এশিয়ান বাংলা, লন্ডন : ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সাজিদ জাভেদ দায়িত্ব নেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই লন্ডনের নিউহ্যাম বারার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন রোখসানা ফাইয়াজ। অন্যদিকে দুই বছর ধরে দেশটির রাজধানী লন্ডন নগরীর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাদিক খান। তিনজনেরেই একটি জায়গায় মিল- তারা সবাই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত।

সাজিদ জাভেদ প্রথম মুসলিম ও প্রথম এশীয় হিসেবে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন। প্রথম পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত বারা মেয়র হলেন রোখসানা। একই সাথে তিনি দেশটির দ্বিতীয় জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে নির্বাচিত মেয়রও। বিরোধী দল ব্রিটিশ লেবার পার্টি থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন তিনি।

গত ৩ মের নির্বাচনে প্রায় ৭৩ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন রোখসানা। প্রাপ্ত মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩ হাজার ২১৪টি। ১৬ বছর ধরে ওই পদে দায়িত্ব পালন করা স্যার রবিন ওয়েলসের স্থলাভিষিক্ত হবেন তিনি। এর আগে ২০১৪ সাল থেকে পূর্ব লণ্ডন কাস্টম হাউজের কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেনে রোখসানা। শহরতলীর ছোট ছোট পৌর এলাকাগুলো বরো হিসেবে পরিচিত। এরকম ৩২টি বারা রয়েছে লন্ডনে।

ব্রিটেনে জন্ম নেয়া রোখসানার পৈত্রিক ভিটা পাকিস্তানের লাহোরে। ১৯৬০ এর দশকে লাহোর থেকে ব্রিটেনে বসবাসের জন্য স্থায়ী হন তার পিতা-মাতা। শুরুতে বেশ সংগ্রাম করতে হয়েছে এই দম্পতিতে। রোখসানার বাবা কারখানায় অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তবে পরিশ্রম আর মেধার কারণে দ্রুত উন্নতি করতে সক্ষম হন তিনি।

ইউনিভার্সিটি অব মিডল্যান্ডস থেকে পড়াশুনা শেষ করা রোখসানা ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত। মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির রাজনীতিতে হাতেখড়ি তার। দ্রুতই মেধা আর যোগ্যতা দিয়ে আজকের এ অবস্থানে এসেছেন।

মাত্র এক সপ্তাহ আগে ব্রিটেনের ইতিহাসের প্রথম মুসলিম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সাজিদ জাভেদ। এই প্রথম কোনও মুসলিম ব্রিটেনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন। সাজিদ জাভেদের বাবাও ১৯৬০ এর দশকে পাকিস্তান থেকে ব্রি‌টে‌নে এসে প্রথমে কাপড়ের কারখানায় শ্রমিক হন। পরে বাসচালকের চাকরি নেন তিনি। একটি ছোট্ট দোকানও চালাতো তার পরিবার।
অবৈধ অভিবাসী বিতাড়ন সম্পর্কিত সরকারি নীতি নিয়ে কেলেঙ্কারির মুখে গত২৯ এপ্রিল পদত্যাগ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রাড। ৩০ এপ্রিল তার জায়গায় সাজিদ জাভেদ নিয়োগ পান।

এর আগেও কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সংস্কৃত-গণমাধ্যম-ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, কমিউনিটি মন্ত্রণালয় ও সমতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন তিনি। ২০১০ সালে প্রথম এমপি নির্বাচিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির এই নেতা।

লন্ডন সিটির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আরেক পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাদিক খান। ২০১৬ সালের মে মাসে প্রথম মুসলিম ও এশীয় হিসেবে লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হন সাদিক খান। সেই থেকে ব্রিটেনের রাজনীতিতে ক্রমশিই প্রভাব বাড়ছে তার। এর আগেও অবশ্য গর্ডন ব্রাউন সরকারের সময় পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

সাদিক খানের বাবা আমানুল্লাহ ও মা ১৯৬৮ সালে লন্ডন যান। সেখানে বাস ড্রাইভার হিসেবে কাজ করেছেন আমানুল্লাহ। ইউনিভার্সিটি অব নর্থ লন্ডন থেকে আইনে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেয়া সাদিক খান। ২০০৪ সালে প্রথম লেবার পার্টি থেকে পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version