এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুত সম্পাদনের আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেছে ভারত। সোমবার ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়। এদিকে ঢাকায় একটি সেমিনারে বক্তৃতাকালে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলে বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে মিয়ানমারকে অনুরোধ জানাবে ভারত।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সোমবার পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক। ভারতের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলে। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। গোখলে গত ২৯ জানুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি রোববার তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসেন। বাংলাদেশে এটি তার প্রথম সফর। তিনি সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গেও তিনি সাক্ষাৎ করেছেন। এ ছাড়া সোনারগাঁও হোটেলে তিনি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিষয়ে এক সেমিনারে বক্তব্য দেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী।

পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠকের পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছয়টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। এমওইউগুলো হচ্ছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উর্দু চেয়ার স্থাপনে ভারতের সহায়তা, ভারত থেকে ডিজেল আমদানিতে পার্বতীপুর ও শিলিগুড়ির মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন স্থাপন, বাংলাদেশে ৫০৯টি স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনে ২৫ কোটি টাকা অনুদান, রংপুর সিটির রাস্তা উন্নয়নে ২৫ কোটি টাকা অনুদান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পরমাণু সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ বেতার ও প্রসার ভারতির মধ্যে সহযোগিতা সংক্রান্ত এমওইউ।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দু’দেশের পররাষ্ট্র সচিব উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য দেন। তবে তারা সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটসহ বৈঠকে আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। বৈঠকের ফলে আমরা খুবই খুশি। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ভারত সহায়তা দেবে। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। ভারত আশ্বাস দিয়েছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিস্তা চুক্তি সই হবে।’ সচিব আরও জানান, বাণিজ্য, কানেকটিভিটি প্রভৃতি সব বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলে তার বক্তব্যে তিস্তার নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা অবিস্মরণীয় অগ্রগতির উল্লেখ করেছি; তবে আমরা কতিপয় অমীমাংসিত ইস্যুর ব্যাপারে সজাগ। আমরা আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে, এসব ইস্যুর নিষ্পত্তি করতে আমরা প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত প্রত্যাবাসন চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে অনুরোধ জানাব। রাখাইন রাজ্য থেকে লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় কাজ করেছে। বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রত্যাবাসনসহ এ সংকট নিরসনে সব ধরনের পদক্ষেপকে ভারত সমর্থন করে। বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন দিতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ত্রাণ হিসেবে আমরা তিন লাখ মানুষের জন্যে ত্রাণ পাঠিয়েছি। মিয়ানমারকেও ফিরে যাওয়া মানুষের জন্যে অস্থায়ী গৃহ নির্মাণসহ আর্থসামাজিক সহায়তা দিচ্ছি। কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে আমরা ত্রাণের দ্বিতীয় চালান পাঠাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ উভয়ই একত্রে মোকাবেলা করব। সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা একত্রে লড়ব।’ এ সময় তিনি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের নানা দিক বিশেষ করে বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, জনগণের পর্যায়ে যোগাযোগের বিষয়ে আলোকপাত করেন। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশকে এ পর্যন্ত ৮০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে ভারত। এটা একক কোনো দেশকে দেয়া ভারতের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ঋণ। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ তিন গুণ বেড়েছে। ২০০৮-০৯ সালে বাণিজ্য ছিল দুই দশমিক ৭৫ ডলার। ২০১৬-১৭ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। ভারত এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিক্রি করেছে। আগামী জুন নাগাদ আরও ৫০০ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রফতানি করবে ভারত। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে ১৪ লাখ ভিসা ইস্যু করেছে।

অনিষ্পন্ন ইস্যুর নিষ্পত্তি চান গওহর রিজভী : প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনিষ্পন্ন ইস্যুগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘অনিষ্পন্ন ইস্যুগুলো নিষ্পত্তির প্রচেষ্টা জোরদারের এখনই সময়। তারপর আমরা আরও বৃহত্তর সহযোগিতায় যাব। আমাদের গতি বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের ধীরে চলার সময় নেই। আমাদের উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরালো করতে হবে। বাংলাদেশ -ভারত সম্পর্ক বিষয়ক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। দি ইন্সটিটিউট ফর পলিসি, অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (আইপ্যাক) আয়োজিত এ সেমিনারে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলেও বক্তব্য দেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version