এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : কারাগারে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে তার দায়-দায়িত্ব পুরোটাই সরকারকে বহন করতে হবে বলে জানিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে সরকার ‘নোংরা’ রাজনীতি করছে অভিযোগ করে অবিলম্বে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তার সুচিকিৎসার দাবিও জানিয়েছে দলটি।

শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের ?উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাবেক এমপি কামরুদ্দিন ইয়াহিয়া খান মজলিশ প্রমুখ।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য কারাগারে ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে খবর পাচ্ছি। তাতে সারা দেশ জাতি এবং আমরা উৎকণ্ঠিত। সরকারকে বলব, এখনও সময় আছে, অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তাকে তার পছন্দনীয় চিকিৎসক দ্বারা এবং বিশেষায়িত হাসপাতাল ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে তার দায়-দায়িত্ব পুরোটাই সরকারকে বহন করতে হবে। এ বিষয়ে নোংরা রাজনীতি না করে সোজা পথে তাকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার আহবান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, সংবাদপত্র সূত্রে জানতে পেরেছি সরকারের গঠিত একটি মেডিকেল টিম দেশনেত্রীকে পরীক্ষা করতে গিয়েছিল। পরে অধ্যাপক মালিহা রশিদের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি মেডিকেল টিম তাকে দেখতে যায়। তিনি (খালেদা জিয়া) বেশকিছু ব্যাধিতে আক্রান্ত। এর মধ্যে একুট রিউমেটিক আর্থারাইটিস তাকে বেশ কষ্ট দিচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, চিকিৎসকরা যে পরীক্ষাগুলো করেছেন সেখানে এমআরআই ও অন্যান্য যেসব বিশেষায়িত পরীক্ষা করা দরকার তা করা হয়নি। মাঝখানে তাকে একবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল, সেখানে এক্সরে ও রক্ত পরীক্ষা করানো হয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের যেসব পরীক্ষা করার জন্য ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছেন সেটা হচ্ছে তার একটা বিশেষ ধরনের এমআরআই (স্পাইনাল) করা জরুরি। এছাড়া তার পুরো এবডোমিনের আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করা প্রয়োজন। রক্তের বিভিন্ন রকম পরীক্ষা করা প্রয়োজন। সেজন্য তারা (চিকিৎসকরা) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেখানোর জন্য সুপারিশ করেছেন। সেগুলো হচ্ছে- হেমাটোলজিস্ট, অপথ্যালমোজিস্ট এবং ফিজিক্যাল, নিউরো ও ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। এসব বিশেষজ্ঞকে দেখানো জরুরি বলা হয়েছে। তারা অবিলম্বে তার পছন্দনীয় হাসপাতাল ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য সুপারিশ করেছেন। অথচ এ ব্যাপারে কারা কর্তৃপক্ষ কোনো বক্তব্য আমাদের কাছে ও জাতির সামনে দেয়নি।

মির্জা ফখরুল বলেন, চিকিৎসকরা কারাগারে দেশনেত্রীর জন্য যে বিছানা তা উপযোগী নয় বলেছেন। সেজন্য অর্থোপেডিক বেডের সুপারিশ তারা করেছিলেন। তাও করা হয়নি। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন এ দেশের গণমানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। মিথ্যা সাজানো মামলায় তাকে সাজা দিয়ে কারাগারে প্রেরণের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাকে ও তার দলকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া।

সরকার গণবিচ্ছিন্ন ও রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাই ২০১৪-এর মতো একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারও ক্ষমতা দখলই হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য। আইনের বিধানকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে দেশনেত্রীকে জামিন না দিয়ে কারাগারে তার প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সুচিকিৎসা থেকে তাকে বঞ্চিত করা- এটা অমানবিক।

মির্জা ফখরুল বলেন, চিকিৎসকরা তাকে (খালেদা জিয়া) থেরাপি দেয়ার সুপারিশ করেছেন যা কারাগারে সম্ভব নয়। কারাগারের যে কক্ষে তাকে রাখা হয়েছে তা সম্পূর্ণ সংবিধানপরিপন্থী। পরিত্যক্ত একটা কারাগারে রাখা হয়েছে যেটা স্যাঁতসেঁতে।

দলের নেতা ও পরিবারের সদস্যদের ১০ দিন ধরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে না দেয়ার ঘটনাকে ‘হীন উদ্দেশ্যমূলক’ বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সরকারের মন্ত্রীদের এ বিষয়ে মন্তব্য ও কটূক্তি শিষ্টাচারবহির্ভূত এবং চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ। তারা (সরকার) দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়। খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে ও আসন্ন সংসদ নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। এত ভয় কেন?

সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়াকে মাঠে নামতে দিন। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে দিন। যথেচ্ছ পুলিশ ব্যবহার বন্ধ করুন। দেখুন, আপনারা কোথায় দাঁড়াতে পারেন। রাজনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সাহস আপনাদের নেই।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version