এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : সংসদ নির্বাচনের আগে দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে কঠিন পরীক্ষায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর কুমিল্লা ও রংপুর সিটি নির্বাচন ভালো হলেও অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে সিল মারার ঘটনাও ঘটেছে। তাই আসন্ন দুই সিটি নির্বাচনের প্রভাব যেন আগামী সংসদ নির্বাচনে না পড়ে এজন্য সতর্ক রয়েছে কমিশন। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে সিটি নির্বাচনে বিএনপি দাবি জানিয়ে এলেও সেনা ছাড়া চার দিনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োগের পরিকল্পনা সাজিয়েছে ইসি। বিজিবি-র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিবাচনী দায়িত্বে থাকছেন। খুলনা সিটি নির্বাচন ঘিরে কাল মাঠে নামছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে থাকবে সিসি ক্যামেরা। সেই সঙ্গে সিটি নির্বাচন নিয়ে বেশকিছু বিষয়ে বিশেষভাবে নজর রাখার জন্য বলা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। এর মধ্যে কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ যেন না হয়, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব প্রতিরোধ, হিযবুত তাহ্রীর ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের তৎপরতার বিষয়ে সজাগ থাকা, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বিশেষ নজরদারি, ভোটের আগের রাতে সতর্ক থাকা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকা, ভোটের আগের রাতে অবৈধ অর্থ লেনদেনে গোয়েন্দাদের সতর্ক থাকতে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশন বলছে, এত ফোর্স থাকার পরও যদি ব্যালট ছিনতাই বা ভোট গ্রহণে অনিয়ম হয়, কমিশন সে ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ ভোট গ্রহণের সঙ্গে যুক্ত কোনো কর্মকর্তা যদি অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন তবে তত্ক্ষণাৎ তাকে অপসারণ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। কাল গাজীপুর সিটির নতুন তারিখ নির্ধারণে বৈঠকে বসছে কমিশন। তবে ১৫ মে অনুষ্ঠেয় খুলনা সিটি নির্বাচন নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছে। কেননা খুলনা সিটি নির্বাচন সামনে রেখে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া নির্বাচন কর্মকর্তারা পক্ষপাতিত্ব করছেন। পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে তারা খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘অনাস্থা’ জানিয়েছেন। এদিকে বিএনপি খুলনার পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলছে। তারা বলছেন, নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার-ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এজেন্টদের বাড়িঘরে হামলা, ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পুলিশের ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত কর্মীরা। এজন্য খুলনার পুলিশ কমিশনারসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যাহার দাবি করে আসছেন তারা। এ ছাড়া খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পক্ষপাতের অভিযোগ তোলার পর সেখানে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

খুলনা সিটি ভোট সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনাররা মাঠে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং স্থানীয় পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। সেই সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনারদের প্রধান করে দুই সিটিতে দুটি সমন্বয় কমিটিও করা হয়েছে। ইসির নির্দেশনা হচ্ছে, সিটি নির্বাচনের অনিয়ম যেন সংসদ নির্বাচনে প্রভাব না ফেলে। এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে বিশেষ নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনের আগে-পরে চার দিন মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী : সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় প্রতি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২২ থেকে ২৪ জন সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। খুলনায় পুলিশ-এপিবিএন-আনসার ব্যাটালিয়ন নিয়ে মোবাইল ফোর্স থাকবে প্রতি ওয়ার্ডে একটি তথা ৩১টি। স্ট্রাইকিং ফোর্স প্রতি তিন সাধারণ ওয়ার্ডে একটি তথা ১০টি। র‌্যাব ৩১টি টিম; বিজিবি থাকবে ১৬ প্লাটুন। নির্বাহী হাকিম থাকবেন সব মিলিয়ে খুলনায় ৪৭ জন। বিচারিক হাকিম ১০ জন।

খুলনার দুই কেন্দ্রে ইভিএম আঙ্গুলের ছাপে ভোটার যাচাই : খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুটি ভোটকেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার হচ্ছে। ১০টি ভোটকক্ষের প্রতিটিতে একটি করে ইভিএম থাকবে। তাতে মেয়র পদে প্রার্থীদের নাম ও প্রতীক এবং সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থীদের প্রতীকে বোতাম চেপে ভোট দেবেন ভোটাররা। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।

নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় শাখার এ কর্মকর্তা জানান, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ২০৬ নম্বর কেন্দ্র ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ২৩৯ নম্বর কেন্দ্রে ১০টি ইভিএম থাকবে।

শেরেবাংলা রোডের সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ১০৯৯ জন ভোটারের জন্য ৪টি ভোটকক্ষে ও খানজাহান আলী রোডের পিটিআই জসিম উদ্দীন হোস্টেলের নিচতলার কেন্দ্রে ১৮৭২ ভোটারের জন্য ৬টি ভোটকক্ষ রয়েছে। কর্মকর্তারা বলেন, গেল ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সফলতার পর ইসির নতুন ইভিএম খুলনার দুটি কেন্দ্রে ব্যবহার হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম-প্রশিক্ষণ (ভোটার এডুকেশন) শুরু হয়েছে। ১৫ মে খুলনা সিটিতে ভোট হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে সিটির ২৮৯টি কেন্দ্রে। ভোটের আগের দিন সোমবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত দুই কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টরা ইভিএমে ভোটের মহড়ায় (মক ভোটিং) অংশ নিতে পারবেন। এতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, এজেন্ট, পোলিং এজেন্টসহ সংশ্লিষ্টরাও থাকবেন।

ইভিএমে ভোট, সুযোগ দুইবার : আঙ্গুলের ছাপ, ভোটার নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা স্মার্ট পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভোটার শনাক্ত করা হয়। নির্দিষ্ট কেন্দ্রের ভোটকক্ষে একজন করে ভোটার ভেরিফিকেশন করেন পোলিং অফিসার। ইসির কর্মকর্তারা বলেন, ডেটাবেজে ভোটার বৈধ হিসেবে শনাক্ত হলেই ভেরিফিকেশনের সঙ্গে যুক্ত প্রজেক্টের মাধ্যমে তা পোলিং এজেন্টের কাছে দৃশ্যমান হবে। মেশিনটিতে কুইক রেসপন্স কোড কিউ কোডসহ আরও কিছু তথ্য সংবলিত টোকেন মুদ্রণ করে ভোটারকে দেওয়া হয়। ভোটার টোকেন নিয়ে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে এলে ভোটিং মেশিনের কিউ কোড স্ক্যানারের মাধ্যমে শনাক্ত করে গোপন কক্ষে থাকা তিনটি পদের জন্য ব্যালট ইউনিটে ব্যালট ইস্যু করা হবে। ভোটার পছন্দের প্রার্থী ও প্রতীক দেখে বাম দিকের বোতামে চাপ দিয়ে সিলেক্ট করবেন এবং ওই ব্যালট ইউনিটের সবুজ রঙের কনফার্ম বোতাম চেপে তার ভোট শেষ করবেন। কখনো ভুলবশত কোনো প্রতীক সিলেক্ট করা হলে, ব্যালট ইউনিটের লাল রঙের ক্যানসেল বোতাম চেপে পরে যে কোনো প্রার্থীকে আবার সিলেক্ট করা যাবে। এভাবে দুইবার ক্যানসেল করা যাবে, তৃতীয়বার যেটি সিলেক্ট করা হবে সেটি বৈধ ভোট হিসেবে গৃহীত হবে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version