এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : চলতি বোরো মৌসুমে বজ্রপাতের তাণ্ডবে একের এক হতাহতের ঘটনায় বিশেষ করে হাওরাঞ্চলের কৃষক, কৃষি শ্রমিক ও মালিকদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। বুধবার দেশের ১৬ জেলায় ঝড়-বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে আরও ২৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এদের মধ্যে ১৯ জনই কৃষক। যাদের বেশির ভাগই ধান কাটা বা ধান নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় বাজের শিকার হন। সরকারি হিসাবে, গত এক মাসে শুধু হবিগঞ্জে বজ্রপাতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ১৪ জনই কৃষি শ্রমিক। বজ্রপাাতের এমন ভয়াবহতায় আতঙ্কিত হয়ে অনেক ধানকাটা শ্রমিক মাঠের কাজ থেকে বিরত হয়েছেন। এতে কর্মী সংকটে ফসল তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষিজমির মালিকরা। যুগান্তর ব্যুরো, রিপোর্ট ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

হবিগঞ্জ, নবীগঞ্জ, মাধবপুর ও বানিয়াচং : হবিগঞ্জে পৃথক স্থানে বজ্রপাতে ৬ জন ধান কাটা শ্রমিক নিহত হয়েছেন। জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুপুরে জেলার বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ কালবৈশাখী শুরু হয়। আধা ঘণ্টা স্থায়ী এ ঝড়ে হাওরে ধান কাটা অবস্থায় ৬ জন শ্রমিক বজ্রপাতে মারা যান। এদের মধ্যে বানিয়াচংয়ের মাকালকান্দি হাওরে নিহত হন স্বপন দাশু (৩৫)। তিনি দাইপুর গ্রামের বসন্ত দাশের ছেলে। একই উপজেলার নূরপুর হাওরে মারা যান জয়নাল উদ্দিন (৬০)। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলার দত্তকান্দি এলাকার বাসিন্দা। এ দুটি স্থানে আহত হন আরও ৬ জন। এ ছাড়া নবীগঞ্জ উপজেলার বৈলাকীপুর গ্রামের হাওরে নারায়ণ পাল (৪০) ও আমড়াখাই হাওরে হাবিব উল্লাহর ছেলে আবু তালিব (২৫) বজ্রপাতে মারা যান। লাখাই উপজেলার তেঘরিয়া হাওরে নিহত হন সফি মিয়া (৫৫) ও মাধবপুর উপজেলার পিয়াইম হাওরে রাম কুমার সরকারের ছেলে জোহর লাল সরকার (১৮)।

রাজশাহী : সকালে তানোরে বজ্রপাতে এক কলেজছাত্রসহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকালে উপজেলার দুবইল ও বাতাসপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আরও দুই কৃষক আহত হয়েছেন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতরা হলেন- বাতাসপুর গ্রামের লোকমান আলীর ছেলে কৃষক আনসার আলী (৪০) ও দুবইল নামোপাড়া গ্রামের মো. শামসুদ্দিনের ছেলে কলেজছাত্র সোহাগ আলী (১৮)। আহত দু’জন হলেন বাতাসপুর গ্রামের অনিল সাহার ছেলে আনন্দ সাহা ও হিরেন সাহার ছেলে লিটন সাহা।

জলঢাকা ও ডিমলা (নীলফামারী) : জলঢাকায় বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- জলঢাকা উপজেলার বালাগ্রাম ইউনিয়নের ঢুকঢুকি শালনগ্রাম গ্রামের মৃত ইসলাম উদ্দিনের স্ত্রী আসমা বেওয়া ও কাঁঠালী ইউনিয়নের উত্তর দেশীবাই গ্রামের মৃত ছফর উদ্দিনের ছেলে কৃষক নূর আমিন। একই সময় ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়শিংহেরশ্বর গ্রামে বজ্রপাতে পাঁচটি গাভীর মৃত্যু হয়।

মানিকগঞ্জ : দৌলতপুরে বজ্রপাতে এক স্কুলছাত্রসহ দু’জন মারা গেছেন। নিহত স্কুলছাত্রের নাম সাইফুল ইসলাম অন্তর (১২)। সে তালুকনগর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে এবং তালুকনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। এ সময় বিদ্যালয়ের আরও ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। নিহত আরেকজনের নাম ইয়াকুব আলী শেখ (৪৮)। তিনি দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা ইউনিয়নের হাসাদিয়া গ্রামের মৃত হাফেজ শেখের ছেলে। তিনি একজন কৃষক।

সিরাজগঞ্জ : কাজিপুরে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় সমতুল্লাহ (৫০) নামে এক কৃষক নিহত ও শাকিল মিয়া (১৫) নামে এক স্কুলছাত্র আহত হয়েছে। বুধবার দুপুরে উপজেলার নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের পানাগাড়ি চর ও খাস রাজবাড়ি চরে এ ঘটনা ঘটে।

