এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ না করলে তা ভালো নির্বাচন হবে না বলে জানিয়েছেন খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা। ওই নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, যদি সব দল চায় আগামী সংসদ নির্বাচনে আংশিক ইভিএম ব্যবহার করে ভোট গ্রহণ হতে পারে। তবে এখনও ইভিএম ব্যবহারের কোনো সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতি নেই ইসির। এক প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, নির্বাচনের সময় সংসদ সদস্যদের ক্ষমতা কমানোর বিষয়ে আচরণবিধি সংশোধনের প্রস্তাবটি খুব ভালো। এটি চিন্তাভাবনা করা দরকার।

শনিবার বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউট (পিআইবি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সিইসি এসব কথা বলেন। ৩ দিনব্যাপী ‘নির্বাচন বিষয়ক রিপোর্টিং প্রশিক্ষণ’র সমাপনী উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পরে সিইসি অংশগ্রহণকারী গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে সনদ তুলে দেন। এ সময় তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুয়াল হোসেন ও পিআইবির মহাপরিচালক শাহ আলমগীর উপস্থিত ছিলেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, আগামী নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল যদি অংশগ্রহণ না করে তাহলে সেটা ভালো নির্বাচন হবে না। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। আপনারা আমাদের অবস্থান তুলে ধরতে পারেন। আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন করবই, এটা বলতে পারি। সব দলের নির্বাচনে আসাটা জরুরি। আমি এখনও আশা করি সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।

রাজনৈতিক দলের আস্থা অর্জনে ইসি দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা যাতে সবার ধারণা হয় আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, কমিশনের নিরপেক্ষতার বিষয়ে রাজনৈতিক দলের কথাবার্তা কম। নির্বাচনকালীন কি ধরনের সরকার হবে, নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে- এসব বিষয়ে তাদের কথা বলতে শুনছি। তাদের বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনের ওপর অনাস্থার বিষয় খুব একটা আসে না। এসব বিষয়ে যদি কেউ বলেন, তাহলে আমরা সেটি দেখব।

বর্তমান সংসদের ৩০০ সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় নির্বাচন হলে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে কেএম নুরুল হুদা বলেন, কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলোতে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার নেই। সরকার কাঠামো কি রকম হবে, নির্বাচনকালীন সরকারে কারা থাকবেন- এটা সরকারের বিষয়। এটি নির্বাচন কমিশনের বিষয় নয়। কি ধরনের সরকার আসবে সেটি কিন্তু আমরা জানি না।

সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে এমপিদের ক্ষমতা কমানোর জন্য আচরণ বিধিমালায় সংশোধনের উদ্যোগ নেবেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, এটা খুব ভালো প্রস্তাব। অবশ্যই চিন্তা করা দরকার। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন করাটাই চ্যালেঞ্জ।

আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে ভোট গ্রহণ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তুতি আমাদের নেই। এখন চেষ্টা করব গাজীপুর ও খুলনায় যতদূর সম্ভব ব্যবহার করা যায়। সব না, আংশিক (কিছু কেন্দ্রে) ইভিএম ব্যবহার করা হবে। সেখানে মানুষের কাছে ইভিএম নিয়ে যাব। তারা যদি ইভিএম গ্রহণ করেন, সেটা যদি গ্রহণযোগ্য হয়, তখন এ বিষয়ে চিন্তা করব। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি আরও বলেন, সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে কতগুলো যদি আছে। যদি আমাদের মেশিনগুলো ভালোভাবে কাজ করে, যারা নির্বাচন করবে তাদের কাছে যদি গ্রহণযোগ্য হয়, যারা ভোট দেবেন তারা যদি ইভিএমে ভোট দেয়া শিখতে পারেন, যারা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন তারা যদি প্রশিক্ষিত হন। এ সবগুলো যদি সম্ভব হয় তখন দেখা যাবে। রাজনৈতিক দল এবং ভোটাররা যদি সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের বলেন, তাহলেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব।

এর আগে ৩ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশিক্ষণ দেন সাবেক সিইসি ড. এটিএম শামসুল হুদা ও কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম-কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, সাবেক নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক প্রমুখ।

সিটি নির্বাচনে কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ও সিসি ক্যামেরা থাকবে -ইসি সচিব : নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, নির্বাচন কমিশন সিটি নির্বাচনের কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করার পদক্ষেপ নিয়েছে। পাশাপাশি কিছু কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরাও থাকবে, যাতে নির্বাচন কমিশন ভবন থেকেই নির্বাচনী তৎপরতা দেখা যায়। তবে কতটি কেন্দ্রে এগুলো ব্যবহার হবে সেটি নির্বাচন কমিশনাররা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি শনিবার দুপুরে গাজীপুরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে স্থাপিত রিটার্নিং কর্মকর্তার অস্থায়ী কার্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন। এ সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারিফুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান- ইসি সচিব বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজিবি মোতায়েন থাকবে, তবে এ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কোনো পরিকল্পনা নেই। সচিব বলেন, যে সব প্রার্থী মিছিল শোডাউন করছে তাদের আমরা সতর্ক করে দেব। আমাদের ১৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে আছেন। তারা জরিমানা করাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version