আমারদেশ লাইভ, ঢাকা : নিজেদের ‘বাঙালি’ হিসেবে স্বীকার করে না নিলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে না মিয়ানমার। এ জন্য তাদের মিয়ানমার সরকারের চালু করা ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ডের (এনভিসি) আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। মিয়ানমারে ফিরে গেলে তাদের এই কার্ড দেয়া হবে; কিন্তু রোহিঙ্গারা এনভিসি নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। তারা চায় মিয়ানমারের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি। এনভিসির মাধ্যমে নাগরিকত্ব নেয়ার প্রক্রিয়ায় তাদের আস্থা নেই। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে নতুন করে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি সীমান্তের জিরো লাইন থেকে ফিরে গিয়ে একটি পরিবার এনভিসি নিয়ে রাখাইনে বসবাস করছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ অন্য রোহিঙ্গাদেরও একই পদ্ধতিতে ফিরে আসার জন্য উৎসাহিত করছে; কিন্তু রোহিঙ্গারা বলছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাথে যোগসাজশের মাধ্যমেই পরিবারটি রাখাইনে ফিরেছে। তারা এনভিসি নয়, মিয়ানমারের নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা চায়।
মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উইন মিয়াত আয়ে গত ১১ এপ্রিল তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। এ সময় তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন এবং ঢাকায় পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করেন। কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে একদল রোহিঙ্গার সাথে আলাপকালে উইন মিয়াত আয়ে এনভিসি ফরম পূরণের জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করেন; কিন্তু রোহিঙ্গারা এনভিসি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে নাগরিকত্বসহ ১৩ দফা দাবি পেশ করে। অন্য দিকে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের তালিকা প্রণয়নের জন্য নতুন একটি ফরম দেয় মিয়ানমার।
বাংলাদেশ সফরের ওপর গতকাল ইয়াঙ্গুনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উইন মিয়াত আয়ে বলেন, কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া উদ্বাস্তুরা মিয়ানমার ফিরতে চায়। কিন্তু এনভিসি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে না যাওয়ায় তারা ফিরতে পারছে না। এনভিসির জন্য ব্যক্তিগত বিস্তারিত তথ্যসহ ফরম পূরণ করতে হবে। তিনি বলেন, উদ্বাস্তুরা হয় এনভিসির ফরম পূরণ করতে জানে না অথবা তারা এর সুফল সম্পর্কে অবগত নয়। আমরা জানি না এ সংক্রান্ত তথ্য কেন তাদের দেয়া হয়নি।
মিয়ানমারের মন্ত্রী বলেন, এনভিসি পেলে উদ্বাস্তুরা চলাচলের স্বাধীনতা, বাড়িঘর, কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং সহজে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পাবে। উদ্বাস্তুদের রাখাইন পরামর্শক কমিশনের (আনান কমিশন) সুপারিশ অনুযায়ী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের প্রস্তুতি, মানবিক সহায়তা এবং ২০১২ সালে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষদের (আইডিপি) জন্য তৈরি করা ক্যাম্পগুলো বন্ধ করার চলমান প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে। এরপর তাদের জন্য হোয়াইট কার্ড চালু হয়। ২০১৫ সালে হোয়াইট কার্ডের বদলে এনভিসি চালু করা হয়; কিন্তু এনভিসিতে বাঙালি পরিচয়ের বাধ্যবাধকতা থাকায় খুব অল্প সংখ্যক রোহিঙ্গা হোয়াইট কার্ড জমা দিয়ে তা গ্রহণ করেছে। এখনো রাখাইনে অবস্থান করছেন এমন ২৬ হাজার রোহিঙ্গাকে গত দুই মাসে এনভিসি দেয়া হয়েছে।
উইন মিয়াত আয়ে বলেন, প্রত্যাবাসনের শর্ত নিয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হলে কক্সবাজারে উদ্বাস্তুদের সাথে আলোচনা সংক্ষিপ্ত করতে হয়। তাদের মনোভাব ছিল আগ্রাসী। উদ্বাস্তুরা আমাদের কথা শোনার চেয়ে নিজেদের এজেন্ডা নিয়ে বেশি ব্যস্ত ছিল। উদ্বাস্তুদের মূল উদ্বেগ নাগরিকত্ব নিয়ে। নাগরিকত্বের জন্য এনভিসি গ্রহণের অনুরোধ জানালে উদ্বাস্তুরা জানায়, এটার প্রয়োজন নেই। তারা যে মিয়ানমার থেকে এসেছে তা প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তাদের কাছে রয়েছে।
আবদুর রহিম নামের একজন রোহিঙ্গা নেতা বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, কুতুপালংয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মন্ত্রী উইন মিয়াত আয়ে মিয়ানমার ফিরতে এনভিসি গ্রহণের বাধ্যবাধকতার কথা জানালে উপস্থিত রোহিঙ্গারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। ধর্ষণের শিকার আটজন নারী তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। মন্ত্রী তা ধৈর্য সহকারে শুনেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version