কিশোরগঞ্জ, পাকুন্দিয়া ও বাজিতপুর : দুপুরে নিকলী উপজেলার ছাতিরচর হাওর ও পাকুন্দিয়া উপজেলার আশুতিয়া এলাকায় বজ্রপাতে নারীসহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- নিকলী উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়নের পরিষদ পাড়ার মাঈন উদ্দিনের ছেলে শাহজালাল ও পাকুন্দিয়া উপজেলার আশুতিয়া এলাকার সুধীর চন্দ্র বর্মণের স্ত্রী দিপালী রানী বর্মণ।

দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) : বুধবার দুপুরে চর আমখাওয়া ইউনিয়নের সানন্দবাড়ী মৌলভীরচর এলাকার ৪নং পাড়ার কৃষক হাবিবুর যমুনার চরাঞ্চলে বজ্রপাাতে নিহত হয়েছেন। এ সময় ওই এলাকার আরও ৭ জন আহত হয়েছেন।

গাইবান্ধা : ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালী ইউনিয়নের পূর্ব ছালুয়া গ্রামে বুধবার সকালে বজ্রপাতে মহর আলী (৩৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় তিনি বাড়ির পাশে জমিতে ধান কাটছিলেন।

সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) : সোনারগাঁয়ে জামপুরের তিলাবো গ্রামে সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাধুলা করার সময় বজ্রপাাতে কুলফী আক্তার (৮) নামে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। নিহত কুলফী বাছাবো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীর ছাত্রী ছিল।

কচুয়া (চাঁদপুর) : বিকালে কচুয়ার সাচার ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামে বজ্রপাতে জামাল হোসেন (১৪) নামে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। সে ওই গ্রামের আবদুল মতিন মিয়ার ছেলে এবং সাচার উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র।

সুনামগঞ্জ ও ধর্মপাশা : দুপুরে ধর্মপাশা ও শাল্লা উপজেলায় বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- ধর্মপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দুর্বাকান্দা গ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে জুয়েল আহমদ (১৬) ও শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের ইসহাক আলীর ছেলে আলমগীর মিয়া (২২)।

কুমিল্লা ও মুরাদনগর : বুধবার বিকালে মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামে বজ্রপাতে সেলিম ও ইমন নামে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃষ্টির সময় জমি থেকে ধান কেটে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। নিহত সেলিম যাত্রাপুর গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে এবং ইমন একই গ্রামের আবদুল হামিদের ছেলে।

কাপাসিয়া : দুপুরে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ধান কাটার সময় বজ্রপাতে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- কুড়িগ্রাম জেলার কচাঘাটা উপজেলার সভারটেক গ্রামের আহছান আলীর ছেলে মমিনুর রহমান ও দক্ষিণগাঁও টানপাড়ার মৃত আলীম উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে মোতালিব।

ভালুকা (ময়মনসিংহ) : দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বজ্রপাতে ভালুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬ স্কুলছাত্রীসহ ৭ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে চারজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হল- ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী তানজিনা ও অন্তরা ৪র্থ শ্রেণীর স্বর্ণা, নওশীন, শামীমা ও শ্রাবণী। এছাড়া এক গৃহবধূ আহত হয়েছেন।

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) : সরিষাবাড়ীতে বজ্রপাতে গ্যাসে চালিত জেনারেটর বিকল হওয়ায় আলহাজ জুট মিল বন্ধ হয়ে গেছে। বুধবার সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) : শ্রীনগরে বজ্রপাতে মো. কামাল হোসেন (৩২) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বিকালে উপজেলার হাসাড়ার আড়িয়াল বিলে ধান কাটার সময় বজ্রপাাতে তার মৃত্যু হয়। নিহত কৃষকের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার ঘোপিফি গ্রামে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : সন্ধ্যায় বিজয়নগরে বজ্রপাতে সাইফুল ইসলাম (৩৫) নামে পল্লী বিদ্যুতের এক লাইনম্যান মারা গেছেন। এ সময় আজাদ মিয়া নামে আরেক লাইনম্যান গুরুত্বর আহত হন। খাগড়াছড়ি : রাত সাড়ে ৮টার দিকে মানিকছড়িতে বজ্রপাতে এক সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। তার নাম মো.নুরুল আলম। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ব্রিগেডে সেনা সদস্য হিসেবে সদ্য যোগ দিয়েছিলেন। রাতে ২নং বাটনাতলী ইউনিয়নের ডাইনছড়ির নিজ বাড়িতে বজ্রপাতে মারা যান তিনি।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version