এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সাত দিন আগে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। ভোটারদের আস্থা ফেরাতে সেনা মোতায়েন জরুরি বলে জানিয়েছে দলটি। তবে দুই সিটি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন (ইসি) কার্যালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদাসহ নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দেড় ঘণ্টাব্যাপী ইসির সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়। বৈঠকে তারা দুই সিটি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন, ইভিএম ব্যবহার না করাসহ ছয় দফা দাবি জানান। এ ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে খালেদা জিয়ার মুক্ত থাকার ওপর জোর দেন বিএনপির নেতারা। বিএনপির ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ এবং যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিমকোর্ট বারের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনকে সামনে রেখে কমিশনের সঙ্গে বিএনপি বৈঠক করেছে। দলের মূল দাবি, দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সাত দিন আগে যেন সেনা মোতায়েন করা হয়। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে পারছেন না। নির্বাচনের ওপর ভোটারদের আস্থা নেই। সেনা মোতায়েন হলে এই নির্বাচনে ভোটারদের আস্থা ফিরে আসবে। এই নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিরোধিতার কথা জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতার কথা জানানো হয়েছে কমিশনকে। ইভিএম-প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ। যেসব দেশের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে, সেসব দেশেও এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।বৈঠকে দুই নির্বাচনকে সামনে রেখে কমিশনের নির্দেশে বিভাগীয় কমিশনারদের নেতৃত্বে দুটি সমন্বয় কমিটি গঠন নিয়েও প্রশ্ন তোলে বিএনপি। মোশাররফ জানান, আইনের কোন ধারায় কোন এখতিয়ারে ইসি এই কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। কারণ, অতীতে এ ধরনের কমিটি গঠনের উদাহরণ নেই। সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, এ নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে মানুষের মাঝে উৎকণ্ঠা রয়েছে। সবাই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। জাতীয় নির্বাচনের আগে দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা, এ দুটি নির্বাচনে তার ইঙ্গিত থাকবে। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য খালেদা জিয়াকে মুক্ত থাকতে হবে। বিএনপি ও ২০ দল নির্বাচনে অংশ না নিলে তা অংশগ্রহণমূলক হবে না।’ ভোটকেন্দ্রগুলোয় আনসার ও ভিডিপি মোতায়েনে সতর্ক থাকতে ইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। নিজ এলাকায় যেন ওই বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব না পান, সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া কমিউনিটি পুলিশের দায়িত্ব পালনকারীদের নির্দিষ্ট পোশাকের ব্যবস্থা করতে ইসিকে বলেছে বিএনপি। নির্বাচনী প্রচারে সমান সুযোগ সৃষ্টি করারও দাবি জানিয়েছে দলটি। স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এমনভাবে দায়িত্ব পালন করবে, যাতে তাদের প্রতি আমাদের আস্থা সুদৃঢ় হয়। জাতীয় নির্বাচনে যাওয়ার একটা বাধা দূর হয়। আমাদের আরেকটি মূল বাধা আছে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে। তার মুক্তি না হলে ২০ দল নির্বাচনের যাবে না। বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। আর তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া মুক্ত হলেই নির্বাচনে যাব- এমনও নাও হতে পারে। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করলে, আস্থার সংকট দূর না হলেও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না।’ বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে লিখিত আকারে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দেয়া হয়। এতে বলা হয়, দুটি নির্বাচনই দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হবে। ফলে প্রধানমন্ত্রী বা তার মন্ত্রিবর্গ ও সংসদ সদস্যগণ বাংলাদেশের যে প্রান্তেই নৌকার পক্ষে ভোট চান না কেন, গণমাধ্যমের সৌজন্যে তা দুই নির্বাচনী এলাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা আচরণবিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। গাজীপুর জেলায় বর্তমান পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে সিভিল প্রশাসন ও পুলিশের চিহ্নিত দলবাজ ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের বদলিপূর্বক নিরপেক্ষ পেশাদার কর্মকর্তা পদায়ন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবিও জানায় দলটি। প্রস্তাবে আরও বলা হয়, নির্বাচনী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দৃশ্যমানভাবে নাম ও র‌্যাংক ব্যাজসহ ইউনিফর্ম পরে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেফতারকৃত সব নেতাকর্মীদের অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে। এ ছাড়া বানোয়াট মামলায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জড়ানো এবং ‘অজ্ঞাত সংখ্যক আসামির’ ছদ্মাবরণে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। লিখিত প্রস্তাবে আরও বলা হয়, সব গণমাধ্যমে প্রচার প্রচারণায় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দল ও প্রার্থীর ক্ষেত্রে সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। গণমাধ্যম কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশাধিকার প্রদান এবং নির্বিঘ্নে সংবাদ সংগ্রহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া দলীয় পরিচয়ে চিহ্নিত এবং রাতারাতি গজিয়ে ওঠা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না। দুই কর্পোরেশনের আওতাযুক্ত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা যাবে না বলে লিখিত প্রস্তাবে জানায় বিএনপি।

সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা নেই : বিএনপির সঙ্গে বৈঠক শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত নেই ইসির। তিনি বলেন, ‘ইভিএম, সেনা মোতায়েন ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারের দাবির বিষয়গুলো নিয়ে পরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বিএনপিকে বলেছে কমিশন।’ হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘কিছু প্রস্তাব কমিশন আইনানুগভাবে বাস্তবায়ন করবে বলে জানিয়েছে। বিশেষ করে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ, পর্যবেক্ষণকদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করাসহ অনেক সুপারিশ ইতিবাচকভাবেই বিবেচনা করা হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘ইভিএমের মতো প্রযুক্তি আইনানুগভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে স্থানীয় নির্বাচনে। এর পরও এ নিয়ে আপত্তি থাকলে বিএনপিকে আবারও এসে ইভিএম দেখার অনুরোধ করা হয়েছে।’

গাজীপুরের এসপি হারুন অর রশীদের নাম উল্লেখ না করে ইসি সচিব বলেন, তার বিষয়ে বৈঠকে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি ইসি। এসব বিষয় আইনবিধির সঙ্গে যুক্ত। বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তা নিয়ে কমিশন পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবে।’

আগামী ১৫ মে ভোটের দিন রেখে দুই সিটির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ এপ্রিল।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version