এতদিন পূর্ব গৌতায় সিরীয় সরকারের অমানবিক ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সে বিষয়ে নীরব ছিল। এবার হঠাৎ বাশার সরকারের রাসায়নিক হামলার পর তারা কড়া প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছে। এর পেছনে অন্য কারণ রয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতের ভয়াবহতম ওই হামলার মাধ্যমে পূর্ব গৌতা অঞ্চলটি দখলের কাছাকাছি চলে এসেছে বাশার আল আসাদের সরকার। তাদের সহযোগিতা করছে ইরান সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়া ও রাশিয়ার বিমান হামলা। ভয়াবহ এই হামলায় দুই মাসেরও কম সময়ে নিহত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। সর্বশেষ গত শনিবারও রাসায়নিক গ্যাস হামলায় নিহত হয়েছে প্রায় একশো লোক।
সরকারি বাহিনী ও তাদের বিদেশী মিত্রদের এই হামলার কারণে পূর্ব গৌতার প্রধান বিদ্রোহী গ্রুপ জইশ আল ইসলাম ঘোষণা দিয়েছে তারা এলাকাটি ছেড়ে যেতে প্রস্তুত। সরকারের দাবি অনুযায়ী বন্দীদের মুক্তি দিতেও রাজি হয়েছে তারা। সিরিয়ার সরকারপন্থী টিভি চ্যানেল আখবারিয়া বলেছে, ‘গত রোববার রাতে বিদ্রোহী যোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিতে শতাধিক বাস এসেছে পূর্ব গৌতায়। প্রাথমিকভাবে তারা জারাবলুস যাবে।’
তা সত্ত্বেও এতদিন সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ মারণাস্ত্র ব্যবহার ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র নীরব ছিল; কিন্তু এবার তারা কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ‘পশু’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ ধরনের অমানবিক রাসায়নিক হামলার জন্য বিরাট মূল্য দিতে হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন।
মাত্র এক বছর আগেও সিরিয়ার বিমান ঘাঁটিতে কয়েক ডজন ক্রুজ মিসাইল হামলা চালাতে তার বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার তিনি তার টুইটার পোস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে এ হামলার জন্য দায়ী করেছেন। বলেছেন, ‘সিরিয়ার সেনাবাহিনী নৃশংসতায় মেতে আছে এবং বহির্বিশ্বকে সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। পশু বাশারকে সমর্থন দেয়ার জন্য দায়ী প্রেেিসডন্ট পুতিন, রাশিয়া ও ইরানকে চড়া মূল্য দিতে হবে। চিকিৎসা সেবা ও পর্যবেক্ষণের জন্য এলাকাটি দ্রুত খুলে দিন। অযথাই আরেকটি মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনলো। এরা অসুস্থ!’
সিরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দেয়ার অল্পদিন পরেই ট্রাম্পের এই বক্তব্য এলো। তবে সেই ঘোষণায় তার উদ্দেশ্য ছিল আইএসের বিরুদ্ধে তথাকথিক লড়াই শেষ করা। গৌতা সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের শুরুর দিকে রাজধানী দামেস্ক চার দিক থেকে ঘিরে রেখেছিল বিরোধীরা। রাজধানীর শহরতলীগুলো ছিল বিভিন্ন বিরোধী গ্রুপের দখলে, যাদের সরাসরি সহযোগিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও উপসাগরীয় দেশগুলো বিশেষ করে সৌদি আরব। দেশব্যাপী সরকারের আধিপত্য কমাতে এই অবরোধ ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
ইসরাইল সে সময় পুরোপুরি ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ নীতি গ্রহণ করেছিল। সে সময় সিরীয় সরকার ও ইরানি মিলিশিয়াদের ওপর বিরোধীদের এমন অবরোধে তারা খুশি হয়েছিল। কারণ তাদের প্রধান উদ্বেগ ছিল ইসরাইল অধিকৃত ভূখণ্ডগুলোর দিকে ইরানের অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে। অতএব সিরীয় বিমান ঘাঁটিতে সর্বশেষ এই বিমান হামলায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। সোমবার সিরিয়ার একটি বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে রাশিয়া ও সিরীয় সরকার। মেইল অনলাইন জানিয়েছে, ইসরাইলের এই বিমান হামলার কথা যুক্তরাষ্ট্র জানত।
ইসরাইলি বাহিনী লেবাননের আকাশসীমা থেকে এই হামলা চালিয়েছে বলে দেশ দু’টি বলেছে। লেবাননের কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী নিশ্চিত করেছেন যে, ইরসাইলি বিমান দেখা গেছে তাদের আকাশে। যুদ্ধ পর্যবেক্ষণবিষয়ক একটি গ্রুপ বলেছে, ইরানি নাগরিকসহ ১৪ জন নিহত হয়েছে ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায়।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, হোমস প্রদেশের টি-ফোর বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে দু’টি ইসরাইলি বিমান। তারা আটটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। রাশিয়ার সেনারা তার মধ্যে পাঁচটি ভূপাতিত করেছে, অন্য তিনটি ঘাঁটির পশ্চিম দিকে আঘাত হেনেছে। টি-ফোর বিমান ঘাঁটিটি ইরানি ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সিরীয় সরকার যদি পূর্ব গৌতা পুরোপুরি দখলে নিতে পারে, ইসরাইল সেটিকে তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখতে পারে। একই সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো মনে করবে রাশিয়া শিগগিরই সিরিয়ার রাজধানী থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত রুটটি পুরোপুরি বিদ্রোহীদের হাত থেকে মুক্ত করতে পারবে, যা তাদের জন্য বেশ বিব্রতকর বিষয় হবে। সূত্র : ডেইলি সাবাহ