এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : সব ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা স্থগিত ও পরমাণু পরীক্ষা কেন্দ্রের কাজ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। শুক্রবার উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির এক বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। কিমের এ ঘোষণাকে বিশ্বের জন্য শুভ বার্তা বলে অভিহিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একে অর্থবহ অগ্রগতি বলে মন্তব্য করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে পার্শ^বর্তী দেশ ও পিয়ংইয়ংয়ের অন্যতম প্রধান মিত্র দেশ চীন। এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র দেশ জাপানের প্রধানমন্ত্রী একে স্বাগত জানালেও দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, প্রতিশ্র“তিতে সন্তুষ্ট নয় জাপান।

এএফপি জানায়, উত্তর কোরিয়া শুক্রবার তাদের সব ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ স্থগিত ও একটি পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্রের কাজ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) শনিবার জানায়, অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখা এবং কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কিম এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিমের বরাত দিয়ে কেসিএনএ জানিয়েছে, ২১ এপ্রিল থেকে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক পরীক্ষা ও আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ বন্ধ রাখবে। কিম বলেছেন, আর কোনো পরীক্ষা চালানোর প্রয়োজন নেই, ‘কেননা পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক সক্ষমতা এখন প্রমাণিত।’

বহুল কাক্সিক্ষত ও বিস্ময়কর এ ঘোষণাটি এমন সময় দেয়া হল যখন দেশটি শিগগিরই দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ঐতিহাসিক আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সামনের সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন এবং জুনের মধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিমের শীর্ষ বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। উভয় দেশই দীর্ঘদিন ধরে উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু পরীক্ষা বন্ধ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। ফেব্র“য়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ংচ্যাংয়ে হওয়া শীতকালীন অলিম্পিককে কেন্দ্র করে উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলে। এরই ধারাবাহিকতাতেই ওয়াশিংটনকে ট্রাম্প-কিম বৈঠকের প্রস্তাব দেয়া হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ও পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির কারণে কয়েক দশক ধরে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা উত্তর কোরিয়ার আলোচনার প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে বিশ্বকে অবাক করে দেন ট্রাম্প। প্রস্তাব গ্রহণ করে ট্রাম্প জুনের প্রথম দিকে কিংবা তারও আগে উত্তরের শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা স্থগিত ও পরমাণু পরীক্ষা বন্ধে পিয়ংইয়ংয়ের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন ট্রাম্প। এক টুইটার বার্তায় তিনি বলেন, ‘এটি একটি বিরাট অগ্রগতি। উত্তর কোরিয়া ও বিশ্বের জন্য এটি খুবই ভালো সংবাদ।’ এর আগে গত বৃহস্পতিবারও ট্রাম্প বলেছিলেন, উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক পথ থেকে সরে এলে তাদের জন্য ‘উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ’ অপেক্ষা করছে। কিমের ঘোষণা স্বাগত জানিয়ে শনিবার চীন বলেছে, এ পদক্ষেপ এ অঞ্চলকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু কাং বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও সংলাপের ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়াকে সার্বিক সহায়তা করবে বেইজিং।’ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের দফতর থেকে পিয়ংইয়ংয়ের এ পদক্ষেপকে ‘অর্থবহ অগ্রগতি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইনের দফতরের এক মুখপাত্র বলেন, এ ঘোষণা দুই দেশের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেও এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইতসুনোরি ওনোদেরা বলেছেন, পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধে পিয়ংইয়ংয়ের প্রতিশ্র“তিতে সন্তুষ্ট নয় টোকিও। পরমাণু কর্মসূচি পরিত্যাগে তার দেশ কিমের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করবে বলেও হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা সন্তুষ্ট নয়। কারণ উত্তর কোরিয়া স্বল্প পাল্লা ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরিত্যাগের কথা উল্লেখ করেনি।’

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version