এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। গাজীপুরে জাহাঙ্গীর আলম ও খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেককে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। রোববার রাতে আগ্রহী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার শেষে তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়।

এদিন গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলটির স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়।

এদিকে একই দিন বিকালে আগ্রহী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয় বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড। দুই সিটিতে ১০ জন মনোনয়নপত্র ক্রয় করলেও তাদের মধ্যে একজন উপস্থিত ছিলেন না। সাক্ষাৎকার শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি দলটি। প্রার্থী চূড়ান্ত করতে কিছুটা হিমশিম খায় তারা। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী কে হবেন- তা জানার পর দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার শেষে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সেখানে কাকে মনোনয়ন দেয়া যায় সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়। একপর্যায়ে টেলিফোনে লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে পুরো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।

বিএনপি সূত্র জানায়, খুলনা সিটিতে শেষ পর্যন্ত বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামান মনিকেই প্রার্থী করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দলের হাইকমান্ডের পছন্দ ছিল নগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তবে মঞ্জু নির্বাচন করতে আগ্রহী নন। তবে তাকেই (মঞ্জু) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে হাইকমান্ডকে জানাতে বলা হয়েছে। তিনি নিজে নির্বাচন করবেন নাকি মনিকে দিয়ে করাবেন- সেই দায়িত্ব মঞ্জুকে দেয়া হয়েছে। মঞ্জু শেষ পর্যন্ত মনিকেই সমর্থন করবেন বলে একটি সূত্র যুুগান্তরকে নিশ্চিত করে।

অন্যদিকে গাজীপুরে বর্তমান মেয়র অধ্যাপক আবদুল মান্নান অসুস্থতার কারণে শেষ মুহূর্তে ছিটকে পড়তে পারেন। সে ক্ষেত্রে নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারই পাচ্ছেন দলের মনোনয়ন- এমন ইঙ্গিত দেন দলটির কয়েকজন নীতিনির্ধারক।

২০১৩ সালের নির্বাচনে গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন যথাক্রমে আজমত উল্লা খান ও তালুকদার আবদুুল খালেক। আর বিএনপির সমর্থন পেয়ে ওই নির্বাচনে খুলনায় মনিরুজ্জামান মনি ও গাজীপুরে অধ্যাপক আবদুল মান্নান মেয়র নির্বাচিত হন।

এদিকে মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে মনোনয়ন দেয়ায় ক্ষুব্ধ মনোভাব প্রকাশ করেছেন মনোনয়নবঞ্চিত গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনেই তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অপরদিকে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপত্র না কিনেই দলের মনোনয়ন পেয়েছেন বাগেরহাট-৩ আসনের এমপি তালুকদার আবদুল খালেক। এতে বাদ-প্রতিবাদ না করলেও নীরবে গণভবন ত্যাগ করেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য নেতারা।

রোববার সন্ধ্যা ৭টায় বৈঠক শুরু হয়ে রাত সাড়ে ১১টায় শেষ হয়। এ সময় গাজীপুর ও খুলনায় দলীয় মননোয়ন ফরম সংগ্রহ করা ১৭ প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রার্থী ছাড়াও গাজীপুর জেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুরের স্থানীয় এমপিদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের অন্তত ৩০ জন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী গাজীপুর ও খুলনার দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার তাগিদ দেন।

মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী চূড়ান্তে মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক শেষে আগ্রহী সব প্রার্থীর সঙ্গে আলোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, সেক্রেটারিসহ শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন। এরপর বৈঠকে সবার সামনে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে জাহাঙ্গীর আলমের নাম ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। তখন মনোনয়নপ্রত্যাশী আজমত উল্লা খান দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, নেত্রী আমি বিশ্বাস করতাম না যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন টাকায় বিক্রি হয়। জাহাঙ্গীর টাকা দিয়ে সবাইকে কিনে ফেলেছে। আমি জানতাম এমন কিছু হবে। তিনি বলেন, নাম ঘোষণার আগেই টিভি স্ক্রলে নাম যাচ্ছে। এ সময় নেত্রী তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন টাকা দিয়ে বিক্রি হয় না। আজমত উল্লা বলেন, দেখলাম তো।

অপরদিকে খুলনার ৭ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। সেখানে সবার কাছে তিনি জানতে চান কাকে মনোনয়ন দিলে জিতে আসা যাবে। শেখ হাসিনার কথা শেষে অনেকেই বলেন, তালুকদার আবদুল খালেক মনোনয়নপত্র না কেনায় আমরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। তিনি প্রার্থী হলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে তালুকদার আবদুল খালেকের নাম ঘোষণা করেন। এরপর বেশ কয়েকজন আগ্রহী প্রার্থী কারও সঙ্গে কথা না বলে নীরবে গণভবন ত্যাগ করেন।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক শেষে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, সভায় উপস্থিত মনোনয়ন বোর্ডের সব সদস্যের সম্মতিক্রমে গাজীপুরে জাহাঙ্গীর আলম ও খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেককে দলীয় মনোনয়নের জন্য চূড়ান্ত করা হয়। আগামীকাল (আজ) তালুকদার আবদুল খালেক দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন এবং এমপি পদ থেকে পদত্যাগ করবেন।

