এশিয়ান বাংলা, লন্ডন : রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে কমনওয়েলথ। একই সঙ্গে ৫৩ জাতির সংস্থাটির সরকারপ্রধানেরা সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ ও যারা এসব নিষ্ঠুরতার জন্য দায়ী, স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে শুক্রবার শেষ হয়েছে দুই দিনের কমনওয়েলথ সম্মেলন। পরে ‘অভিন্ন ভবিষ্যতের লক্ষ্যে’ শীর্ষক ৫৪ দফার একটি ইশতেহার প্রকাশ করা হয়। এতে জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে বর্তমান সংকটের মূল কারণ অনুসন্ধান ও কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়নের জন্য নেতারা মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান।

কমনওয়েলথ নাগরিকদের জন্য আরও সমৃদ্ধ, ন্যায়তর, অধিকতর নিরাপদ এবং টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকারসংবলিত একটি বিবৃতিও প্রকাশ করা হয়েছে। সম্মেলন শেষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাগতিক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেন, কমনওয়েলথ দেশগুলোতে সবার রাজনৈতিক ও সামাজিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমৃদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলায় কমনওয়েলথের নেতারা অঙ্গীকার করেছেন।

ইশতেহারে আছে নীল সমুদ্র সনদ, কমনওয়েলথ সাইবার ঘোষণা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক ঘোষণা এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমের হালনাগাদ করা আচরণবিধিসহ বিভিন্ন বিষয়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেন, আগামী দুই বছর সংস্থার চেয়ার হিসেবে তাঁর সরকার সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করবে। সমুদ্রের দূষণ মোকাবিলায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রোধে যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশ কয়েকটি দেশ প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে বলেও তিনি জানান। কমনওয়েলথ দেশগুলোর ছেলে-মেয়ে সবাই যাতে অন্তত ১২ বছর মানসম্মত শিক্ষা পেতে পারে, তা নিশ্চিত করারও অঙ্গীকার এসেছে এই সম্মেলনে।নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে অন্তর্ভুক্তিমূলক ভোটার নিবন্ধন, প্রার্থী মনোনয়নে স্বাধীনতা, স্বাধীনভাবে নির্বাচনী প্রচার চালানো, গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদে ভারসাম্য রক্ষা, নারী, তরুণ, সংখ্যালঘু এবং প্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণ, সরকারি কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সততা, গোপনে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা, সহিংসতা এবং ভীতি প্রদর্শনের চিত্র এবং ভোট গণনার সততা।

ইশতেহারে কমনওয়েলথ সনদের আলোকে সুশাসন, গণতান্ত্রিক নীতিমালা এবং মানবাধিকার ও আইনের শাসনের সুরক্ষা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়। রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার পৃথক্‌করণ নিশ্চিত করার লাটিমার নীতিমালা অনুসরণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।

বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থার বিপরীতে সংরক্ষণবাদের হুমকির কথা উল্লেখ করে তা প্রতিহত করার কথাও ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়। আন্তকমনওয়েলথ বাণিজ্য বাড়ানোর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণে সম্মেলন সম্মত হয়েছে বলেও ইশতেহারে জানানো হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেন, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শহিদ খাকান আব্বাসি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাদা আলাদা আলোচনা হয়েছে। এসব আলোচনায় মূলত বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়টি স্থান পেয়েছে। তিনি বলেন, কমনওয়েলথে জনসংখ্যার ৬০ শতাংশই তরুণ এবং তাদের কর্মসংস্থান এবং দেশগুলোর সমৃদ্ধির জন্যই বাণিজ্য বাড়াতে হবে।

সম্মেলনে সংস্থার নেতৃত্বে রানির উত্তরাধিকারী হিসেবে যুবরাজ চার্লসের দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে সরকারপ্রধানেরা সম্মত হন। যুবরাজ চার্লসের কাছে সংস্থার ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত কতটা গণতান্ত্রিক-এমন একাধিক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী মে এবং ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফু আদো বলেন, সিদ্ধান্তটি ছিল সর্বসম্মত এবং কোনো ভিন্নমত আসেনি।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version