এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি অ্যাকশন ও দফায় দফায় সংঘর্ষে রোববার রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। পুলিশের মুহুর্মুহু রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ও লাঠিপেটার জবাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের আঘাত গুরুতর। আহত হয়েছেন ৫ পুলিশ সদস্যও। রাত দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনের গেট ভেঙে ভেতরে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা। রাত সোয়া ৩টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সংঘর্ষ চলছিল। এদিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের থামাতে রাতে ঘটনাস্থলে আসেন আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি আজ বেলা ১১টায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে আলোচনার আশ্বাস দিলেও সংঘর্ষ থামেনি।

রোববার সন্ধ্যা ৭টার পরপরই শাহবাগে অবস্থান নেয়া আন্দোলনকারীদের তুলে দিতে একযোগে লাটিচার্জ, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়া শুরু করে পুলিশ। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। এ সময় পেছন থেকে ধাওয়া করে কয়েকজন আন্দোলনকারীকে আটক করে পুলিশ।

এদিকে ছত্রভঙ্গ হয়ে ঘটনাস্থল থেকে সরে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মারধরের শিকার হন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারণ করার সময় সংবাদকর্মীদেরও হেনস্থার শিকার হতে হয়। সাদা পোশাকে বেশ কয়েকজন যুবককে পুলিশের সাঁজোয়া যানের আড়াল থেকে আন্দোলনকারীদের দিকে ইটপাটকেল ছুড়তেও দেখা যায়। শাহবাগ থেকে আন্দোলনকারীদের তুলে দেয়ার পর তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান নেন। রাত দেড়টা পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরসহ বিভিন্ন অংশে অবস্থান নিয়ে সড়কে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশ অবস্থান নিলে বিক্ষিপ্ত ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকে। সংঘর্ষের সময় শাহবাগ থেকে টিএসসির মোড় পর্যন্ত সড়কের দু’ধারে টায়ার ও কাঠের টুকরোয় আগুন দেয়া হয়। উপড়ে ফেলা হয় সড়ক বিভাজকের বেশ কয়েকটি গাছ। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কয়েকটি ভবনের গেটও ভেঙে ফেলেন আন্দোলনকারীরা। রাস্তায় প্রচুর ইনপাটকেল, লাঠিসোঠা ও টিয়ার শেলের খালি শেল পড়ে থাকতে দেখা যায়। সব মিলিয়ে শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত সড়কটি ছিল ক্ষতবিক্ষত।

রাত দেড়টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, চাকরিতে কোটা পদ্ধতি দীর্ঘ সময় ধরেই চলে আসছে। বর্তমান কোটা ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে এটা আমাদের কাম্য নয়। এটা চলমান প্রক্রিয়া। তারা সংস্কার নিয়ে আলোচনা করতে পারে। কোটা সংস্কারে সরকার আলোচানায় প্রস্তুত। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘটনা সম্পর্কে অবহতি হয়ে মন্ত্রিসভার প্রভাবশালী সদস্য ওবায়দুল কাদেরকে বিষয়টি সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন। সোমবার বেলা ১১টায় তাদের আলোচানায় আসার আহ্বান করছি।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় নানকের সঙ্গে ছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতারা।

নানকের বক্তব্য চলাকালে রাত ২টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটা অংশ ক্যাম্পাসে ঢুকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিশেষ করে ভিসির বাসভবনের গেট ভেঙে ঢুকে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এ সময় বাসভবনের ফটকের পাশে পুলিশের একটি ছাউনি ভেঙে ফেলা হয়। ভিসির বাসভবনের কয়েকটি কক্ষে আগুন দেয়া হয়। জ্বালিয়ে দেয়া হয় বাসভবনের ভেতরে থাকা দুটি গাড়ি। এমনকি বাসভবনের আসবাবপত্র বের করে এনে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ খবর পেয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেল বহর নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়েন। হ্যান্ড মাইকে তারা সবাইকে শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানান। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঢাবি ভিসি তার বাসভবনে অবরুদ্ধ ছিলেন। খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বাসভবনে আটকা পড়েন গণমাধ্যম কর্মীরাও। পরে রাত আড়াইটার দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থানরত পুলিশের একটি দল সাঁজোয়া যান নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এদিকে নীলক্ষেত এলাকা দিয়ে পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনারের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে আরও শতাধিক পুলিশ। এর আগে রাত সোয়া ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল থেকেও আন্দোলনের সমর্থনে শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে আসেন। আন্দোলনকারীদের অনেকে ভিসির বাসভবন ঘেরাওয়ের চেষ্টা করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা যাতে বের হতে না পারেন সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হলের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেয় ছাত্রলীগ। এরই মধ্যে ছাত্রীদের কয়েকটি হল থেকে কয়েকশ’ ছাত্রী বেরিয়ে বঙ্গবাজার এলাকার সড়ক অবরোধ করেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করাসহ ৫ দফা দাবিতে রোববার দেশব্যাপী আন্দোলনের অংশ হিসেবে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। বঙ্গবন্ধুর ছবি ও জাতীয় পতাকা হাতে দুপুর আড়াইটার পর থেকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছিলেন তারা। একই সময় ঢাকা- রাজশাহী, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।

