এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : দুর্নীতিতে জর্জরিত ব্যাংকিং খাত চরম ঝুঁকিতে আছে। এ খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)।
এছাড়া গ্যাস-বিদ্যুতের স্বল্পতা ও দুর্বল অবকাঠামো অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান বাধা। যার কারণে শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। নতুন বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে বলেও ধারণা ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনটির।
দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে এমসিসিআই ত্রৈমাসিক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। বৃহস্পতিবার চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে এমসিসিআই। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্যাস-বিদ্যুতের স্বল্পতা ও অবকাঠামো দুর্বলতার পাশাপাশি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে ধীরগতি (চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে মাত্র ৪৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে), ভর্তুকির ক্রমবর্ধমান চাহিদা বৃদ্ধি, বৈদেশিক সাহায্যের অনিশ্চিত প্রাপ্যতা ও আয় বৈষম্য বেড়ে যাওয়ায় অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি করছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে ব্যাংকিং খাত। বর্তমানে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংকিং খাত সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। এ খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো উন্নতি করছে, কিন্তু তা প্রকৃত সম্ভাবনার চেয়ে কম। তবে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো ও বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসের অভাব নতুন বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানির স্বল্পতা অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। যদিও উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা হয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আয় বৈষম্য ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এ জন্য সরকারকে দরিদ্রদের জন্য আরও বেশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে বিদ্যমান ব্যাংকিং ব্যবস্থার সংস্কারও করতে হবে, যা বৈষম্য তৈরির জন্য বেশির ভাগ দায়ী।
এমসিসিআই মনে করে, ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হতে গেলে বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এজন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
পর্যালোচনা প্রতিবেদনে কৃষি, শিল্প উৎপাদন, নির্মাণ, বিদ্যুৎ, সেবা খাত, অর্থ ও পুঁজিবাজার, আমদানি-রফতানি, প্রবাসী আয়, বৈদেশিক সহায়তা, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ, বাণিজ্য ঘাটতি, মুদ্রা বিনিময় হার, মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতির প্রধান প্রধান সূচকের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়।
মুদ্রাবাজার সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগছে। চলতি বছরের ফেব্র“য়ারি নাগাদ ব্যাংকগুলোতে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা তারল্য ছিল, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংক ঋণের সুদ চলতি বছরের প্রথম দুই মাস কম থাকলেও এরপর থেকে বাড়তে থাকে। বর্তমানে আমানতের গড় সুদ হার ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ, যেটি জানুয়ারিতে ছিল ৫ দশমিক ০১ শতাংশ। একইভাবে ঋণের সুদ হারও বেড়েছে। বর্তমানে ঋণের গড় সুদ হার ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা জানুয়ারিতে ছিল ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। যদিও অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে শিল্প ঋণ ছাড়ের পরিমাণ ও ঋণ আদায় বেড়েছে।
অন্যদিকে প্রথম ৯ মাসে রফতানি আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। একই সঙ্গে বেড়েছে আমদানি ব্যয়ও। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছের ৮ মাসে ২৬ দশমিক ২১ আমদানি ব্যয় বেড়েছে। জ্বালানি তেল, খাদ্যসামগ্রী বিশেষ করে চাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি চাহিদা বৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। অন্যদিকে বেড়েছে প্রবাসী আয়। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়েছে প্রবাসী আয়। বছর ভিত্তিতে ৮ মাসে বিদেশি সহায়তা ছাড় বেড়েছে ৭৫ শতাংশ, যদিও বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি কমেছে ৪৬ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে মাত্র ১০ মিলিয়ন ডলার।
প্রতিবেদনে শেষ প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন) অর্থনীতির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী দিনে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানের মতো শান্ত থাকার সম্ভাবনা আছে। ফলে রফতানি, আমদানি, প্রবাসী আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে। তবে আসন্ন রমজানের কারণে এপ্রিল-মে তে মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।