এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের দিকে আজ দৃষ্টি থাকবে সবার। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের শুনানি আজ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আপিল মামলাটি নয় নম্বরে রাখা হয়েছে। জামিন শুনানি নিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী, দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ প্রস্তুতি নিয়েছে। কারাবন্দি হিসেবে খালেদা জিয়ার তিন মাস পূর্ণও হবে আজ।
এদিকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে শুনানির দিন আজ রাজপথে সরব থাকবে বিএনপি। কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারণ না করে ঢাকার মতিঝিল, রমনা, পুরান ঢাকা, শাহবাগসহ আদালতের আশপাশের এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতির জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আদালত খালেদা জিয়াকে জামিন দিলে তা বিজয় হিসেবে ধরে নিয়ে ‘বিজয় মিছিল’ করবে বিএনপির নেতাকর্মীরা। জামিন না হলে বিক্ষোভ করার সিদ্ধান্ত দলটির।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ন্যায়বিচার হলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে কোনো কর্মসূচি নেই। তারপরও নেতাকর্মীরা থাকবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, কারাগারে সরকার খালেদা জিয়ার প্রতি অমানবিক আচরণ করছে। তিনি সুবিচার পাননি। এই ধরনের সাজায় তার যে বয়স, সামাজিক মর্যাদা এসব বিবেচনা করে যেদিন হাইকোর্টে আপিল গৃহীত হয়েছিল সেদিনই তার জামিন হওয়ার কথা। তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন করছি। এর অর্থ এই নয় সরকার যা খুশি তাই করবে আর আমরা সব সহ্য করব।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৮ ফেব্র“য়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও অর্থ দণ্ডাদেশ দিয়ে রায় দেন বিচারিক আদালত। এরপর থেকে খালেদা জিয়া নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। রায়ের পর আপিল করে জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া, যার ওপর শুনানি নিয়ে ১২ মার্চ হাইকোর্ট চারটি দিক বিবেচনায় তাকে চার মাসের জামিন দেন। কিন্তু হাইকোর্টের দেয়া জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি বিএনপির : দলীয় সূত্র জানিয়েছে, আজ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঢাকার রাজপথে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। তবে কোনো নির্দিষ্ট স্পট বা জায়গা নির্ধারণ না করে সুবিধামতো নেতাকর্মীদের আদালতের আশপাশের এলাকায় থাকার জন্য বলা হয়েছে।
বিএনপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের এক যুগ্ম সম্পাদক জানান, কেন্দ্রের নির্দেশনা দলীয় নেতাকর্মীদের ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে। তারা আদালতের আশপাশের এলাকায় দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করবেন। এক্ষেত্রে পুলিশ যাতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি টের না পান সেজন্য কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারণ করা হয়নি। মতিঝিল, রমনা, পুরান ঢাকা, শাহবাগসহ আদালতের আশপাশের সুবিধা অনুযায়ী নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির দফতর সম্পাদক এবিএম এ রাজ্জাক বলেন, আজ শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে থাকার জন্য তারা নির্দেশনা পেয়েছেন। এক্ষেত্রে কোনো স্পট বা জায়গা সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হলে বিজয় মিছিল করা হবে। নইলে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ মিছিল করা হবে।
সূত্র জানায়, বিএনপিপন্থী আইনজীবীদেরও আজ সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে। এদিকে সোমবার বিকালে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির কূটনীতিক উইংয়ের এক বৈঠকে খালেদা জিয়ার মামলা ও অসুস্থতার বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের অবহিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, সহআন্তর্জাতিক সম্পাদক ফাহিমা নাসরীন মুন্নী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল প্রমুখ।
বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির কূটনীতিক উইংয়ের এক সদস্য বলেন, খালেদা জিয়ার মামলা ও অসুস্থতার বিষয়ে বিস্তারিত লিখিতভাবে বিদেশি কূটনীতিকদের জানানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেখানে দলের লিখিত বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসকদেরও মতামত থাকবে। এছাড়াও গাজীপুর সিটি নির্বাচন স্থগিতের কারণ, জাতীয় নির্বাচন ও দেশের বর্তমান পরিস্থিতিও বিদেশি কূনীতিকদের কাছে তুলে ধরা হবে। আগামী সপ্তাহে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বেঠক হতে পারে বলেও জানান তিনি।
শুনানির জন্য প্রস্তুত উভয় পক্ষ : জামিন শুনানির প্রস্তুতি ও পরামর্শের জন্য ইতিমধ্যে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাৎ করেন তার আইনজীবীরা। ৫ মে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ পাঁচজন সাক্ষাৎ করেন। খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে অন্যতম আইনজীবী জয়নুল আবেদীন যুগান্তরকে বলেন, জামিনের পক্ষে আমরা খালেদা জিয়ার অসুস্থতাসহ হাইকোর্ট যে গ্রাউন্ডে জামিন দিয়েছেন এ বিষয়টি আপিল বিভাগে তুলে ধরব। এছাড়া মামলার মেরিট নিয়েও শুনানি করব।
তিনি বলেন, নিম্ন আদালত পাঁচ বছরের যে সাজা দিয়েছেন, তুলনামূলকভাবে কম ওই সাজায় জামিনের রেওয়াজ আছে। বিচারিক আদালতে মামলা চলাকালে খালেদা জিয়া জামিনে ছিলেন এবং এর অপব্যবহার করেননি। আদালতে নিয়মিত উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বয়স এবং বয়সজনিত শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় নিয়ে তাকে জামিন দেয়া যায়।
ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, আমরা ন্যায়বিচার চাই। ন্যায়বিচার হলে নিম্ন আদালতে খালেদা জিয়ার ৫ বছর সাজা হতো না। আপিল বিভাগেও জামিন স্থগিত হতো না।
প্রস্তুত দুদকের আইনজীবীও। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান যুগান্তরকে জানান, জামিন স্থগিতে আপিল শুনানির জন্য তারা প্রস্তুত আছেন।
উল্লেখ্য, ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্ট চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। পরে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে তা স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক। ওইদিন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর জামিন আদেশ স্থগিত না করে আবেদন দুটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। ১৯ মার্চ খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে আপিলের অনুমতি দেন আপিল বিভাগ। দুই সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে এবং পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে আসামিপক্ষকে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে এ আপিল শুনানির জন্য ৮ মে দিন ধার্য করে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত বলে আদেশে বলেন আদালত।