিরসনে কেন্দ্রীয় নেতারা কাজ শুরু করবেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, এ দুই সিটির সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ভেতরে ভেতরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে গঠিত তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করে নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার বার্তা দিচ্ছেন। মনোনয়নপত্র কেনার আগেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ থেকে নাম পাঠানোর প্রক্রিয়াকেও ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তাই মনে করা হচ্ছে।

শাসক দলের নেতারা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। প্রতি সিটিতেই রয়েছে একাধিক নির্বাচনী আসন। এ দুই সিটিতে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। তাই জাতীয় নির্বাচনের মতোই এ দুই নগরীর অধিবাসীরা প্রতীকে ভোট দেবেন। এটা হবে অনেকটা জাতীয় নির্বাচনের আগে পরীক্ষামূলক নির্বাচনের মতো। এর ফলাফল থেকেই সরকারের জনপ্রিয়তা মাপতে চাইবেন দেশে-বিদেশের পর্যবেক্ষকরা।

জানা গেছে, দলের সভাপতি ও কার্যনির্বাহী কমিটি দ্বন্দ্ব-কোন্দলের বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে হারার বিষয়ে দায়ীদের চিহ্নিত করছে তদন্ত কমিটি। গাজীপুর এবং খুলনার বিষয়ে দল একই অবস্থানে থাকবে বলে একাধিক নেতা জানান। তারা জানান, এ দুই সিটিতে যাদের মনোনয়ন দেয়া হবে তাদের পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে। কেউ অসহযোগিতা বা বিরোধিতা করলে ছাড় পাবেন না।

আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গাজীপুর বা খুলনার অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটানোর জন্য এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা নেই। আগে মনোনয়ন ঘোষণা করা হবে। তারপর উদ্ভূত পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান এবং সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম দু’জনেরই মনোনয়ন চাওয়াকে কেন্দ্র করে ভেতরে ভেতরে চাপা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে- তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যেভাবে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রচারে নেমেছেন এ ক্ষেত্রেও তাই হবে। কেন্দ্রে থাকবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। আর কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যারা লাভজনক পদে নেই তাদের ওয়ার্ড ভাগ করে দায়িত্ব দেয়া হবে। তারা প্রচারের পাশাপাশি স্থানীয় নেতাদের তৎপরতা কেন্দ্রে অবহিত করবেন। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি প্রয়োজন মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচন এবং কয়েকটি পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের কারণেই পরাজয় হয়েছে বলে দলের নেতারা মনে করছেন। গত ৩১ মার্চের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এর আগের দিন দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমের সামনেই বলেন, নিজেদের দ্বন্দ্বের কারণে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কিছু নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরেছে।

এবার গাজীপুরের জন্য আজমত উল্লা খান, জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, খুলনায় আবদুল খালেক প্রমুখ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। খুলনায় দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তেমন না থাকলেও গাজীপুরে তা প্রকট। আজমত এবং জাহাঙ্গীরকে কেন্দ্র করে দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

বিএনপির জয়ে বাধা হতে পারে কোন্দল : খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বিগত নির্বাচনে বিশাল জয় পায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। দলীয় কোন্দল মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ফলেই এ জয় সম্ভব হয়। বিগত নির্বাচনে কোন্দল নিরসনে মনোনয়ন না পাওয়াদের নানা প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কিন্তু পাঁচ বছর কেটে গেলেও সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি দলটির নীতিনির্ধারকরা। তাই এবার আগাম কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনের মাঠে নামানো কঠিন হবে। শেষ পর্যন্ত কোন্দল নিরসন সম্ভব না হলে হাতছাড়া হতে পারে জয়ও। তাই কোন্দল ভাবিয়ে তুলেছে দলটির নীতিনির্ধারকদের। কোন্দল নিরসনে তারা ইতিমধ্যে কাজও শুরু করেছেন। কয়েকদিন আগে গাজীপুরের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের ঢাকায় ডেকে কথা বলেছেন তারা। কথা বলছেন খুলনার বিবদমান গ্রুপের সঙ্গেও।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগর রাজনীতিতে দুই প্রভাবশালী নেতা হচ্ছেন বর্তমান মেয়র অধ্যাপক আবদুল মান্নান ও সাবেক সংসদ সদস্য হাসানউদ্দিন সরকার। স্থানীয় নেতাকর্মীরাও এ দুই ভাগে বিভক্ত। বিগত নির্বাচনে তারা দু’জনই শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন।

নির্বাচন করতে অনড় ছিলেন দু’জন। এমন পরিস্থিতিতে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে দলের নীতিনির্ধারকরা দফায় দফায় তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। শেষ পর্যন্ত কিছু শর্তে তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়। শর্ত হিসেবে মান্নান মেয়র পদে নির্বাচন করবেন এবং হাসান উদ্দিন সরকার সংসদ সদস্য পদে লড়বেন। আর মহানগরের দায়িত্বও দেয়া হবে হাসান উদ্দিন সরকারকে। এমন শর্তে দু’জনের মধ্যে সমঝোতা হলেও সেই শর্ত এখনও পূরণ হয়নি। মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার পর তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মান্নান তেমন মূল্যায়ন করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। দলের সুবিধাভোগী কিছু নেতাদের নিয়ে তিনি একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নমূলক কাজ থেকে শুরু করে সবকিছুই ওই সিন্ডিকেটের কব্জায় ছিল। মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা মামলা-হামলা ও বিপদের সময় মেয়রকে কাছে পায়নি।

