এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : রোবটের প্রসার এবং প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। ফলে রোবট হয়তো আর কিছু দিন পরেই মানুষের মতো কাজ করতে ও স্বাধীনভাবে চিন্তাভাবনা করতে সম হবে। যদিও প্রযুক্তির কল্যাণে এটি এখন আর কল্পকাহিনী নয় বাস্তবতা। রোবট সাধারণত একটি ইলেকট্রো-যান্ত্রিক ব্যবস্থা, যার কাজকর্ম, অবয়ব ও চলাফেরা অনেকটাই মানুষের মতোই। প্রযুক্তিনির্ভর বর্তমান বিশ্বে নানা কাজে মানুষের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয় রোবট। রোবটের যত বুদ্ধিমত্তা আর যোগ্যতাই থাকুক না কেন তারা কখনোই মানুষের সমক হতে পারবে না। তবে এবার রোবট মানুষের মতোই নাগরিকত্ব লাভ করেছে। গত বছর সোফিয়া নামক একটি রোবটকে নাগরিকত্ব দিয়েছে সৌদি সরকার। এ অবস্থায় প্রশ্ন এসেছে রোবট কি মানুষের মতো অধিকার দেয়া হবে?
রোবটকে স্বাধীন সত্তা হিসেবে মানুষের মতো অধিকার দেয়া হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত অনেকেই। যদিও ভবিষ্যৎ রোবটগুলোকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে তৈরি করা হবে এবং নিউরাল নেটওয়ার্কের সাহায্যে এরা মানুষের মতোই চিন্তা ভাবনা করার মতা লাভ করবে। অবশ্যই অনেক সায়েন্স ফিকশন টার্ম ব্যস্তবতার রূপ লাভ করবে। আগামী দিনে মাইক্রো এবং ন্যানো স্কেলের রোবটগুলোর আরো উন্নতি সাধন হলে আপনার শরীরের মধ্যে সহজেই ঢুকে চলাফেরা করতে পারবে। এই রোবটগুলো আলাদা রোবটদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে এবং বিভিন্ন কাজ সমাধান করতে পারবে। এদের সবচেয়ে বড় কাজ হবে মানুষের শরীরের রোগ নির্ণয় করা, নির্ভুল সার্জারি করা। শিল্প থেকে গবেষণা বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিক রোবট কাজে লাগানো হচ্ছে। কখনো খেলনা হিসেবে, এমনকি মঞ্চের তারকার রূপেও। দেখতে অত্যন্ত সহজ মনে হলেও তাদের কাজ রোবট ইঞ্জিনিয়ারদের বহু বছরের পরিশ্রমের ফসল। রোবট ইঞ্জিনিয়ার উইল জ্যাকসন বলেন, আমার একটি রোবটে ১২ হাজার যন্ত্রাংশ রয়েছে। আমাদের প্রত্যেকটি তৈরি করতে হয়। একটি বিকল হলে কিছুই চলে না। তাই বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। রোবট যদি কোনো কাজে ভুল করে এবং তাতে জীবনহানি ঘটে তাহলে এ দায়িত্ব কার? এ বিষয়টি নিয়ে আগে চিন্তার কিছু না থাকলেও এখন নতুন করে চিন্তা করতে হচ্ছে। আর রোবটের আইনগতভিত্তির বিষয়টি মানুষের মতো যে নয়, তা বলাইবাহুল্য। কারণ রোবট মানুষ নয়। আবার গবেষকেরা এমনভাবে রোবট বানাচ্ছেন যে, তা অচিরেই মানুষের মতো করে চিন্তাভাবনা করতে পারবে। তাই বিষয়টি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের লিগাল অ্যাফেয়ার্স কমিটি বেশ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করছে।
এ েেত্র রোবটকে ‘ইলেকট্রনিক পারসন’ বা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হবে কি না, তাই হবে আলোচনার বিষয়বস্তু। ভোটাভুটির পর যদি রোবটকে ‘ইলেকট্রনিক পারসন’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়টি জয়লাভ করে তাহলে রোবটসংক্রান্ত আইনগুলো নতুন করে তৈরি করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভবিষ্যতের রোবট কী করতে পারবে, তা নিয়ে খুব একটা সংশয় নেই। তবে সব প্রযুক্তিই সমাজের উপকার করলেও তার পরিণতি নিয়েও ভাবতে হয়। রোবট নিয়ে কেমন ভবিষ্যৎ আমরা চাই, সেটা জানা জরুরি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নীতিনির্ধারকেরা সম্প্রতি উন্নতমানের স্বয়ংক্রিয় রোবটের অধিকার দেয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। তবে এ বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, রোবটকে কোনোক্রমেই অধিকার দেয়া যাবে না। সম্প্রতি রোবটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আইন, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও নীতিশাস্ত্রের ১৫০ জন বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ রোবটের অধিকার নিয়ে তাদের সতর্কতা জানিয়েছেন।
এ জন্য গবেষকেরা একটি খোলা চিঠি লিখেছেন ইউরোপীয়ান কমিশন বরাবর। তারা বলছেন, রোবটের অধিকারের বিষয়টি যতটা না বাস্তবসম্মত তার চেয়ে বেশি কল্পবিজ্ঞানপ্রসূত। সম্প্রতি রোবটের অধিকার দেয়া হবে কি না, তা নিয়ে ভোটাভুটি করার কথা ভাবছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
রোবট এখন কথা বলতে পারে, মানুষের সাথে আলাপ করতে পারে, মানুষের চেহারা নকল করতে পারে। আর কিছু রোবট তো অবিকল মানুষের মতোই দেখতে। সবকিছুর পরে আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, ভয় ও স্বপ্নের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে রোবট যন্ত্র হিসেবে থাকলে প্রতিনিয়তই কমছে মানুষ ও রোবটের ব্যবধান।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version