এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : গত মাসের ২৭ তারিখে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী উত্তর ও দণি কোরিয়ার দুই নেতা করমর্দন করলেন। প্রতীকী অর্থে হলেও তারা যেন বিভাজিত কোরিয়া উপত্যকাকে এক করে ফেলেছিলেন। বেশ কয়েক মাস ধরে বিরাজমান পারমাণবিক সঙ্ঘাতের আশঙ্কার মধ্যে দুই নেতার ওই করমর্দন ছিল শান্তির পথে এক মাইলফলক। কিম জং উন ও মুন জা-ইনের করমর্দনে ছবি মুহূর্তের মধ্যেই বিশ্বের বড় বড় সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে তুলে চলে আসে। পরদিনের সংবাদপত্রের পাতায়ও স্থান পায় করমর্দনের ছবি। সাম্প্রতিক ইতিহাসে এমন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে কমপক্ষে চারটি করমর্দন।
আরাফাত-রবিন, ১৯৯৩ : নরওয়েতে মাসের পর মাস গোপন আলোচনা শেষে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন ও ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত ১৯৯৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউজের দণি লনে একত্র হন। একত্রে তারা প্রত্যক্ষ করেন অসলো চুক্তি স্বার অনুষ্ঠান। এরপর আরাফাত ও রবিন হাত মেলান। তাদের মাঝে দুইজনের বাহু ধরে ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল কিনটন। এটি ছিল ইসরাইল-ফিলিস্তিন সঙ্ঘাতের সবচেয়ে নাটকীয় একটি মুহূর্ত। ওই চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদা আন্দোলনের অবসান ঘটে। পাশাপাশি, স্বায়ত্তশাসন পায় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড। পরের বছর এই শান্তিপ্রক্রিয়ার জন্যই এক ইহুদি চরমপন্থীর হাতে খুন হন রবিন। পরের বছরগুলোতে শান্তিপ্রক্রিয়া থমকে যায়।
ওবামা-ক্যাস্ত্রো, ২০১৩ : ২০১৩ সালে দণি আফ্রিকার কিংবদন্তিতুল্য নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা স্মরণে এক শোকসভায় হাত মেলান দুই বৈরী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার দুই নেতা বারাক ওবামা ও রাউল ক্যাস্ত্রো। কয়েক দশকের শত্রুতা শেষে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের মোলাকাত ছিল সেবারই প্রথম। এ থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা পায়। ২০১৫ সালে দুই দেশের মধ্যে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। পরের বছর ওবামা কিউবা সফর করেন। সেটি ছিল ৮৮ বছরে প্রথম কোনো মার্কিন নেতার কিউবা সফর। কিউবার ওপর দশকব্যাপী কার্যকর কিছু নিষেধাজ্ঞাও শিথিল করে আমেরিকা।
রানী এলিজাবেথ-ম্যাকগিনেস, ২০১২ : উত্তর আয়ারল্যান্ড শান্তিপ্রক্রিয়ায় মাইলফলক রচনা করে ২০১২ সালে করমর্দন করেন ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি (আইআরএ) নামে আইরিশ জাতীয়তাবাদী বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার মার্টিন ম্যাকগিনেস। আইআরএ চেয়েছিল উত্তর আয়ারল্যান্ডে ব্রিটিশ শাসনের অবসান এবং মূল আয়ারল্যান্ডে একীভূত করা। পরে ম্যাকগিনেস আয়ারল্যান্ডের পে শীর্ষ শান্তি আলোচকে পরিণত হন।
শি-মা, ২০১৫ : ১৯৪৯ সালে রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধের পর ভাগাভাগি হওয়ার পর ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো চীন ও তাইওয়ানের নেতারা সাাৎ করেন সিঙ্গাপুরে। এটি ছিল নজিরবিহীন এক ঘটনা। এক মিনিটেরও বেশি সময় ধরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট মা ইং-জেও করমর্দন করেন। আলোচনা শুরুর আগমুহূর্তে তারা হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন। ওই বৈঠকের পর বেইজিং ও তাইপের মধ্যে হটলাইন স্থাপন এবং স্বশাসিত তাইওয়ান ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা হ্রাসের বিষয়ে উভয় প সম্মত হয়। ওই বৈঠক ঐতিহাসিক হলেও, দু’পরে কেউই কাউকে বড় কোনো ছাড় দেয়নি। ওই বৈঠকের প্রায়শ্চিত্ত বেশ তিক্তভাবেই করতে হয়েছে মা’কে। তিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনে বেইজিং-বিরোধী বলে পরিচিত সাই ইং-ওয়েনের কাছে পরাজিত হন। সূত্র : এএফপি

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version