এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ট্রাম্প ২০১৭ সালে রাসায়নিক হামলার প্রতিক্রিয়ায় অনেকটা প্রতীকী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিলেন সিরিয়ায় কিন্তু এবারের হামলা বেশ ব্যাপকভিত্তিক হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ হামলার সম্ভাব্য টার্গেট কী হতে পারে?
২০১৭ সালে খান শেইখুনে রাসায়নিক অস্ত্রের হামলার পর ট্রাম্প সিরিয়ার যে বিমানঘাঁটি থেকে ওই হামলা চালানো হয়েছিল সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের নির্দেশ দেন। ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত মার্কিন যুদ্ধজাহাজ থেকে ৫৯টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সে সময় শাইরাত বিমানঘাঁটির রানওয়ে ও হ্যাঙ্গার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে দ্রুত এসব ক্ষতি মেরামত করা হয়। ওই হামলা ছিল অনেকটা প্রতীকী।
এবার ট্রাম্প যদি হামলার নির্দেশ দেন তাহলে তা সম্ভবত অনেক ব্যাপকভিত্তিক হবে। ট্রাম্প যদি মনে করেন যে, তার নিজস্ব রেডলাইন অতিক্রম করা হয়েছে সেক্ষেত্রে তিনি নিজেকে একজন শক্তিমান হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করবেন। আগেই ফ্রান্স ঘোষণা করেছে যে, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে তা প্রমাণিত হলে তারা সিরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এই দ্বিতীয় দফা হামলার সম্ভাব্য টার্গেট হবে সিরিয়ার বিমানঘাঁটি ও দেশটির বিমান বাহিনী। সিরিয়ার বিমান বাহিনীতে রাশিয়ার জঙ্গি বিমান বেশি। এর আগে ইসরাইলি হামলায় সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
পশ্চিমাদের সামরিক সক্ষমতা কতখানি
পূর্ব ভূমধ্যসাগরে যুদ্ধোপযোগী বেশ শক্তিশালী নৌবহর মোতায়েন করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে তাদের বিপুলসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। কাতারে বিপুলসংখ্যক জঙ্গি বিমান এবং উপসাগরীয় এলাকায় বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ রয়েছে। আইএসের ওপর বোমাবর্ষণের জন্য এগুলো মোতায়েন করা হয়েছিল।
ইরাক বা সৌদি আকাশ সীমা দিয়ে সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে হামলা চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। সেই কারণে এর বিকল্প ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ এগুলোকে গুলি করে ভূপাতিত করা কঠিন হবে। পশ্চিম দিক থেকে হামলা হলে সমস্যা কম হবে। ফ্রান্সের জেটগুলো ফ্রান্সের বিমানঘাঁটি থেকে উড়ে এসে সিরিয়ায় আঘাত হানতে পারবে। আর সাইপ্রাসে ব্রিটেনের ঘাঁটি রয়েছে, যা সিরিয়ার খুবই কাছে অবস্থিত। ফ্রান্স এ ঘাঁটিও ব্যবহার করতে পারবে।
ব্রিটেনের ক্ষমতা
মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটেনের বড় বাহিনী ও অস্ত্রশস্ত্র, জঙ্গি বিমান ও ড্রোন মোতায়েন রয়েছে, যা আইএসবিরোধী হামলায় জড়িত রয়েছে। তারা সহজে সিরিয়ার লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে ব্যবহার করতে পারবে। ব্রিটেনে টর্নেডো জঙ্গি বিমান নিচু হয়ে উড়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে। হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত রয়েছে তাদের ড্রোনে। গত কয়েক সপ্তাহে পূর্ব ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। যেকোনো হামলা হলে ব্রিটেন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগ দেবে বলে ইতোমধ্যে আভাস দিয়েছে।
রাশিয়া ও সিরিয়ার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে?
গত মার্চে ইসরাইলি হামলায় সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি হলেও তা এখনো বেশ হুমকি হয়ে রয়েছে। তার পুরনো ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর গতি আধুনিক জঙ্গি বিমানের চেয়ে বেশি। ৪৫ বছরের পুরনো এমনই এসএ-ফাইভ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে একটি ইসরাইলি এফ-১৬ জঙ্গি বিমান ভূপাতিত হয়।
তবে ভূমিতে অবস্থিত লক্ষ্যবস্তুর উদ্দেশ্যে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে সিরিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা খুব একটা কার্যকর হবে না। এর আগেও অন্তত এক শ’ ইসরাইলি হামলা হয়েছে, যাতে একবারের জন্যও তাদের বিমানে আঘাত করতে পারেনি সিরিয়া।
বড় প্রশ্ন হচ্ছে রাশিয়া তাদের অত্যাধুনিক এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই যুদ্ধে ব্যবহার করবে কি না। এক বছরেরও বেশি সময় আগে সিরিয়া এস-৪০০ মোতায়েন করেছে। এই ব্যবস্থাটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। আগের হামলার সময় রাশিয়া মাঝে মধ্যে এই প্রযুক্তি চালু করলেও সেটি ব্যবহার করেনি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের হুঁশিয়ারি প্রমাণ করে এবার আক্রমণ হলে পরিস্থিতি ভিন্নরকম হতে পারে।
সিরিয়ার বিদ্রোহীরা কী চায়?
সিরিয়ার বিরোধীরা এখন বেকায়দায় আছে। বিমান হামলা প্রতিরোধ করার কোনো প্রযুক্তি তাদের হাতে নেই। এখন দক্ষিণাঞ্চলীয় দিরা ও উত্তরের ইদলিবই শুধু তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেখানেও অবশ্য উগ্রপন্থীদের হাতে রয়েছে কিছু এলাকা। ছয় বছর ধরেই বিরোধী নেতারা বারবার বিমান হামলা বন্ধের জন্য নো ফাই জোন চালু করার দাবি করেছেন।
রাশিয়া ও সিরিয়ার যুদ্ধবিমান বারবার বাশারবিরোধী যোদ্ধাদের পরাজিত করতে বিমান হামলা চালিয়েছে, পূর্ব গৌতা যার সর্বশেষ উদাহরণ। সিরিয়ার আকাশসীমার অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। বিদ্রোহীরা এখনো বাশার সরকারকে হটানোর স্বপ্ন দেখে। তাই সিরিয়ার বিমান বাহিনী দুর্বল হলে সেটি হবে তাদের জন্যও সবচেয়ে বড় পাওয়া।
সূত্র : গার্ডিয়ানসিরিয়ায় ব্যাপক মার্কিন হামলা হতে পারে

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version