এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করেছেন ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলি প্রতিনিধিরা। সোমবার ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে প্রায় ৫৮ জন নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি প্রতিবাদকারী নিহত হন। তাদের জানাজা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের দূত একে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। অপরদিকে ইসরাইল গাজার শাসক হামাসের বিরুদ্ধে নিজ জনগণকে জিম্মি করার অভিযোগ তুলেছে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
খবরে বলা হয়, ইসরাইলের বিরুদ্ধে ছয় সপ্তাহব্যাপী চলা বিক্ষোভ তুঙ্গে ওঠে এই সপ্তাহে। সোমবার ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী। একই দিন যুক্তরাষ্ট্র তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে নিজ দূতাবাস স্থানান্তর করে। এ নিয়ে চলমান বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক শুরু হয় গাজায় সোমবার নিহত হওয়া মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালনের মাধ্যমে। পরিষদের প্রেসিডেন্ট পোল্যান্ডের প্রতিনিধি জোয়ানা রোনেকা এই নিরবতা পালনের আহ্বান জানান। বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি চলমান সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কেউ কেউ তদন্তের দাবি জানান। এরপরই ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলি দুই দূত তীব্র বাকযুদ্ধে লিপ্ত হন। ফিলিস্তিনের দূত রিয়াদ মনসুর বলেন, ‘গাজায় ইসরাইল যেই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, তার সর্বোচ্চ জোরালো ভাষায় নিন্দা জানাই।’ তিনি ইসরাইলের সামরিক অভিযান স্থগিতের আহ্বান জানান। পাশাপাশি, প্রতিরোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরাইলের নিষ্ঠুর হামলার স্বচ্ছ আন্তর্জাতিক তদন্তের ডাক দেন। তিনি এই হামলাকে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে অভিহিত করেন। পূর্বে তদন্ত পরিচালনা না করার জন্য জাতিসংঘের সমালোচনাও করেন তিনি। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘আর কত ফিলিস্তিনি মারা গেলে আপনারা পদক্ষেপ নেবেন? মৃত্যুই কি তাদের প্রাপ্য ছিল? পিতামাতার কোল থেকে শিশুদের কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এটা কি তাদের প্রাপ্য ছিল?’
তার বক্তব্যের পর ইসরাইলের দূত ড্যানি ড্যানন দাবি করেন, চলমান ঘটনাসমূহ কোনো বিক্ষোভ নয়, প্রতিবাদ নয়, এসব ছিল সহিংস দাঙ্গা। তিনি আরও বলেন, গাজার জনগণকে জিম্মি করেছে হামাস। তার ভাষ্য, ‘হামাস মানুষকে সহিংসতায় প্রলুব্ধ করে। গুলিবর্ষণের পথে যত বেশি সম্ভব নিরাপরাধ মানুষকে রাখে যাতে তাদের হতাহতের সংখ্যা বেশি হয়। তারপর তারা ইসরাইলকে দায়ী করে এবং জাতিসংঘে এসে অভিযোগ করে। নির্দোষ শিশুদের জীবনের বিনিময়ে তারা এই প্রাণঘাতী খেলা খেলছে।’ পরে তিনি আরও বলেন, ‘তারা যখন প্রতিবাদের দিন ডাকে, তারা বোঝায়, এটা সন্ত্রাসবাদের দিন। মূলগৃহ ফেরত যাওয়ার অধিকার মানে হলো ইসরাইলের ধ্বংস। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মানে হলো উস্কানি ও সহিংসতা।’
অন্যান্য দেশের মধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালে ইসরাইলের বলপ্রয়োগের মাত্রাকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, ‘কোনো দেশই এই পরিস্থিতিতে ইসরাইলের চেয়ে বেশি সংযম দেখাতে পারবে না।’ তিনি আরও বলেন, প্রাণহানির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র দুঃখিত। তবে এর দায় হামাসের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে ভুল করা চলবে না যে, গতকালের ফল থেকে হামাসই খুশি।’ যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড ও বেলজিয়াম স্বাধীন তদন্তের ডাক দিয়েছে। বৃটিশ দূত ক্যারেন পিয়ার্স বলেন, ‘গাজায় যেই পরিমাণ তাজা বুলেট ব্যবহার করা হয়েছে, এবং এরপর যত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, তা পীড়াদায়ক। নিরাপত্তা পরিষদ এটি অগ্রাহ্য করতে পারে না।’ গাজার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ইসরাইলের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানিয়েছে আয়ারল্যান্ড। তুরস্ক ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে। তবে ইসরাইল পালটা তুরস্কের কাউন্সেলকে বহিষ্কার করেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুকে এক ফোনালাপে বলেছেন, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার অধিকার বেসামরিক নাগরিকদের রয়েছে। কুয়েত একটি খসড়া নথি তৈরি করছে। দেশটি বলছে, বেসামরিক মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক সুরক্ষা প্রদান করাই হবে এই নথির উদ্দেশ্য।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version