এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : সড়ক উন্নয়নের মাত্র ৪৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকার ছোট্ট একটি প্রকল্প। তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ছোট্ট ওই প্রকল্প যখন শেষ হয় তত দিনে পেরিয়ে গেছে ১২ বছর। অর্থাৎ সময় লেগেছে প্রায় চারগুণ। আর এই সময়ে এতে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে ছিলেন ২৩ জন। শেষ পর্যন্ত ব্যয় ১১৯ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ১০৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকায়। সরকারের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) মূল্যায়নে উঠে এসেছে এ চিত্র।
১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সায়েদাবাদ-ডেমরা সড়কের উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ এবং ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডেমরা-আমুলিয়া (শেখের জায়গার সংযোগস্থল)-রায়পুরা সড়ক নির্মাণের উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২৫ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। তবে প্রকল্পটির কাজ ২০০৩ সালে শুরু হয়ে ২০০৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার ছিল। কিন্তু অনুমোদনে দেরি এবং নির্ধারিত মেয়াদে বাস্তবায়ন শেষ না হওয়ায় ব্যয়বৃদ্ধি ছাড়াই ২০০৮ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। পরে সংশোধনীর মাধ্যমে ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ এবং ব্যয় বাড়িয়ে ৯৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা করা হয়। কিন্তু এই বর্ধিত সময়েও প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় আবারও ব্যয় বৃদ্ধি না করে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ পর্যায়ে ভূমি অধিগ্রহণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ আন্তঃখাত সমন্বয় করে। পরে আবারও মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত। এর মধ্যেও কাজ শেষ করতে না পারায় দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এতে প্রকল্পের ব্যয় ১০৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং মেয়াদ ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত ব্যয় হয় ১০৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। পরে আবারও মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৫ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ করা হয়। সবমিলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় লেগেছে ১২ বছর।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ২৩ জন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ছিলেন। শুরুতে প্রকল্প পরিচালক ছিলেন ঢাকা জোনের অ্যাসিস্ট্যান্ট চিফ ইঞ্জিনিয়ার আফজাল হোসেন। এরপর একে একে আসেন আদম আলী, নুরুল আরেফিন, মোজ্জাম্মেল হক, আসমত উদ-দৌল্লা, আবদুল ওদুদ, গাজী গোলাম মোস্তফা, তরুণ তপন দেওয়ান, খুরশিদ আলম, আবারও তরুণ তপন দেওয়ান, শাহাবুদ্দিন খান, এএসএম সিরাজুল ইসলাম, আবারও শাহাবুদ্দিন খান, তরুণ তপন দেওয়ান, সিরাজুল ইসলাম খান, বায়েজিদ, সোহরাব উদ্দিন মিয়া, শাহাবুদ্দিন খান, আবদুল কুদ্দুস, মফিজুল ইসলাম, হাবিবুল হক ও আফতাব হোসেন খান। ঘন ঘন প্রকল্প পরিচালক বদলি হওয়ায় তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। যথাযথ তদারকির অভাবে প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিঘ্নিত হয়েছে। তাছাড়া এ অবস্থায় যথাযথ গুণগত মান ধরে রাখা সম্ভব হয় না। জনগণ যথাসময়ে সুফল প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব মফিজুল ইসলাম বলেন, সাধারণত এক প্রকল্পে এত পিডি থাকার কথা নয়। বর্তমানে পিডি নিয়োগের নীতিমালা করা হয়েছে। যাতে এরকম না হয় সেদিকে সতর্ক রয়েছে সবপক্ষই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মূল্যায়ন করি প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেই। কিন্তু এ প্রকল্পের বিষয়ে কী ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেটি আমার জানা নেই।
সড়ক ও জনপথের ঢাকা জোনের এডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর এ বিষয়ে রোববার বলেন, আগে সাধারণ নিয়ম ছিল যে কোনো প্রকল্প হলেই চিফ ইঞ্জিনিয়াররা প্রকল্প পরিচালক থাকতেন। ফলে তাদের বদলি হতো ঘনঘন এবং একজন এডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার অনেক প্রকল্পের দায়িত্বে থাকতেন। তাই এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে এতবার পিডি বদল হয়েছে। তবে এতে প্রকল্পের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার কথা নয়। তিনি জানান, বর্তমানে এ অবস্থা কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। বড় প্রকল্প হলে একজনই দায়িত্বে থাকেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাস্তা নির্মাণের এক বছরের মধ্যে ২০১৬ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রকল্পটি পরিদর্শন করে আইএমইডি। কিন্তু এরই মধ্যে প্রকল্পের আওতায় নির্মিত সেতুর রেলিং কালভার্টগুলোর কংক্রিট দুর্বল হয়ে গেছে। সড়ক বাঁধের কিছু কিছু স্থানে রেইন কাট (বৃষ্টির পানি যাওয়ায় ভাঙা) সৃষ্টি এবং খাড়া ঢাল দেখা গেছে। তাছাড়া সড়ক বাঁধের কিছু স্থানে ঢাল যথাযথ পাওয়া যায়নি। শেখের জায়গা সংযোগ সড়কে গর্ত, ডেমরা-আমুলিয়া-রায়পুরা সড়কের ব্রিজ পরবর্তী অংশে ফাটল দেখা যায়। নির্মিত ফুটপাতের বাজার অংশে পর্যাপ্ত ড্রেনের সংস্থান না থাকায় কিছু অংশে পানি উপচে পড়তে দেখা গেছে। প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির এ অবস্থার পেছনে যেসব কারণ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, এডিপিতে অর্থ বরাদ্দের স্বল্পতা, ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা ও ভূমির মূল্য অত্যধিক বৃদ্ধি, বারবার প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন ইত্যাদি।