এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা’র (পর্যালোচনা) জন্য শিগগির উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি হচ্ছে। আজ-কালের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়া গেলে শিগগির কোটা পর্যালোচনা সংক্রান্ত কমিটির আদেশ জারি করা হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটি গঠিত না হলেও ইতিমধ্যে নিজস্ব উদ্যোগে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ যাত্রায় মুক্তিযোদ্ধা ও নারী কোটা কিছুটা কমতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান নিজ দফতরে বলেন, বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংস্কার বা পর্যালোচনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কমিটি এখনও গঠিত হয়নি। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিজস্ব উদ্যোগে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। কমিটি গঠনের প্রস্তাব শিগগির প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। অনুমোদনসাপেক্ষে কাল-পরশুর (বুধ ও বৃহস্পতিবার) মধ্যে এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হবে। এরপরই কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবে। আশা করি, সরকার নির্ধারিত (৭ মে) সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দিতে পারবে কমিটি। জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগের সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিধি), সরকারি কর্ম কমিশনসহ (পিএসসি) সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান। সেখানে কোটা সংক্রান্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্প্রতি জারি করা প্রজ্ঞাপন ও গত মন্ত্রিসভার বৈঠকের নির্দেশনা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। সেখানে গত কয়েক বছরে পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ ও কোটাপূরণ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে বিসিএস ও সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা ও নারী কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ার তথ্য-উপাত্ত নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। তবে বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বশীল কেউই মুখ খুলতে রাজি হননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিগত কয়েকটি বিসিএস ও সরকারি চাকরির নিয়োগ ও কোটা পূরণ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে কোটার বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছে সরকারের শীর্ষমহল। যেসব কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না সেগুলোর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা ও নারী কোটা কম-বেশি করার সিদ্ধান্ত হতে পারে।

জানা গেছে, কোটার কারণে প্রশাসনে হাজার হাজার পদ খালি থাকছে। ২৮ থেকে ৩২তম ৫টি বিসিএসের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যোগ্যপ্রার্থী না থাকায় প্রাধিকার কোটার ৪ হাজার ২৮৭টি পদ খালি রাখতে হয়েছে। এর মধ্যে ২৮তম বিসিএসে ৮১৩টি, ২৯তম বিসিএসে ৭৯২টি, ৩০তম বিসিএসে ৭৮৪টি, ৩১তম বিসিএসে ৭৭৩টি পদ শূন্য ছিল। কোটার শূন্যপদগুলো পূরণ করতে মুক্তিযোদ্ধা, আদিবাসী ও মহিলাদের জন্য ৩২তম বিশেষ বিসিএস নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পিএসসি। ওই বিসিএসেও এক হাজার ১২৫টি পদ শূন্য রাখতে হয়। শেষ পর্যন্ত ৩৩তম বিসিএসের মাধ্যমে তা পূরণের সিদ্ধান্ত হয়। অথচ ৩২তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ৯১২ জনই চাকরির সুযোগ পাননি। কারণ এক কোটা থেকে আরেক কোটায় নিয়োগ দেয়া যায় না। এর আগে ২০০৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৮৩৩টির মধ্যে ৭৭৮টি, ২০০৫ সালে এক হাজার ৮৫৪টির মধ্যে এক হাজার ৫০৮টি, ২০০৬ সালে ৭৫৪টির মধ্যে ৫৯৮টি এবং ২০০৭ সালে ৭০৯টির মধ্যে ৬৩৭টি পদ খালি রাখতে হয়েছিল এই কোটার কারণেই।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধার ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনি, নারী, জেলা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (উপজাতি), প্রতিবন্ধী, আনসার ও ভিডিপি, পোষ্য, খেলোয়াড়, এলাকা ও বোনসহ ২৫৭ ধরনের কোটা বিদ্যমান। এসব কোটা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসসহ (বিসিএস) সরকারি চাকরি এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতেও প্রয়োগ করা হয় এসব কোটা। বিসিএসে মেধা তালিকা থেকে ৪৪ শতাংশ নিয়োগ হয়। বাকি ৫৬ শতাংশ আসে কোটা থেকে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য (ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনি) ৩০, মহিলা ১০, জেলা ১০ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (উপজাতি) ৫। এ ছাড়া এসব কোটা পূরণ না হলে, সেখানে ১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রতিবন্ধীর জন্য। আর যদি সংশ্লিষ্ট চাকরির ক্ষেত্রে এসব প্রাধিকার কোটা পূরণ হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে মেধা তালিকা থেকে প্রতিবন্ধীর কোটা পূরণ করা হয়। এ ছাড়া নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও একই কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মেধা তালিকা থেকে ৩০ শতাংশ এবং বাকি ৭০ শতাংশ পূরণ করা হয় কোটা থেকে। এই কোটার মধ্যে শতাংশ হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা ৩০, মহিলা ১৫, আনসার ও ভিডিপি ১০, অনাথ ও প্রতিবন্ধী ১০ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫।

‘বিদ্যমান এ কোটার কোনটি কমতে বা বাড়তে পারে’- এমন প্রশ্নের জবাবে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাননি ড. মোজাম্মেল হক খান। তিনি বলেন, ‘কোটা নিয়ে সরকারের সর্বশেষ আদেশে বলা হয়েছে কোটায় যদি যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া যায় তাহলে মেধা তালিকার শীর্ষ হতে তা পূরণ করতে। এ কথা কেন বলা হয়েছে? কারণ কোনো কোনো টেকনিক্যাল পদ বা জায়গায় দেখা যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কোটার পদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। আগে এটা কেস টু কেস দেয়া হতো। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন যেহেতু একই ধরনের আবেদন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে আসছে তাই কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণ করতে হবে।’ তবে কোটা কোনটি বাড়বে বা কমবে তা বলার সময় এখনও হয়নি। বিষয়টি পর্যালোচনা করতেই কমিটি গঠন করা হচ্ছে। বিগত দিনে যেসব কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়নি সেগুলোর বিষয় কমিটি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে আবার নাও পারে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version