শিক্ষার্থীদের অবরোধে শাহবাগে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে দফায় দফায় তাদের সরে যেতে অনুরোধ করে পুলিশ। কিন্তু আন্দোলনকারীরা অনড় থাকলে সন্ধ্যা ৭টার দিকে অ্যাকশনে যায় পুলিশ। ৭টা ৫০ মিনিটে আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ার শেল ছোড়া শুরু হয়। রাবার বুলেট ও জলকামান থেকে গরম পানিও নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। ফলে মুহূর্তেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকা।

পুলিশি অ্যাকশনে রাত সাড়ে ৮টার দিকে সংঘর্ষ কিছুটা থেমে গেলেও রাত ৯টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ফের শাহবাগের দিকে আসতে শুরু করেন। এ সময় পাবলিক লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ। টিএসসির কিছুটা দূরে অবস্থান নেয় কয়েক হাজার শিক্ষার্র্থী। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশও টিয়ার শেল ছোড়ে। রাত সাড়ে ৯টার পর পুলিশ কিছুটা এগিয়ে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের কাছে অবস্থান নেয়। রাত ১১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত এমন অবস্থা চলে। এ সময় ঘটনাস্থলে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর একেএম গোলাম রাব্বানি। তিনি পুলিশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে কিছুটা সরে যেতে অনুরোধ করেন। প্রক্টরের অনুরোধে সাড়া দিয়ে পুলিশ একটু পিছিয়ে যাওয়ার সময়ই শিক্ষার্থীরা পুলিশকে ধাওয়া করে। একই সঙ্গে ইটপাটকেলও ছুড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশও রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। আরেক দফা জলকামানও ব্যবহার করা হয়। ফলে শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ফের রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দ্বিতীয় দফা এ সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের সংখ্যা তাৎক্ষণিকভাবে জানা না গেলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আহত হয়েছেন অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। একই সঙ্গে পুলিশের অন্তত ৫ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে শাহবাগ থানা পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে তারা হলেন- আবু বকর (২০), নারায়ণ (২৪), মাহফুজ (২৭), রাফি (২৫), আবু বকর রাজ (২৪), সোহেল (৩১), ওমর ফারুক (২৫), খোরশেদ (২৫), শাকিল (২১), অমিত (২০), রাহুল (২২), সুমন (২০), মেহেদী (২০), আওলাদ হোসেন (৫০), জাবের (২৫), রঞ্জু (২০), রাজু (২৩), সোহরাব (২২), জয় (২৪), সালাম (২৩), আলখাছ (২২), রাকিব (২২), কামরুল (২৫), সজিব (২৬), শাকিল (২৪), সুলতান (২২), জুয়েল (২৬), জুয়েল (২৬), জসিম (২৫), জাবির (১৯), মাসুম (২৫) ও শাহপরাণ (২৫)।

এছাড়া আরও বেশ কয়েকজন আহত শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে অন্তত দু’জনের অবস্থা গুরুতর। তবে রাত সাড়ে ১২টার দিকে একজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এদিকে রাত সাড়ে ১১টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণের চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।

রাতভর শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার রাস্তায় পুলিশের চারটি সাঁজোয়া যান মোতায়েন ছিল। রাস্তায় অবস্থান করছিলেন ২ শতাধিক পুলিশ সদস্য। পুলিশের অবস্থান থেকে একশ’ গজের ভেতরেই আন্দোলনকারীরা মুহুর্মুহু স্লোগান দিচ্ছিলেন। পুলিশও থেমে থেমে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। নিরাপত্তার স্বার্থে শাহবাগ থানার গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। গেটের বাইরে পুলিশের কঠোর অবস্থান দেখা গেছে।

এ বিষয়ে পুলিশের রমনা জোনের এডিসি আজিমুল হক যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থীদের বিকাল থেকে বোঝানো হচ্ছে যাতে সাধারণ মানুষের সমস্যা না করে আন্দোলন করে। কিন্তু তারা তা করেনি এবং একপর্যায়ে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের ছাত্রভঙ্গ করে দেয়।

এর আগে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র ব্যানারে রোববার দুপুর ২টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। সেখান থেকে গণপদযাত্রা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেত, কাঁটাবন হয়ে শাহবাগে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এতে এ এলাকার সব রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ সাঁজোয়া যান নিয়ে অবস্থানস্থলের দিকে আসতে চাইলে রাস্তায় শুয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। বাধার মুখে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হন। পরে পুলিশকে গোলাপ ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানায় আন্দোলকারীরা। যদিও পুলিশ তা নেয়নি।

