এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখে অনগ্রসর পল্লীবাসীর জীবনমান উন্নয়নে পল্লী অঞ্চলকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে আসন্ন বাজেটে। সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল মনে করছে, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিকের ৮০ শতাংশ এখনও গ্রামে বাস করে। ভোটার তুষ্টির আগামী বাজেটে এই গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

এজন্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, আত্মকর্মসংস্থান ও বাজার সংযোগ সৃষ্টি, জীবনমান উন্নয়ন ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৫ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে মাত্র এক হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী বাজেটে এ খাতে তিনগুণের বেশি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

এ নিয়ে কথা হয় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আগামী বাজেটে দারিদ্র্যদূরীকরণ ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ এ ধরনের কর্মসূচি রাখা হবে। সরকারের বাজেট হবে জনবান্ধব। ফলে গ্রামীণ উন্নয়নও এ বাজেটে গুরুত্ব পাচ্ছে বিশেষভাবে। বিশেষ করে বাজেটের মাধ্যমে বৈষম্য কমিয়ে আনার পরিকল্পনাও রয়েছে।

জাতীয় সংসদে ৭ জুন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর ঠিক ছয় মাস পর অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে আস্থায় আনতে বাজেটে অগ্রাধিকার দেয়া হবে গ্রামীণ ও অনগ্রসরদের জীবনমান উন্নয়নে। সরকারের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ ধরনের উদ্যোগ বাজেট-উত্তর নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

কিছু দিন আগে থেকেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বাজেট প্রস্তুত করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এটি চূড়ান্ত করার আগেই ৫ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে আধা সরকারিপত্র (ডিও) দিয়েছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব মাফরূহা সুলতানা। অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেয়া ওই ডিও লেটারে সচিব বলেছেন, ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে’ বরাদ্দ বাড়ানোসহ এ বিভাগে ১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি আগামী বাজেটে ৫ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেন তিনি।

সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ও অগ্রাধিকার প্রকল্প ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে আগামী বাজেটে ১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে প্রকল্প সম্পর্কে বলা হয়েছে, উপকারভোগীদের নির্ধারিত সময়ে ঋণ দেয়া না গেলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশের প্রায় ৬৭ হাজার গ্রামেই এ কর্মসূচি চলমান রয়েছে।

এছাড়া ৩ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে গ্রামীণ খাতে চলমান ২৪টি কর্মসূচির কাজ শেষ করতে। গ্রামীণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ৪২টি অননুমোদিত প্রকল্প রয়েছে এ বিভাগে। এছাড়া বৃহত্তম ফরিদপুরের চরাঞ্চল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় গবাদি পশুর জাত উন্নয়ন ও দুধের বহুমুখী ব্যবহারের জন্য ৩৪৪ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এছাড়া রয়েছে পরিচালনা ব্যয়। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ৬২৪ কোটি টাকা। সব মিলে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে ৫ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।

সূত্র মতে, অর্থ বিভাগ আগামী বাজেটে এ খাতে প্রাথমিক বরাদ্দ দিয়েছে ২ হাজার ৭৪ কোটি টাকা। বাড়তি ৩ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা চাওয়া প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের বাড়তি অর্থ চাওয়ার প্রস্তাবটি পাওয়া গেছে। এটি পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। বাড়তি অর্থ চাওয়ার যৌক্তিকতা থাকলে অবশ্যই বরাদ্দ বাড়ানো হবে।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে গ্রামীণ মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে যে বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে, তার প্রমাণ মিলছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বাড়তি বরাদ্দ চাওয়া থেকে। লাখ লাখ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের অংশ হিসেবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

একই সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সমস্যাদি চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা করার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকছে। এছাড়া পণ্যের বাজার সংযোগ সৃষ্টি, দুগ্ধ উৎপাদন ও বহুমুখী সমবায় কার্যক্রমের মাধ্যমে গ্রামবাংলা মানুষের অবস্থা উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। গ্রামের গরিব ও মধ্যবিত্তদের জীবনমানকে আরও সহজ করতে নেয়া হচ্ছে নানা কর্মসূচি।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version