এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : পার্লামেন্টের অনুমতি ছাড়াই সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সামরিক হামলায় অংশ নেয়ায় তোপের মুখে পড়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। হুজুগে হামলা করে এখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন তারা।

বিরোধীরা তো আছেই, নিজ দলের এমপি-মন্ত্রীরাও ছেড়ে কথা বলছেন না। সিরিয়ায় যুক্তরাজ্যের স্বার্থ কী- এ নিয়ে সারা ব্রিটেনেই প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন তেরেসা।

শেষ পর্যন্ত পার্লামেন্টেও এমপিদের কাছে জবাবদিহি করতে হয়েছে। ইস্টার উপলক্ষে ছুটি শেষে স্থানীয় সময় সোমবার বিকালে পার্লামেন্ট অধিবেশেনে যোগ দেন ব্রিটিশ এমপিরা। এ সময় পার্লামেন্টে ভাষণ এবং এমপিদের প্রশ্নের জবাব দেন তেরেসা।

শনিবার ভোর রাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের সঙ্গে সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রাগার লক্ষ্য করে একযোগে চালানো হামলায় অংশ নেয় ব্রিটেন।

দেশটির সেনাবাহিনীকে এ হামলায় অংশ নেয়ার নির্দেশ দেয়ায় সংসদ সদস্যদের তীব্র ক্ষোভের মুখোমুখি হয়েছেন তেরেসা।

যদিও এর আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়েছিলেন তিনি। সিরিয়ার হোমস শহরে একটি সেনাঘাঁটিতে আরএএফ টর্নেডো জিআর৪ যুদ্ধবিমান থেকে বোমা নিক্ষেপের কয়েক ঘণ্টা পর এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবিক কারণে হামলায় অংশ নিয়েছে তার দেশ।

এ অভিযানে সফল হয়েছে। সিরিয়া হামলার সফলতা দাবি করলেও দেশের ভেতরে বিরোধীদলীয় ব্যাপক সমালোচনার মুখে রয়েছে তেরেসা। অভিযান নিয়ে পার্লামেন্টে ভোটাভুটির দরকার ছিল বলে মন্তব্য করেন লেবারদলীয় নেতা জেরেমি করবিন।

শনিবার তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী দেশের পার্লামেন্টের কাছে দায়বদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের একগুঁয়েমির কাছে নয়।’ তিনি বলেন, ‘বোমা কখনও জীবন বাঁচাতে অথবা শান্তি আনতে পারে না।’

আরেক লেবার এমপি জন উডকক বলেন, এটা ঠিক যে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট আসাদের রাসায়নিক অস্ত্রাগার ধ্বংস করার লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য আমাদের মিত্রদের সঙ্গে অভিযানে যোগ দিয়েছে।

তবে প্রধানমন্ত্রী তেরেসাকে সংসদে অবশ্যই ব্যাখ্যা করতে হবে যে, কেন তিনি মনে করেন সিরীয় অভিযানে অংশ নেয়ার জন্য পার্লামেন্টে ভোটাভুটির দরকার নেই।

ব্রিটেনের গ্রিন পার্টির দুই নেতা ক্যারোলিন লুকাস ও জোনাথন বার্টলি বলেন, তেরেসা মে সংসদীয় গণতন্ত্রকে পদদলিত করেছেন।

হামলার বিষয়ে তর্কবিতর্কের জনমত জানতে সোমবার পার্লামেন্টে ভোটাভুটি আয়োজনেরও আহ্বান জানান তারা।

সোমবার সংসদে পার্লামেন্টকে বিশেষ প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনার জন্য স্পিকারকে অনুরোধ জানান তেরেসা। ভাষণে তিনি বলেন, ‘এ হামলায় আমাদের দেশীয় স্বার্থে যোগ দিয়েছি। সিরিয়ার অব্যাহত রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করাই আমাদের জাতীয় স্বার্থ। এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধে বৈশ্বিক চেতনা তৈরিতে এ হামলা।’

তেরেসা আরও বলেন, ‘আমরা এমনটা করেছি এজন্য যে আমরা মনে করি এটা সঠিক ছিল। এতে আমরা একা ছিলাম না। আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি এর পেছনে বিস্তৃত আন্তর্জাতিক সমর্থন ছিল।’

এএফপি জানায়, একই ধরনের সমালোচনার শিকার ম্যাক্রোঁ। ডান ও বামপন্থী উভয় দল থেকে তোপ আসছে তার বিরুদ্ধে।

ন্যাশনাল ফ্রন্ট নেতা মেরিন লি পেন বলেন, সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার কোনো প্রমাণ না পেয়েই সামরিক পদক্ষেপে কার্যত ম্যাক্রোঁ ব্যর্থ হয়েছেন। ফ্রান্সের কট্টর বামপন্থী আনবউড পার্টির প্রধান জ্যঁ লাক মেলেঞ্চন বলেন, এ ধরনের হামলা সংঘাতকে আরও উসকে দেবে।

ফ্রান্সের পার্লামেন্টে ম্যাক্রোঁর দল এবং বিরোধী দলের এমপিদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version