কাদের বলেন, প্রতি ছয় মাস পর জনমত জরিপ করা হয়। এ জরিপে মনোনীত দুই প্রার্থী এগিয়ে থাকায় তাদেরকে দল মনোনয়ন দিয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, তালুকদার আবদুল খালেক নির্ধারিত সময়ে দলের মনোনয়নপত্র না নিলেও এতে গণতান্ত্রিক নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হয়নি। দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তাকে মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ায় তিনি এখন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করবেন। এ সময় দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওফেল উপস্থিত ছিলেন।

মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদানের শেষদিন ছিল শনিবার। তিন দিনে ২ সিটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ১৭ জন। এর মধ্যে গাজীপুরে ১০ জন ও খুলনা সিটির জন্য ৭ জন। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল, মতিউর রহমান, সুমন আহমেদ শান্ত বাবু, কাজী আলিমউদ্দিন, আবদুর রউফ নয়ন, ওয়াজউদ্দিন মিয়া, যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, মোহাম্মদ শামসুল বারী এবং খুলনা সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাজী এনায়েত হোসেন, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক সরদার আনিছুর রহমান পপলু, মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, শহিদুল হক মন্টু, শেখ মোশাররফ হোসেন, শেখ সৈয়দ আলী ও মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম।

অপরদিকে দুই সিটিতে বিএনপির ১০ জন দলীয় মনোনয়নপত্র ক্রয় করেন। খুলনায় মেয়রপদে বর্তমান মেয়র ও খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা মনোনয়নপত্র ক্রয় করেন। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার, শ্রমিক দলের কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার, জেলা বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, মেয়র আবদুল মান্নানের ছেলে এম মনজুরুল করীম রনি, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শরাফত হোসেন এবং জেলা বিএনপির সাহিত্য ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক শওকত হোসেন সরকার দলীয় ফরম ক্রয় করেন।

প্রার্থী চূড়ান্তে রোববার সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয় বিএনপি মনোনয়ন বোর্ড। বিকাল সাড়ে ৫টায় খুলনার সম্ভাব্য প্রার্থীদের দিয়ে শুরু হয় এ সাক্ষাৎকার। মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএন?পির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী ক?মি?টির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যা?রিস্টার মওদুদ আহমদ, লে.? জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার র?ফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ। শুরুতেই খুলনার সম্ভাব্য প্রার্থী তিনজনের সাক্ষৎকার নেয়া হয়।

সাক্ষাৎকার শেষে নজরুল ইসলাম মঞ্জু যুগান্তরকে বলেন, মনোনয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি নির্বাচন করার প্রস্তুতি আমার নেই। আর আমি মেয়র নির্বাচন করতে চাই না। সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই। সেই প্রস্তুতি আমি নিচ্ছি। আমাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়ে আমার প্রতি অবিচার করবেন না। তিনি আরও জানান, আমি মনোনয়ন ফরম কিনিনি। দল কিনেছিল। এজন্য দলের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি নির্বাচন করতে চাচ্ছি না; কিন্তু দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, সে ক্ষেত্রে করার কিছু নেই।

মঞ্জু আরও বলেন, আমরা মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে বর্তমান মেয়র মনিকে আবারও মনোনয়ন দিতে কেন্দ্রে মতামত পাঠিয়েছি। মনোনয়ন বোর্ডকেও বলেছি মনিকেই মনোনয়ন দেয়া হোক।

বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামান মনি জানান, তাকে নানা প্রশ্ন করা হয়েছে। আশ্বাস দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা বলেছেন, বর্তমানে আপনি যেহেতু মেয়র আছেন থাকবেন।

সাক্ষাৎ শেষে শফিকুল আলম মনা যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে ধানের শীষের জয় হবে বলে জানিয়েছি। তারপর আমাকে দেয়া না হলে দল যাকে দেবে তার পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। কারণ চেয়ারপারসনের কারামুক্তির আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আমরা এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।

সূত্র জানায়, গাজীপুরে বর্তমান মেয়র অধ্যাপক আবদুল মান্নানের প্রতি হাইকমান্ড ইতিবাচক ছিলেন। বিগত সময়ে মামলা ও কারাভোগের পর তার প্রতি একটি সহানুভূতি সৃষ্টি হয়। কিন্তু তার শারীরিক অসুস্থতা সবকিছু পাল্টে দেয়। তিনি এতটাই অসুস্থ যে তাকে কয়েকজন ধরে হাঁটাচলা করাতে হয়। রাতে হাসপাতাল থেকে তাকে কয়েকজন ধরে গুলশান কার্যালয়ে আনেন। শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় দলের নীতিনির্ধারকরা তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন। যদিও মান্নান এখনও আশাবাদী। সাক্ষাৎকার শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে।

