এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : মালয়েশিয়ায় দীর্ঘ ৬০ বছর মতায় ছিল বারিসান ন্যাশনাল জোট। এ নির্বাচনে মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন পাকাতান হারপান জোট হারিয়ে দিয়েছে তাদের। দীর্ঘ এই শাসনের অবসানে মাহাথিরের ব্যক্তিগত ইমেজ যেমন ভূমিকা রেখেছে, তেমনি তার জোটের নির্বাচনী ইশতেহারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। বিশেষ করে মতায় এলে এক শ’ দিনের মধ্যেই বেশ কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছিলেন মাহাথির, যেগুলো প্রথম দফায় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে ৯২ বয়সী মাহাথির ও তার নতুন সরকারকে।
মাহাথিরের নির্বাচনী জোটের প্রতিশ্র“ত কর্মসূচির মধ্যে ছিল প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহীদের একই পদে দু’বারের অধিক নির্বাচন বন্ধ করা; প্রধানমন্ত্রীর অফিসের বাজেট অর্ধেক কমানো; নির্বাচন কমিশনকে পার্লামেন্টের অধীনে আনা; গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিটিএস) সংস্কার; বিরোধী দলের নেতার সাংবিধানিক মর্যাদা বাড়ানো; আগামী তিন বছর উন্নয়ন বাজেটের অর্ধেক দরিদ্র ৫ অঞ্চলে ব্যয় করা; বিদেশীদের বরাদ্দ দেয়া বড় বড় প্রকল্পগুলো সম্পর্কে অনুসন্ধান শুরু করা; দুর্নীতির তথ্যদাতাদের জন্য আইনি সুরা বাড়ানো প্রভৃতি।
এ ছাড়া তথ্য স্বাধীনতা আইন কার্যকর করা; আগামী এক দশকের মধ্যে মালয়েশিয়াকে শীর্ষ দশ ‘কম দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশে অন্তর্ভুক্ত করা; ৩৫ বছরের কম বয়সীদের জন্য বিয়ে ভাতা চালু; ১০ লাখ নতুন হাউজিং প্রকল্প বাস্তবায়ন; মহাসড়কে টোলব্যবস্থা বাতিল করা; ন্যূনতম মজুরি ৫০ শতাংশ বাড়ানো; স্বল্প ব্যবহারকারীদের জন্য পেট্রলে ভর্তুকি; তেল উত্তোলনকারী রাজ্যগুলোর পেট্রোলিয়াম রয়্যালটি ২০ শতাংশে উন্নীত করা, রিঙ্গিতের মুদ্রা মান তিন বছরের মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা, ৯০ দিনের মাতৃত্বকালীন ছুটি, বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ করা, দরিদ্রদের জন্য চিকিৎসায় ভর্তুকির মতো কর্মসূচিও ছিল পাকাতন হারতানের নির্বাচনী ইশতেহারে। এসব কর্মসূচির মধ্যে প্রথম এক শ’ দিনের মধ্যেই গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস (জিটিএস) ট্যাক্স তুলে দেয়া এবং পেট্রলের দাম স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় পদপে নেয়ার প্রতিশ্র“তি রয়েছে পাকাতান হারপান জোটের। এ ছাড়া, নাজিব রাজাকের ১ এমডিবি দুর্নীতি কেলেঙ্কারি তদন্তের জন্য রয়্যাল কমিশন অব ইনকোয়ারি গঠনের ঘোষণাও রয়েছে। মতায় এলে শুরু থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণাও রয়েছে পাকাতান হারপান জোটের। মালয়েশিয়ার ওপর থাকা ঋণের বোঝা কমানোর উদ্যোগও তার জোট শুরু থেকেই নিতে চেয়েছে। তবে জিটিএস ট্যাক্স তুলে দিলে রাজস্ব আয়ে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ফলে দেশটির অর্থনীতিতে গতিশীল রাখতেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে মাহাথিরকে। সিঙ্গাপুরে ইনস্টিটিউশন ফর সাউথ এশিয়া স্টাডিজের মালয়েশিয়ান প্রোগ্রামের সমন্বয়ক ফ্রান্সিস হাচিনসন বলেন, ‘জিটিএস ট্যাক্স নিয়ে নির্বাচনি ইশতেহারে সরকার জনপ্রিয়তা পেলেও এটা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। এতে মালয়েশিয়ার রিস্ক রেটিং বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।’
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার জাতীয় নির্বাচনে ২২২টি আসনের মধ্যে ১২১টি আসন পেয়েছে পাকাতন হারপান জোট। মতাসীন বারিসান ন্যাশনাল পেয়েছে ৭৯টি আসন। সরকার গঠনের জন্য ১১২টি আসন প্রয়োজন ছিল পাকাতন হারপানের। ডিএপি, পিকেআর, পার্টি আমানাহ নেগারা ও পার্টি প্রিভুমি বারসাতু মালয়েশিয়া দলগুলো নিয়ে গঠিত হয়েছে এই জোট।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version