ওয়াহিদুজ্জামান, ফ্রান্স থেকে : ড. পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। একটি নাম। প্রেরণার উৎস। উদ্যম। নির্ভর। উদ্দীপ্তি। যিনি ৭ বছর বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হন। অচল হয়ে যায় দু’ পা। এরপর প্রবল ইচ্ছা শক্তি , মানসিক দৃঢ়তা ও অবিরাম প্রচেষ্টায় নিজেকে নিয়ে এসেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। আজ তিনি এক পথিকৃৎ। ড. পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ইতোমধ্যে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ” নাইট” উপাধি এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক “মৈত্রী সম্মাননা” লাভ করেন। ফ্রান্স প্রবাসী নির্মাতা প্রকাশ চন্দ্র রায় ‘ইলুসো দু’উন প্রমনাদ’ (ILLUSION D’UNE PROMENADE ) নামে একটি তথ্য চিত্রের মাধ্যমে তার জীবনের চুম্বকাংশ তুলে ধরেন। গত শনিবার সন্ধ্যায় প্যারিসের সেন্টার মানদাপা হলে ড. পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তা প্রদর্শিত হয়। প্রায় ঘন্টাব্যাপী তথ্যচিত্রটি আগতদের বিমোহিত করে। বাংলাদেশ, কলকাতা ছাড়াও অন্যান্য দেশের উল্লেখযোগ্য দর্শকের উপস্থিতিতে বাঙ্গালিদের ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। তথ্যচিত্রে প্রকাশ রায় ফুটিয়ে তুলেছেন বর্তমান সময় পর্যন্ত ড. মুখোপাধ্যায়ের জীবনের নানাদিক । বিশেষ করে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তাঁর উদ্যমী ও দৃঢ় মনোভাবের সাহসী দিকগুলো। ড. পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় কলকাতায় জন্মগ্রহণ করলেও ১০ বছর বয়সে পণ্ডীচারি চলে যান । সেখানে ২০ বছর বসবাস করেন। বুকের মধ্যে বাংলাকে প্রবলভাবে ধারণ করে চর্চা অব্যাহত রাখেন। বিদেশি ভাষার ব্যবহার বাংলার মাধুর্যতাকে যেন নষ্ট না করে সেদিকে নজর রাখেন। বাংলার প্রতি তাঁর এই ভালবাসা আরো প্রগাঢ় হল পণ্ডীচারি গিয়ে । ড. পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ১৯৬৬ সালে ভারত থেকে ফ্রান্স আসেন । ফ্রান্সে পড়াশুনাসহ নানা বিষয়ে গবেষণা কাজে নিজেকে মগ্ন রাখেন । বাংলা ভাষার মতো ফরাসি ও ইংরেজিতে তাঁর দক্ষতা মৌলিক রচনার পাশাপাশি একজন বিদেশি গ্রন্থের অনুবাদক হিসাবে খ্যাতি এনে দিয়েছে। তিনি প্রায় ৬০টি প্রসিদ্ধ গ্রন্থের অনুবাদ করেছেন । তাছাড়া কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একশ’ ৮টি কবিতা ফরাসি ও ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করে একই গ্রন্থে তা প্রকাশ করেন । বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ফরাসি জনপ্রিয় “ল্য মণ্ড” পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কবিতা লিখেন। মুক্তিযুদ্ধের উৎসাহ ব্যঞ্জক রচিত বাংলা কবিতার অনুবাদ করে ফরাসি বিভিন্ন পত্রিকার সাহিত্য পাতা ও সংকলনে প্রকাশ করেন। ড. পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় প্রদর্শনী শেষে বলেন- বাংলা আমার মায়ের ভাষা। বাবার ভাষা। প্রাণের ভাষা। এ ভাষা আমার প্রেরণার উৎস। তিনি বাংলা ভাষা সংস্কৃতি প্রচার, প্রসার ও মানুষের জন্য শেষদিন পর্যন্ত কাজ করে যেতে চান । নির্মাতা প্রকাশ রায় তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি যে কাজগুলো করে যাচ্ছেন তা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও দেশের দায়বদ্ধতা থেকে । উল্লেখ্য,ইতোমধ্যে নির্মাতা প্রকাশ চন্দ্র রায় নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক তথ্যচিত্র “একটি পতাকার জন্ম”এবং অভিবাসীদের নিয়ে নির্মিত “অনিশ্চিত যাত্রা » দেশ বিদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও সমাদৃত হয় ।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version