শেখ হাসানুল বান্না : আমার সতের বছরের ছাত্ররাজনীতির অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। এর মধ্যে কিছু আছে রুঢ় বাস্তবতা। আমি জানি এই লেখার কারনে আমার উপর অনেক ধরনের খড়গ নেমে আসতে পারে। অনেকের চক্ষুশূল হতে পারি,আবার অনেকের চোঁখের ফুলও হতে পারি।তবে চক্ষুশূল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। আমি মনে করি,আমার নিজের বিবেকের জানালা এখনো সব বন্ধ হয়ে যায়নি,বা আমি আমার নিজের বিবেককে এখনো পুরোপুরি কারো কাছে দলিল করে দেইনি। ছাত্রদলে আপনি যদি শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই নিম্নোক্ত কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে:

১) আপনাকে খালেদা জিয়া অথবা তারেক ভাইয়ের বা দলের লোক হওয়ার চাইতে অবশ্যই বিশেষ ভাইয়ের লোক হতে হবে। আপনি যদি বিশেষ ভাইয়ের লোক হতে পারেন,তাহলে আপনি অনেক খানি এগিয়ে গেলেন। কোন সমস্যা নেই,আপনি যদি বিড়ালও হয়ে থাকেন ভাই আপনাকে বাঘ হিসেবে উপস্থাপন করবে।
২) আপনি মেধাবী না হলেও,আর যে সাবজেক্টেই পড়ুন না কেন,আপনাকে ভাই বিশেষ মেধাবী বানিয়ে ফেলবেন। আপনি খেলোয়াড় কোটা হলেও আপনাকে বিদ্যাসাগর টাইপের মেধাবী হিসেবে চিত্রায়ন করা হবে।
৩)আপনাকে অবশ্যই নির্দিষ্ট কিছু এলাকা থেকে আসতে হবে। নিদেন পক্ষে জেলা থেকে না হলেও বিভাগ থেকে আসতে হবে।
৪)আপনি রাজনীতি করতে গিয়ে কারো ব্যক্তিত্ব, যোগ্যতা বা অন্য কোন গুনের কারনে কাউকে আপনার ভাল লাগতেই পারে।কিন্তু কিছুদিন পরে আপনার ব্রেনকে এমনভাবে ওয়াশ করা হবে যে,আপনি কোনভাবেই আর এলাকার বাইরে রাজনীতি করতে পারবেন না।আপনি না চাইলেও আপনাকে এলাকা সমিতিভুক্ত হতেই হবে।যদিও আপনি কেন্দ্রীয় রাজনীতি করতে এসেছেন।
৫)আপনি যদি নেতার এলাকার না হয়ে থাকেন,কোনভাবেই আপনার যোগ্যতা থাকলেও সুপার ফাইভ বা গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হবেনা। আপনার ভাগ্য তখনই খুলতে পারে,যখন নেতার এলাকার কেউ আপনার ইউনিটে থাকবেনা।অন্যথায়,আপনাকে সান্ত্বনা পুরষ্কার নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
৬)কারনে অকারনে নিজের পড়াশুনা ও অন্যান্য কাজ বাদ দিয়ে আপনাকে ভাইয়ের পিছনে লেগে থাকতে হবে।চোঁখের আড়াল হয়ে গেলেই ভাইয়ের মনের আড়াল হয়ে যাবেন।
৭)বিভিন্ন সময়ে নিজের জাত চেনানোর জন্য অন্যের নামে সমালোচনা তত্ত্ব হাজির করে নিজেকে পলিটিক্যাল বলে প্রমাণ করতে হবে।

এছাড়াও আরো কিছু চাটুকারিতা আপনাকে শিখতে হবে। যদিও একই এলাকার ভাই হলে আপনি যদি অন্য গ্রুপও করে থাকেন,তাহলে ভাই আপনাকে নিজগুনে ক্ষমা করে দিয়ে সব দায়িত্ব আপনাকে দিয়ে দেবে।সেক্ষেত্রে ভাই নিজেই বড় ধরনের বেহায়া হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।আপনার ঘাম,শ্রম,ত্যাগে নেতা হয়ে নির্লজ্জ এলাকা ইজম শুরু করবে।আপনাকে মন ভোলানো কিছু অপ্ত বাণী শুনাবে। অবশ্য বেঈমানরা সাময়িক ভাল থাকবে।কিন্তু,ভূলে গেলে চলবেনা বাপেরও বাপ থাকে আবার দাদারও দাদা থাকে।
বিজ্ঞানী নিউটন দশ বছর গবেষণা করে তৃতীয় সূত্রের আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু আমার গবেষণা সতের বছরের। হয়তবা ভুল হতে পারে। কিন্তু সম্ভাবনা খুবই কম।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version