এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করতে চায় শ্রীলংকার ‘হাটন ন্যাশনাল ব্যাংক’ (এইচএনবি)। সোমবার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠক করেছে রিটেইল ব্যাংকিংয়ে বিশেষভাবে পরিচিত ব্যাংকটির প্রতিনিধি দল। ওই বৈঠকে গভর্নরের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে কার্যক্রম চালাতে এইচএনবিকে ইতিবাচক বার্তা দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকের পাশাপাশি কার্যক্রম চালাচ্ছে ৪০টি বেসরকারি ব্যাংক। এর বাইরে কার্যক্রমে আছে নয়টি বিদেশী ব্যাংক। সব মিলিয়ে দেশে ব্যাংকের সংখ্যা এখন ৫৭। আরো একটি বিদেশী ব্যাংকের দেশে আসার আগ্রহকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে এ মুহূর্তে নেতিবাচক প্রচারণা চলছে। তার পরও বিদেশী একটি ব্যাংক বাংলাদেশে কার্যক্রম চালানোর আগ্রহ প্রকাশ করা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। এটি বহির্বিশ্বের কাছে আমাদের অর্থনীতির জন্য শুভবার্তা দেবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান এ প্রসঙ্গে বলেন, একটি বিদেশী ব্যাংক বাংলাদেশে কার্যক্রম চালাতে চাইলে বাজার সম্পর্কে তাদের জানাশোনা দরকার। শ্রীলংকান ব্যাংকটির প্রতিনিধি দল আমাদের অর্থনীতির বিদ্যমান পরিস্থিতি জানতেই এসেছিল। তারা আমাদের অর্থনীতি, ব্যাংকিং খাত, মুদ্রাবাজার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছে।

ব্যাংকটির কার্যক্রম অনুমোদনের বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যাংকটির স্ট্রেন্থ কতটুকু, শ্রীলংকার সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও পরিধি, ব্যাংকটিকে অনুমোদন দিলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আমাদের উপকার ও ক্ষতি, এসব কিছু যাচাই-বাছাই করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এইচএনবিকে অনুমোদন দেয়া হবে কিনা, এটি এ মুহূর্তে বলা কঠিন। আমাদের অর্থনীতি যে এগোচ্ছে— বিদেশী ব্যাংক আমাদের দেশে কার্যক্রম চালানোর আগ্রহ প্রকাশ করার মাধ্যমে তার স্বীকৃতি মিলছে।

হাটন ন্যাশনাল ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটি ২৫১টি শাখা নিয়ে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকায় কার্যক্রম চালাচ্ছে। ব্যাংকটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দ্য ব্যাংকার ম্যাগাজিন কর্তৃক ২০০৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ‘বেস্ট রিটেইল ব্যাংক ইন শ্রীলংকা’র স্বীকৃতি পেয়ে আসছে। এছাড়া দ্য ব্যাংকার ম্যাগাজিন প্রকাশিত বিশ্বের এক হাজার শীর্ষ ব্যাংকের তালিকায় এইচএনবি স্থান পেয়েছে। ব্যাংকটি রিটেইল, করপোরেট, ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ট্রেজারি ও প্রজেক্ট ফিন্যান্সিংয়ে বিনিয়োগ করে থাকে।

বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনকারী বিদেশী ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো ব্যবসা করছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ। প্রায় ৯৪ শতাংশ খেলাপি ঋণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি আর্থিক বিপর্যয়ে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে কার্যক্রম সীমিত করে নিচ্ছে এইচএসবিসি ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। বিদায়ী বছরে এ দুটি ব্যাংক দেশের বিভিন্ন শহরের আটটি শাখা বন্ধ করে দিয়েছে। এর মধ্যে এইচএসবিসি বন্ধ করে দিয়েছে ছয়টি শাখা। খারাপ অবস্থানে থাকা স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া দুটি শাখা বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া কার্যক্রম সীমিত করে এনেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিটি ব্যাংক এনএ।

এ অবস্থায় বিদেশী ব্যাংকের অনুমোদনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে নয়টি বিদেশী ব্যাংক কার্যক্রম চালাচ্ছে। এর মধ্যে এইচএসবিসি, সিটি ব্যাংক এনএর মতো বড় ব্যাংক কার্যক্রম সীমিত করে আনছে। এ অবস্থায় কাজের ক্ষেত্র, লাভ-ক্ষতির সমীক্ষা করেই ব্যাংকের অনুমোদন দিতে হবে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version