এছাড়া কয়েক দফায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পুলিশকে অবস্থানস্থল থেকে সরে যেতে বলে। পুলিশ সেখান থেকে না সরলে আন্দোলনকারীরা তাদের দিকে ধেয়ে যায়। শাহবাগ পুলিশ বক্স থেকে শিশুপার্কের দিকে সরে যায় পুলিশ। বিকালের দিকে শিশুপার্কের দিক থেকে পুলিশের একটি গাড়ি আন্দোলনস্থলের দিকে আসতে থাকলে বিক্ষোভকারীরা সেটিকেও ধাওয়া দেয়। পরে ওই গাড়িটিও সরিয়ে নেয়া হয়। তবে এই রাস্তা দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকলেও অ্যাম্বুলেন্স যেতে দেয় আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীরা মাথায় ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ লেখা কাপড় বেঁধে এবং একই লেখা সংবলিত টি-শার্ট পরে বিক্ষোভে অংশ নেন। তাদের হাতে ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। বিক্ষোভ থেকে ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে’র সুনির্দিষ্ট ৫টি দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হল- কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে আনা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে খালি পদগুলোয় মেধাবীদের নিয়োগ দেয়া, কোনো ধরনের বিশেষ পরীক্ষা না নেয়া, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা এবং নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একবারের বেশি ব্যবহার না করা।

আন্দোলনকারীদের স্লোগানে শাহবাগ মোড় প্রকম্পিত হয়ে উঠে। এ সময় তারা কোটা সংস্কারের দাবিতে রচিত বিভিন্ন সঙ্গীত ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন। তাদের স্লোগান ছিল- ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নেই’, ‘কোটা দিয়ে কামলা নয়, মেধা দিয়ে আমলা চাই’, ‘এক দফা এক দাবি, কোটা প্রথার সংস্কার চাই’, ‘বাতিল করো বাতিল করো, নাতি-পুতি কোটা, কোটা বাতিল করো’, ‘আমাদের দাবি আমাদের দাবি, মানতে হবে মেনে নাও’। আন্দোলনকারীদের প্লাকার্ডে লেখা ছিল- ‘একই ব্যক্তিকে কোটা সুবিধা বারবার নয়, ১০ শতাংশের বেশি কোটা নয়, কোটা পদ্ধতি নিপাত যাক, ইহা কোটা নয়- বৈষম্য।’

আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, কোটা বাতিল নয়, আমরা সার্বিক একটা সংস্কার চাই। আর সেই দাবিতে আমাদের গণপদযাত্রা ও অবস্থান। আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন পরিচালনা করে আসছি। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় আমরা এ কর্মসূচি পালন করছি। তিনি বলেন, সংসদে অধিবেশন চলছে। সংসদে যারা আছেন, তারা আমাদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত। আজ আমরা দেখব, তারা জনগণের জন্য কী করেন। সংসদে আমাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিলে তবেই আমরা রাস্তা ছাড়ব। আমাদের আন্দোলন সম্পূর্ণ অহিংস, কেউ যদি আমাদের বুকে গুলি চালালেও আমরা সহিংস কিছু করব না।

এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি কোটা সংস্কারের দাবিতে শাহবাগে মানববন্ধন করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। পরে আবার ২৫ ফেব্র“য়ারি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা। ৩ মার্চের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান দাবি করেন। এ সময়ে দাবি পূরণ না হওয়ায় ৪ মার্চ রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশী। দাবি আদায়ে ১৪ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও স্মারকলিপি প্রদানের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি ওই দিন সারা দেশের সব জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু ঢাকা শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে ১৬ জন আহত হন এবং ৬৩ জনকে আটক করা হয়। পরে দেশব্যাপী ছাত্র বিক্ষোভের মুখে রাত ৯টার দিকে তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। পরে সেদিনই এই ঘটনায় আন্দোলনকারী অজ্ঞাতপরিচয় ৭০০-৮০০ জনের নামে মামলা করা হয়। এরপর মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ১৫ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনকারীরা। ১৮ মার্চ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। ২৫ মার্চ গলায় শিক্ষা সনদ ঝুলিয়ে রাস্তা পরিষ্কার কর্মসূচি পালন করে দাবি আদায়ে এক অভিনব প্রতিবাদ জানান চাকরিপ্রার্থী বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ১ থেকে ৭ এপ্রিল ছিল ‘কোটা সংস্কার সচেতনতা সপ্তাহ।’

প্রসঙ্গত, বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা রয়েছে। আর বাকি ৪৪ শতাংশ নিয়োগ হয় মেধায়।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version