এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে উত্তেজনার পর শেষপর্যন্ত গত শুক্রবার রাতে সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার প্রধান দুই মিত্রদেশ যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স।

পশ্চিমা এ দেশগুলোর ভাষ্য- সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকার যাতে আর কখনও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করতে না পারে, সে উদ্দেশ্যেই এ হামলা। উদ্দেশ্য যা-ই হোক না কেন, এ হামলার সত্যিকারের প্রভাব দেখা যাবে মস্কোয়।

বিশেষ করে মস্কোর সঙ্গে পশ্চিমাদের সম্পর্কতে। রোববার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সিএনএন বলেছে, সিরিয়ায় হামলার আসল প্রভাব পড়বে মস্কো ও পশ্চিমা দেশগুলোর পড়ন্ত সম্পর্কের ওপর। পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে একীভূতকরণের পর পশ্চিমের সঙ্গে নতুন করে মস্কোর যে বৈরিতা সিরিয়ায় অবৈধ সামরিক হস্তক্ষেপে তা আরও ঘনীভূত হবে।

গত ৭ এপ্রিল সিরিয়ার পূর্ব ঘৌটার দুমা শহরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর রাসায়নিক গ্যাস হামলার অভিযোগ ওঠে। ভয়াবহ এ হামলার জন্য কে দায়ী, এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ চলে আসছিল। এক্ষেত্রে উভয় দেশের ভাষা ছিল নাটকীয়, এমনকি দায়িত্বহীন। ফলে দেশ দুটির সম্পর্ক স্মরণকালের মধ্যে তলানিতে গিয়ে ঠেকে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি এতদিন সমীহ কথা বলে এলেও এক টুইটার বার্তায় মস্কোর সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্কের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কোনো রাখঢাক না রেখে তিনি বেশ কড়া ভাষায় দুমার ঘটনায় সরাসরি রাশিয়া ও ইরানকে দায়ী করেন।

দুমায় হামলার জবাব কী হবে সে ব্যাপারে এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘রাশিয়া বলেছে, সিরিয়ার দিকে মিসাইল পাঠালে তা ভূপাতিত করা হবে। তাহলে প্রস্তুত হও রাশিয়া। মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আসছে। সেগুলো সুন্দর, নতুন আর আধুনিক।’

রাসায়নিক গ্যাস হামলার ব্যাপারে রাশিয়া বলেছে, ‘যুক্তরাজ্যের পরিকল্পনায় দুমায় রাসায়নিক হামলার ঘটনা মঞ্চস্থ করা হয়েছে।’ রাশিয়াও যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা হুমকি দেয়। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে অতীতে পশ্চিমা হস্তক্ষেপের ফল কী হয়েছে, তাও স্মরণ করিয়ে দেয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প জয়ী হলে মস্কো খুশি হয়েছিল। ট্রাম্পও রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু সিরিয়ায় ট্রাম্পের হঠকারিতায় মস্কো-রাশিয়া সম্পর্ক এখন হতাশায় পর্যবসিত হয়েছে।

সিরিয়া বিষয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ভিন্ন। তা সত্ত্বেও জি-২০ সম্মেলনের সময় দুই দেশ কিছু বিষয়ে একমত হয়েছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পুরোই উল্টো। ট্রাম্পের হবু পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সম্প্রতি রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন। রাশিয়ার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নরম মনোভাব থাকবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি রাশিয়ার বিরুদ্ধে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক এক রুশ গুপ্তচরকে হত্যাচেষ্টা বিতর্কে উভয়ে পক্ষই একে অন্যের বহু কূটনীতিক বহিষ্কার করে। এতেও বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে দেশ দুটির সম্পর্কে। সর্বশেষ সিরিয়ায় হামলার ঘটনা মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার বৈরিতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version