এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : দেশের সব ধরনের গণপরিবহন ই-টিকেটিং সিস্টেম ‘র‌্যাপিড পাসের’ আওতায় আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। রাজধানীতে পরীক্ষামূলক র‌্যাপিড পাসের পরিধি বাড়িয়ে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২১ সালের মধ্যে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। টিকিট ক্রয়ের ভোগান্তি এড়াতে ‘র‌্যাপিড পাস’ ব্যবহারের পরিধি বাড়ানোর দাবি করছেন যাত্রীরা। রাজধানীতে এক হাজার ৭৫০ জন যাত্রী ‘র‌্যাপিড পাস’ ব্যবহার করছেন। গ্রাহকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) নতুন রুটে র‌্যাপিড পাস ব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে স্লোগান হল ‘সকল পরিবহনে এক কার্ড-র‌্যাপিড পাস।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, ভোগান্তি ছাড়া গণপরিবহনে চলাচল নিশ্চিত করতে ২০১৪ সালে ‘ইস্টাবলিশমেন্ট অব কেয়ারিং হাউস ফর ইন্টিগ্রেটিং ট্রান্সপোর্ট টিকিটিং সিস্টেম ইন ঢাকা সিটি এরিয়া’- প্রকল্পের আওতায় ই-টিকিটিং সিস্টেম চালু করার কার্যক্রম শুরু করে ডিটিসিএ। ২০১৭ সালের ১৬ মে মতিঝিল-আবদুল্লাপুর রুটের বিআরটিসি বাসে প্রথম ই-টিকিটিং কার্যক্রম চালু করা হয়। এই ই-টিকিটিং কার্ডের নাম দেয়া হয়েছে ‘র‌্যাপিড পাস’। এটিকে আইসি কার্ডও বলা হয়। একই বছরের জুনে মতিঝিল-আবদুল্লাপুর রুটে বেসরকারি গণপরিবহন ‘উমামা’ র‌্যাপিড পাস ব্যবহার শুরু করে। তবে, মালিকানা নিয়ে জটিলতায় এ গণপরিবহনের বাস চলাচল আপাতত বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের ডিসেম্বরে ‘ঢাকা চাকা’ পরিবহন র‌্যাপিড পাস ব্যবহার শুরু করে। গুলশান-বনানী-বারিধারায় চলাচলকারী এ গণপরিবহনে র‌্যাপিড পাসের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। মতিঝিল-নবীনগর রুট ও হাতিরঝিল সার্কুলার রুটে র‌্যাপিড পাস ব্যবহারের ব্যাপারে বিআরটিসি চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। শিগগির এ দুটি রুটের দুটি সংস্থার বাসে র‌্যাপিড পাস ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। হাতিরঝিল ওয়াটার ট্যাক্সিতেও র‌্যাপিড পাস ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ‘ইস্টাবলিশমেন্ট অব কেয়ারিং হাউস ফর ইন্টিগ্রেটিং ট্রান্সপোর্ট টিকিটিং সিস্টেম ইন ঢাকা সিটি এরিয়া’ প্রকল্পের পরিচালক মো. জাকির হোসেন মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, ২০১৪ সালের জুনে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুনে শেষ হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের জন্যও প্রস্তাবনা জমা দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক অনুমোদন মিলেছে। আশা করি, আগামী জানুয়ারিতে নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে এ কার্যক্রমকে গণমানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারব। এ কারণে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের পরিসর কিছুটা বড় হচ্ছে। জাইকা এ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে সম্মত হয়েছে। চলমান প্রকল্পেও জাইকা অর্থায়ন করেছে।

এ বিষয়ে ‘ঢাকা চাকা’ পরিবহনের পরিচালক শহিদ হোসেন রুবেল বলেন, ঢাকা চাকা পরিবহনে র‌্যাপিড পাস ব্যবহার করায় যাত্রীরা খুশি। তিনি বলেন, তাদের ৪০টি বাস রয়েছে। গুলশান-বনানী-বারিধারায় ১৪টি কাউন্টার রয়েছে। গাড়িতে যারা ওঠেন, তারা কাউন্টারে কার্ড পাঞ্চ করেন। এ প্রসঙ্গে বিআরটিসির পরিচালক কর্নেল মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বিআরটিসির বাসে র‌্যাপিড পাসের ব্যবহার বাড়ছে। যাত্রীদের চাহিদা থাকায় রুটও বাড়ানো হচ্ছে। র‌্যাপিড পাস দেশব্যাপী ও বহুমুখী ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করলে মানুষ এ কার্ড থেকে অনেক সুবিধা পাবে। এর ব্যবহারও বহুগুণ বেড়ে যাবে। এ বিষয়ে হাতিরঝিল চক্রাকার বাস রুট সার্ভিস এইচআর ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুল হালিম যুগান্তরকে বলেন, র‌্যাপিড পাস ব্যবহারের ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। আগামী মাসের প্রথম থেকে হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিসে র‌্যাপিড পাস ব্যবহার কার্যক্রম শুরু করা হবে।