তারা আরও জানান, নির্বাচনের আগে মহানগরের দায়িত্ব হাসান উদ্দিন সরকারকে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনও হয়নি নতুন কমিটি। কেন্দ্র বারবার নতুন কমিটির উদ্যোগ নিলেও মান্নানের কারণে তা আটকে যায়। হাসান উদ্দিন সরকারের প্রকাশ্যে বিরোধিতা শুরু করেন মান্নান। নিজের ছেলে এম মঞ্জুরুল করিম রনিকে মহানগরের দায়িত্ব পেতে তদবির শুরু করেন। মেয়রের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ স্থানীয় নেতাকর্মীরা। বিগত নির্র্বাচনের আগে দেয়া প্রতিশ্র“তি পূরণ না হওয়ায় এবার ছাড় দিতে রাজি নয় হাসান উদ্দিন সরকার। দলীয় মনোয়ন পেতে চালাচ্ছেন জোর লবিং। কিনেছেন দলীয় মনোনয়ন ফরমও। স্থানীয় নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ তার সঙ্গে আছেন। শারীরিক অসুস্থতায় ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে না পারলেও আবারও নির্বাচন করতে চাচ্ছেন মান্নান। কিনেছেন দলীয় ফরম। দুই নেতার এমন মুখোমুখি অবস্থানে বুধবার গাজীপুর জেলার নেতাদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন দলটির সিনিয়র নেতারা। ওই বৈঠকেও উঠে আসে কোন্দলের বিষয়টি। স্থানীয় নেতারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন সম্ভব না হলে নিশ্চিত জয় হাতছাড়া হবে। যাকেই প্রার্থী করা হোক সবাই যাতে তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেন সেই উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তারা।

তবে কোন্দলের বিষয়টি মানতে নারাজ গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, গাজীপুরে বিএনপিতে কোনো কোন্দল নেই। যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে সবাই তার পক্ষে কাজ করবে বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এ প্রসঙ্গে গাজীপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, বিগত নির্বাচনে কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়ে বর্তমান মেয়র আবদুল মান্নান ও হাসান উদ্দিন সরকারের মধ্যে সমঝোতা হয়। নির্বাচনে হাসান উদ্দিন সরকার ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। কিন্তু নির্বাচনের পর সেই প্রতিশ্রুতি রাখেননি বর্তমান মেয়র। ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেননি। মহানগরে কোনো কমিটি নেই। এমন পরিস্থিতিতে দুই নেতার মধ্যে সমঝোতা না হলে নিশ্চিত জয় হাতছাড়া হবে। তাই যাকেই মনোনয়ন দেয়া হোক সবাই যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেন সেই উদ্যোগ কেন্দ্রকে নিতে হবে।

জানা গেছে, গাজীপুরের চেয়ে খুলনায় দলীয় কোন্দল ভয়াবহ। জেলা ও মহানগর নেতারা ত্রিধারায় বিভক্ত। বিগত সিটি নির্বাচনে তাদের এক পতাকাতলে আনতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের পর আবারও কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন তারা। জেলা বিএনপির নতুন কমিটিকে কেন্দ্র করে তা প্রকাশ্যে রূপ নেয়। আসছে সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোন্দল আরও বাড়ার আশঙ্কা স্থানীয় নেতাকর্মীদের। খুলনা সিটি নির্বাচনে ইতিমধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন কেসিসির বর্তমান মেয়র নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি এবং জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা। এ দুই নেতার সমর্থকরা প্রকাশ্যে আলাদা প্রচারণা চালাচ্ছেন। মনি ও মনার গ্রুপিংয়ের পাশাপাশি নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সঙ্গে নগরের কোষাধ্যক্ষ আরিফুর রহমান মিঠুর প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বর্তমান কেসিসি মেয়র মনিরুজ্জামান মনি ও নগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু একই গ্রুপের রাজনীতি করেন। অপরদিকে জেলার সভাপতি ও কেসিসির সাবেক কমিশনার অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনার সঙ্গে দ্বন্দ্ব রয়েছে নগরের এ দুই নেতার। কেন্দ্রের যে কোনো কর্মসূচি তারা আলাদাভাবে পালন করেন। এ দুই গ্রুপের সঙ্গে তৃতীয় গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে মিঠু।

জেলা বিএনপির সভাপতি এসএম শফিকুল আলম মনা ২০১৪ সালের নির্বাচনেও মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে তা প্রত্যাহার করেন। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন এবং মনোনয়ন পাবেন বলেও তার সমর্থকরা আশাবাদী।

জানা গেছে, দলীয় কোন্দল ছাড়াও বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামান মনির ওপর ত্যাগী নেতাকর্মীদের ক্ষোভ রয়েছে। বিপদের সময় নেতাকর্মীরা মেয়রকে কাছে পাননি।

এমন পরিস্থিতিতে আবারও মনিকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলেও শফিকুল ইসলাম মনার অনুসারীরা ও ভুক্তভোগী নেতাকর্মীরা তার পক্ষে কতটা কাজ করবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিবদমান গ্র“পগুলোর কোন্দল নিরসন সম্ভব না হলে জয় হাতছাড়া হতে পারে।

সূত্র জানায়, খুলনার কোন্দল নিরসনে জেলা ও মহানগর নেতাদের ঢাকায় ডাকা হয়েছে। দলের সিনিয়র নেতারা আলাদাভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। মনোনয়ন চূড়ান্তের আগে সবাইকে নিয়ে বসবেন তারা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, কেসিসির মেয়র প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামান মনি পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন। মহানগর বিএনপি প্রার্থী হিসেবে আমরা তাকেই সমর্থন দিয়েছি। নির্বাচন করবে মহানগর বিএনপি। আমাদের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই। তিনি বলেন, জেলার কোনো নেতা বর্তমান মেয়রের বিরোধিতা করলেও প্রার্থী ঘোষণার পর তারা দলের পক্ষে কাজ করবেন বলে আশা করি।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version