তফসিল ঘোষণার পর থেকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে মূল আলোচনায় ছিলেন বর্তমান মেয়র আবদুল মান্নান ও হাসান উদ্দিন সরকার। দু’জনই তাদের প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রে জোর তৎপরতা চালিয়েছেন। অসুস্থতা এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব থাকায় শেষ পর্যন্ত হাসান সরকারকে মনোনয়ন দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এর কারণ হিসেবে দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা যুগান্তরকে বলেন, শুরু থেকে দলের পছন্দ ছিল বর্তমান মেয়র আবদুল মান্নান। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের অনেকে আবদুল মান্নানকে মনোনয়ন না দেয়ার পক্ষে ছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল মান্নানের যে জনপ্রিয়তা সুস্থ থাকলে তিনিই আবারও নির্বাচিত হতেন। তারা এও জানান দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময় বিএনপিতে যোগ দিয়ে মান্নান এখন পর্যন্ত দলেই আছেন। তার বিরুদ্ধে ৩০টির ওপর মামলা ও দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন, তাও বিএনপি করার কারণে এ বিষটিও তারা অনুভব করেন। তার প্রতি সহানুভূতি থাকলেও বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে শেষ মুহূর্তে তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। সশরীরে নির্বাচনে ক্যাম্পেইন করতে না পারলে সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের ফল বিপরীত হতে পারে- এ আশঙ্কা থেকেই তাকে মনোনয়ন না দেয়ার যুক্তি দেয়া হয়। তবে কেউ কেউ এ ক্ষেত্রে মান্নানের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে তার ছেলে এম মনজুরুল করীম রনিকে দেয়ার প্রস্তাব করেন।

সূত্র জানায়, হাসান সরকারকে প্রার্থী করা হতে পারে কিছু শর্তে। তিনি মেয়র নির্বাচন করলে তার আসনে আগামী সংসদ নির্বাচনে আবদুল মান্নান বা তার ছেলে মনজুরুল করীম রনিকে মনোনয়ন দেয়া হবে। তাছাড়া হাসান সরকারের এলাকায় জনপ্রিয়তা রয়েছে। দলের দুঃসময়ে তিনি মাঠে ছিলেন। খোঁজ রাখেন নেতাকর্মীদের। মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে তার কর্মী-সমর্থক রয়েছে। এলাকায় অন্তত গোটা পঁচিশ স্কুল করেছেন সরকারেরা। সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি টঙ্গীর খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসান সরকারের হাতে তৈরি প্রতিষ্ঠান। তার এসব সামাজিক কর্মকাণ্ড আর এলাকার মাটি কামড়ে পড়ে থাকাকে এবার দল বিবেচনা করেছে বলে জানান হাসান সরকার। তিনি বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে কাজ করার জন্য বলছে। আমি কাজ করছি।’

জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে দু’জনের দ্বন্দ্বের বিষয়টি উদ্বেগের। এ জন্য মান্নান ও হাসান সরকারের দ্বন্দ্ব মেটাতে দলের সিনিয়র নেতারা কাজ করছেন। তারা আশা করছেন এ দ্বন্দ্ব মিটে যাবে। গত সিটি নির্বাচনের মতো এবারও সবাই এক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে। গাজীপুর সিটি নির্বাচন পরিচালনায় একটি কমিটিও গঠন করা হবে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন গঠিত। এখানে মোট ভোটার ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৫ জন। খুলনা সিটি কর্পোরেশন গঠিত ৩১টি সাধারণ এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে। এখানে ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৪। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৩ সালের ৬ জুলাই। সে নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এমএ মান্নান টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে তিন লাখ ৬৫ হাজার ৪৪৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে পেয়েছিলেন দুই লাখ ৫৮ হাজার ৮৬৭ ভোট। এক লাখ ছয় হাজার ৫৭৭ ভোটের বিশাল ব্যবধানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কাছে হারতে হয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে।

অপর দিকে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সর্বশেষ ভোট হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৫ জুন। সে নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি আনারস প্রতীকে মোট ভোট পেয়েছিলেন এক লাখ ৮০ হাজার ৯৩। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক তালা প্রতীক নিয়ে পেয়েছিলেন এক লাখ ১৯ হাজার ৪২২ ভোট। সেবার ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হওয়ায় এবার মেয়র পদে নির্বাচনে আগ্রহ ছিল না তালুকদার আবদুল খালেকের। তবে হাইকমান্ডের পছন্দের তালিকায় তার নাম রয়েছে।

২০১৩ সালের ৬ জুলাই অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। সে সময় নির্বাচন কমিশনে তার প্রার্থিতা বাতিল হলে উচ্চ আদালতে রিট করে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও ব্যালটে আনারস প্রতীকে বিপুলসংখ্যক ভোট পান জাহাঙ্গীর। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান হারার পেছনে জাহাঙ্গীরের নিষ্ক্রিয়তা, স্থানীয় দলীয় এমপিদের নীরব ভূমিকা ছিল অন্যতম কারণ।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version