এ প্রসঙ্গে জাইকার আইসিটি বিশেষজ্ঞ আমিনুল ইসলাম বলেন, র‌্যাপিড পাস ব্যবহারে যাত্রীদের ভোগান্তি অনেক কমবে এবং এই একটিমাত্র কার্ডে অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, র‌্যাপিড পাসের মাধ্যমে বাস, ট্রেন, লঞ্চ, বিমানের টিকিট কেনাসহ শপিং করার সুবিধা থাকবে। আপাতত বাস, ট্রেন, লঞ্চ, বিআরটি ও এমআরটির ভ্রমণের সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

র‌্যাপিড পাস কার্ড : র‌্যাপিড পাস কার্ড হল ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মতো এক ধরনের কার্ড। বাসে রাখা মেশিনে যাত্রী কার্ডটি পাঞ্চ করলে সবুজ বাতি জ্বলে উঠবে। কাক্সিক্ষত গন্তব্যে নামার সময় যাত্রী আবার কার্ড পাঞ্চ করলে নির্ধারিত গন্তব্য অনুযায়ী কার্ড থেকে ভাড়া কেটে নেয়া হবে।

র‌্যাপিড কার্ড নিবন্ধন : র‌্যাপিড পাস কার্ডের জন্য নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। এ জন্য সর্বনিম্ন তথ্য (নাম ও মোবাইল নম্বর) দরকার হবে। এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কমপক্ষে দুই কার্যদিবস সময় লাগবে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আগে কিছু দাবি করা যাবে না।
কীভাবে কার্ড পাওয়া যাবে : নিবন্ধন ফরম পূরণ করে জমা দিয়ে কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দুই কার্যদিবস সময় লাগবে। রিচার্জের টাকা শেষ হয়ে গেলে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ৮টি শাখা থেকে র‌্যাপিড পাস কার্ড ক্রয় ও রিচার্জ করা যাবে। শাখাগুলো হল- মতিঝিল লোকাল অফিস শাখা, মতিঝিল বৈদেশিক বিনিময় শাখা, এলিফ্যান্ট রোড শাখা, উত্তরা শাখা, বনানী শাখা, গুলশান সার্কেল-১ শাখা, গুলশান শাখা ও সোনারগাঁও জনপথ শাখা। এ ছাড়া নতুনবাজার, গুলশান-২, শুটিং ক্লাব ও বনানী টিকিট কাউন্টার থেকে ঢাকা চাকার র‌্যাপিড পাস কার্ড ক্রয় ও রিচার্জ করা যাবে।

রিচার্জ করবেন কীভাবে : র‌্যাপিড পাস আইসি কার্ডের ব্যালান্স শেষ হলে সহজে যাত্রীরা ডাচ্-বাংলা ব্যাংক শাখা বা টিকিট শপ থেকে র‌্যাপিড পাস কার্ড রিচার্জ করতে পারবেন। কার্ডে পর্যাপ্ত টাকা না থাকলেও একবার কার্ডটি ব্যবহার করা যাবে। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী রিচার্জ থেকে টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমন্বয় করা হবে। কার্ডের প্রাথমিক মূল্য ৪০০ টাকা। এর মধ্যে ২০০ টাকা রিচার্জ হিসেবে কার্ডে জমা থাকবে। ব্যবহারকারীরা একবার সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন ১০০ টাকা রিচার্জ করতে পারবেন।

হারানো কার্ড ফেরত : হারানো কার্ড ফেরত পেলে এবং সেটির জমামূল্য উদ্ধারের জন্য অপারেটরকে দিতে হবে। যাচাইসাপেক্ষে কার্ড নিষ্ক্রিয় করে রিফান্ড ফি বাবদ ১০ টাকা কেটে অবশিষ্ট টাকা ফেরত দেবে অপারেটর।

রিফান্ড : ব্যবহারকারী কার্ড ফেরত দিতে চাইলে ১০ টাকা কেটে জমা ও রিচার্জের টাকা ফেরত দেবেন অপারেটর।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version