এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : রাজধানীবাসীর বহুপ্রতীক্ষিত মেট্রোরেলের লাইন স্থাপনে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় দুটি পিয়ারের ওপর ভায়াডাক্ট বসানোর পর এখন আগারগাঁওয়ে দুটি পিয়ারে কংক্রিট ঢালাইয়ের প্রস্তুতি চলছে।

জোর গতিতে কাজ চলার কথা জানিয়ে ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক বলেছেন, আগামী জুন মাসে প্রকল্পের কাজ আরও বেশি ‘দৃশ্যমান’ হবে।

আগারগাঁওয়ে যে দুটি পিয়ারে কনক্রিট ঢালাই চলছে, সেগুলোর ওপরও ভায়াডাক্ট বসানো হবে। পিয়ারের ওপরে বসছে ভায়াডাক্ট, যার ওপর দিয়ে চলবে রেল।

ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের হালনাগাদ বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ১৫ ভাগ।

তবে গত ১৫ দিনে কাজ আরও এগিয়েছে বলে বাস্তব অগ্রগতি আরও কিছুটা বেশি বলে জানান প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কোম্পানির এমডি সিদ্দিক।

তিনি বলেন, “এখন খুব দ্রুত গতিতে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আপনি জুন মাসে গিয়ে দেখবেন যে পুরো প্রকল্প এলাকায় পিয়ার উঠে গেছে। আগারগাঁওয়ে দুটো পিয়ার ওঠানোর পরই আমরা সেখানে ভায়াডাক্ট বসিয়ে দেব। এরপর আবার যখন সামনে পিয়ার উঠে যাবে, আমরা সেখানে ভায়াডাক্ট বসাব। এভাবে দুদিক থেকে কাজ এগুতে থাকবে।”
২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালুর আশা দেখান অবসরপ্রাপ্ত এই সচিব।

তিনি বলেন, ২০২৪ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনায় এর কাজ আগে শেষ করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

“এজন্য আমরা স্পেশাল এফোর্ট নিলাম। প্ল্যান পরিবর্তন করলাম। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা এখন কাজ করছি। এখন যে গতিতে কাজ চলছে তাতে ২০১৯ এর ডিসেম্বরে আগারগাঁও এবং ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ শেষ করে আমরা মেট্রোরেল চালু করব।”

দিয়াবাড়ি গিয়ে দেখা যায়, ২২ নম্বর এবং ২৩ পিয়ারের ওপর ভায়াডাক্টের ‘প্রিকাস্ট সেগমেন্ট বক্স’ ওঠানো হয়েছে। তবে এগুলো এখনও জোড়া লাগানো হয়নি। নিচের সাপোর্টও খোলা হয়নি।

সেগমেন্টগুলো জোড়া লাগানোর পর তার নিচের সাপোর্ট খুলে ফেলা হবে বলে জানান প্রকল্প কর্মকর্তারা।

পুরো এলাকা দুপাশ থেকে কংক্রিটের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। ভেতরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কর্মীরা।

আগারগাঁও পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় পাইলিংয়ের কাজ চলছে। কোথাও নেওয়া হচ্ছে পাইলিংয়ের প্রস্তুতি। আগারগাঁওয়ের শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি পিয়ার বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন কর্মীরা।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, এ প্রকল্পটি আটটি প্যাকেজের আওতায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। এরমধ্যে ১ নম্বর প্যাকেজের আওতায় দিয়াবাড়ি এলাকায় ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের অক্টোবরে। এ বছরের জানুয়ারিতে এ কাজের ১০০ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে।

ডিপো এলাকার পূর্ত কাজ করা হচ্ছে প্যাকেজ-২ এর আওতায়। ২০১৭ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া এ কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৪ ভাগ।

প্যাকেজ ৩ এবং ৪ এর আওতায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভায়াডাক্ট এবং স্টেশন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৫ ভাগ।

আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভায়াডাক্ট এবং স্টেশন নির্মাণকাজ হচ্ছে প্যাকেজ ৫ এবং ৬ এর অধীনে। এ দুটি প্যাকেজের বাস্তব কাজ এখনও শুরু হয়নি। তবে পুরো প্রকল্প এলাকায় ভূমি জরিপ শেষ হয়ে গেছে।
প্রকল্পের বৈদ্যুতিক এবং মেকানিক্যাল সিস্টেম বাস্তবায়ন হচ্ছে ৭ নম্বর প্যাকেজের আওতায়। এ প্যাকজের আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়ন প্রতিবেদন জাইকার সম্মতির জন্য পাঠানো হয়েছে।

রেলের কোচ এবং ডিপোর যন্ত্রপাতি সংগ্রহের কাজ হচ্ছে প্যাকেজ ৮-এর অধীনে। এ প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৯ ভাগ বলে প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।

প্রকল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১২টি জরিপকাজের সবগুলোই শেষ হয়েছে। উত্তরা থেকে শাহবাগের বারডেম হাসপাতাল পর্যন্ত প্রকল্পের পরিষেবা স্থানান্তর (ইউটিলিটি রিলোকেট) হয়েছে।

প্রকল্প কাজের জন্য নির্ধারিত এলাকায় বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়ার কাজও শেষ। এছাড়া আগারগাঁও পর্যন্ত সড়কের মিডিয়ান অপসারণ করা হয়েছে।

আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি টেস্ট পাইলের মধ্যে সবগুলোর কাজ শেষ করা হয়েছে। টেস্ট পাইল করার পর মাটির মান পরীক্ষা করতে ৩৮৩টি চেকবোরিংয়ের মধ্যে ৩৬৩টি করা হয়েছে।
বাকি ২০টি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিদ্দিক।

“দুই হাজার ৩৭৮টি পাইলের মধ্যে ৭০৪টা শেষ হয়েছে। পাইলের ওপর বসবে পিয়ারক্যাপ। পিয়ারক্যাপের ওপর ৭৩১টি পিয়ার বসবে। পিয়ারের ওপর বসানো হবে ভায়াডাক্ট, যার ওপর দিয়ে মেট্রো ট্রেন চলবে।”

“আগারগাঁওয়ে আমরা পিয়ারক্যাপ বসিয়ে রেখেছি। পিয়ার বসাতে সর্বোচ্চ ১০-১৫ দিন লাগবে,” বলেন তিনি।

কোচের জন্যও ইতোমধ্যে আদেশ দেওয়া হয়ে গেছে বলে জানান সিদ্দিক।

“আমরা জাপানে অর্ডার দিয়েছি। সেখানে ট্রেন তৈরির কাজও চলছে। ট্রেনে লালসবুজের প্রাধান্য থাকবে।”

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version