এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলার সেই রাসানা গ্রামে এখন আর কোনো মুসলমান নেই বললেই চলে। দু-একজন যারা কোনো উপায় না পেয়ে সেখানে অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছেন, তারাও ভয়-আতঙ্ক-শঙ্কার মধ্যে দিন পার করছেন। ধর্ষণ ও হত্যার ভয়ে কন্যাশিশুদের একা বাইরে ছাড়ছেন না। এই রাসানা গ্রামেরই বাসিন্দা ছিল আট বছর বয়সী শিশুকন্যা আসিফা বানু। গত জানুয়ারিতে তাকে গ্রামটির মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ আটজন মিলে ধর্ষণের পর পাথর ছুড়ে হত্যা করেছে। খবর এফপির।
এ ঘটনার পর গোটা ভারত ফুঁসে উঠেছে। অপরদিকে রাসানা গ্রামের মুসলমানদের ভেতর নেমে এসেছে আতঙ্ক। প্রাণভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে। চৌদ্দপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে অজানার উদ্দেশ্যে পা ফেলছে। রাসানার সেদিনের সেই লোমহর্ষক ঘটনায় আজকের এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। ভারতের পুলিশ বলেছে, সংখ্যালঘু কাবরাওয়াল মুসলিম যাযাবর সম্প্রদায়কে উচ্ছেদ করতেই ওই শিশুকন্যাকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে। গ্রাম থেকে মুসলিম উচ্ছেদের কৌশল কাজ দিয়েছে। পুলিশ বলছে, শিশুটিকে মদ খাইয়ে পাঁচদিন ধরে হিন্দু মন্দিরে আটকে রাখা হয়েছিল। তাকে হত্যার আগে দফায় দফায় ধর্ষণ করা হয়েছে। জানুয়ারির ওই ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের পর অন্য মুসলিম পরিবারগুলো সেখান থেকে একে একে চলে যাচ্ছে। আসিফার পরিবারও পুলিশ প্রহরায় কাশ্মীরের পাহাড়ের দিকে চলে গেছে। আসিফার পরিবারের বাড়িটি খালি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। সেটাতে এখন আর কেউ থাকেন না। রাসানা গ্রামে এখন যারা আছেন, তাদের বেশিরভাগ লোকজন বাইরের কারও সঙ্গে কথা বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করছেন।
৩৯ বছর বয়সী ইয়াশ পল শর্মা বলেন, এই মর্মান্তিক ঘটনার পর গ্রামটি শূন্য হয়ে গেছে। গ্রামটি এখন এক ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পাঞ্জাব থেকে প্রায় ছয় ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে ছয়জনের একটি মুসলিম গ্র“প এসেছে রাসানায়। তারা আসিফার পরিবারকে সাহায্য করতে চায়। তাদের মধ্যে একজন মুবিন ফারুকি বলেন, হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উসকানিতে এ ধরনের বৈরিতা ও নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনার পর ভারতীয়দের মনোভাবে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। লোকজন এখন এই অসুস্থ মানসিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শুরু করেছেন। আর নিতান্তই নিরুপায় হয়ে যে দু-একজন মুসলিম এখনও গ্রাম আঁকড়ে আছে, তাদের মধ্যেও মারাÍক শঙ্কা কাজ করছে। ছয় সন্তানের মা কানিজা বেগম তার ১০ বছরের শিশুকন্যাকে বাইরের মাঠে খেলতে দিতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। তিনি বলেন, তাকে এখন বাইরে যেতে দিই না। স্কুলে গেলে তার ভাইকে সঙ্গে দিই। আবার তার ভাই গিয়ে স্কুল থেকে নিয়ে আসে। ভারতশাসিত জম্মু ও কাশ্মীর দেশটির একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য।