এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি সুফিয়া কামাল হলের ২০ ছাত্রীকে রাতের আঁধারে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে ৩ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন, শারমীন শুভ (গণিত, তৃতীয় বর্ষ), কামরুন্নাহার লিজা (থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ, চতুর্থ বর্ষ) ও পারভীন (গণিত)। বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে শারমীন শুভকে এবং ১০টার পর অন্য দুজনকে বের করে দেওয়া হয়।
এছাড়া, রাত সাড়ে ১২টার দিকে রিমি নামের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর বাবাকে ডেকে আনে হল কর্তৃপক্ষ। রাত সোয়া ১টায় হল থেকে বের হয়ে রিমির বাবা ফারুক হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘হল প্রশাসন বলেছে, রিমি আগে আন্দোলনে জড়িত ছিল। আর যেন কোনও আন্দোলনে সে না যায়।’ তিনি এ বিষয়ে আর কিছু বলতে রাজি হননি। হলে ঢোকার আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে হল থেকে একজন মহিলা ফোন দিয়ে আসতে বলেন। আমি বললাম, আমার বাসা ধামরাই। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে কীভাবে আসব? তখন ওই মহিলা বলেন, আপনাকে আসতেই হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেন ডাকা হলো আমি কিছু বলতে পারব না। দেখি তারা কী বলে।’
রাত ১২টার দিকে শারমীন শুভকে তার বাবা এসে হল থেকে নিয়ে যান। এসময় সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকরা তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তিনি কিছু বলেননি। পরে এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘হল প্রশাসন থেকে আমাদের কোনও কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। আমরা কিছু বলতে পারব না।’ পরে মেয়েকে নিয়ে তিনি রিকশায় করে চলে যান।
হল কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানায়, গত ১০ এপ্রিল ফেসবুকে ভুয়া আইডি থেকে গুজব ছড়ানোর ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এই ছাত্রীদের বের করে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমান রাত ১০টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, ‘হলের পরিস্থতি শান্ত রাখার জন্য আমরা হল প্রশাসন মেয়েদের দফায় দফায় তলব করছি।’ তিনি দুই ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।
উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘হল কর্তৃপক্ষ মেয়েদের অভিভাবক। তারা যেকোনও বিষয়ে মেয়েদের তলব করার অধিকার রাখে। এ হিসেবে তাদের তলব করা হচ্ছে, হয়রানি করা হচ্ছে না।’ হল থেকে বের করে দেওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো গুজব ছড়ানো হচ্ছে। একটি চক্র এসব গুজব ছড়ানোর পেছনে কাজ করছে।’
ওই হলের ছাত্রীদের মাধ্যমে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর হলের প্রভোস্ট ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমান ‘গুজব’ ছড়ানোর ঘটনায় সন্দেহভাজন ছাত্রীদের ডাকেন। এরপর ওই তিন ছাত্রীকে বের করে দেওয়া হয়।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে সুফিয়া কামাল হলে গত ১০ এপ্রিল রাতে এক ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দেওয়া ছাত্রীদের মারধরের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ওই হলে ছাত্রীরা ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। ফেসবুকে ওই ঘটনা এবং মারধরে এক ছাত্রীর পা কেটে রক্ত ঝরার ছবি পোস্ট করা হয়। বিক্ষোভের মুখে ওই রাতেই প্রথমে ছাত্রলীগ ও পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগ নেত্রী ইশরাত জাহান এশাকে বহিষ্কার করে। কদিন পরেই ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একে একে এশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর এশাকে হেনস্তার অভিযোগে হলের ২৬ ছাত্রীকে শোকজ করা হয়। তাদের নাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিষদেও পাঠায় হল প্রশাসনের তদন্ত কমিটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই হলের কয়েকজন ছাত্রী সাংবাদিকদের জানান, হল প্রশাসন ছাত্রীদের ডেকে নিয়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। মামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাদের মোবাইল ফোন আটকে তা চেক করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বলেন, অন্তি নামে আমার এক বান্ধবীকে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা তাকে ফোন দিলে তার ফোনটি হলের এক ম্যাম ধরে আমাকে জানান, অন্তিকে ফোন দেওয়া যাবে না।
রাত ১০টার দিকে ওই হলের ভুক্তভোগী এক ছাত্রীর বড় ভাই আব্দুল আউয়াল জানান, রাত ৮টার সময় আমার বোন হল থেকে আমাকে ফোন করে কান্নাকাটি করে বলে, আমি যেন তাকে এসে হল থেকে নিয়ে যাই। আমি কিছুক্ষণ পরে তাকে আবার ফোন দিলে আমার বোনের ফোন একজন শিক্ষিকা রিসিভ করেন। ওই শিক্ষিকা আমাকে বলেন, আপনার বোনকে হল থেকে নিয়ে যান। তার ফোন জব্দ করা হয়েছে।